ভোট এসে গেল, অথচ উত্তরপ্রদেশে এখনও দল সামলাতেই নাজেহাল বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী।
ভোটের ঠিক মুখে দলের মধ্যে কোন্দল তীব্র হয়ে উঠেছে। বাবুসিংহ কুশওয়াহার সদস্যপদ স্থগিত রেখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টার পরেও একটার পর একটা সঙ্কট পিছু ছাড়ছে না গডকড়ীর। স্বয়ং গডকড়ী বুন্দেলখণ্ড থেকে উমা ভারতীকে প্রার্থী ঘোষণা করে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ায় বেজায় চটেছেন উত্তরপ্রদেশের ব্রাহ্মণ নেতা কলরাজ মিশ্র। ক্ষুব্ধ কলরাজ এখন রাহুল গাঁধীর সুরেই প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেছেন, উমা ভিনরাজ্য থেকে এসেছেন। ফলে কোনও ভাবেই তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রার্থী নন। রাজনাথ সিংহ নিজে উত্তরপ্রদেশের ‘মুখ’ হতে চাননি। কিন্তু তাঁর ছেলে পঙ্কজকে টিকিট দেননি গডকড়ী। পরিবর্তে তাঁকে রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক করেছেন, আবার তার প্রতিবাদে তিন সচিব পদত্যাগ করে বসে আছেন। রাজ্যের অন্য ওবিসি নেতা বিনয় কাটিয়ারও প্রচার বন্ধ করে বসে গিয়েছেন।
সঙ্কটের এখানেই ইতি নয়। উত্তরপ্রদেশে যে রণকৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন গডকড়ী, তাতে অসন্তুষ্ট হয়ে অনেক কেন্দ্রীয় নেতাই আর প্রচার করতে আগ্রহী নন। সামনের সপ্তাহের মধ্যেই উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব, মণিপুরে ভোট। কিন্তু ‘অসুস্থ’ সুষমা এখনও ভোট প্রচারে বেরোননি। ‘অসুস্থ’ রাজনাথও মাঝেমধ্যে অব্যাহতি চাইছেন। কুশওয়াহা পর্বের পরে লালকৃষ্ণ আডবাণীও ভোট প্রচারে তাঁর অনীহার কথা জানিয়েছিলেন। সঞ্জয় জোশীকে যে ভাবে দলে এনে উত্তরপ্রদেশে অলিখিত দায়িত্ব দিয়েছেন গডকড়ী, তাতেও তিনি ক্ষুব্ধ। তার উপরে আলাদা ভোটে লড়লেও জেডি(ইউ) ও বিজেপি উভয়েই উত্তরপ্রদেশে ‘বিহার মডেল’কে তুলে ধরে নির্বাচনে প্রচার করছে। কিন্তু যে নীতীশ কুমার নিজের রাজ্যে প্রচারে নরেন্দ্র মোদীকে ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে দেননি, তিনি এখন আপত্তি তুলছেন মোদী যেন কোনও ভাবে উত্তরপ্রদেশে গিয়ে ‘বিহার মডেল’-এর কথা না বলেন।
এই পরিস্থিতিতে গডকড়ীর কাছে উত্তরপ্রদেশের ভোট একটি বড়সড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গডকড়ী-ঘনিষ্ঠ এক নেতার মতে, পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড আর মণিপুরের নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরেই বিজেপি সভাপতি কোমর বেঁধে নেমে পড়বেন উত্তরপ্রদেশের জন্য। উত্তরপ্রদেশের ভোট এখন তাঁর কাছে ‘ইজ্জত’-এর প্রশ্ন। এ রাজ্যে ভোট বাড়িয়ে লোকসভা নির্বাচনে সাফল্যের প্রেক্ষাপট তৈরি করাই তাঁর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। ফলে যতই কোন্দল থাকুক, তাঁকে এটি মোকাবিলা করতে হবেই। বিজেপির মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর অবশ্য দাবি করেন, “বিজেপি কংগ্রেসের মতো পরিবারতান্ত্রিক দল নয়, একটি গণতান্ত্রিক দল। কারও কোনও বিষয়ে অসন্তোষ থাকলে তা দলীয় স্তরেই আলোচনা করে মিটিয়ে ফেলা হবে।”
কিন্তু ঘরোয়া স্তরে বিজেপি নেতারা কবুল করছেন, নেতাদের এই কোন্দলের আঁচ ভোটের ফলে পড়তে বাধ্য। উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যে যে কৌশলে এগোচ্ছেন গডকড়ী, তা অনেকেরই না-পসন্দ। উত্তরপ্রদেশে ভাল ফল করে গডকড়ী ‘সফল’ হোন, দলের একাংশ সেটাও চান না। গডকড়ী প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন, লোকসভা ভোটে বিজেপিকে দিল্লির তখ্তে পৌঁছে দেওয়াটাই তাঁর লক্ষ্য এবং উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন তার ‘লিটমাস টেস্ট’। দলের সকলকে সে কথা বুঝিয়ে গডকড়ী ভোট বৈতরণী পেরোতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখার। |