মুম্বই বিস্ফোরণ
টেক্কা দিতে গিয়ে ক্ষতি তদন্তের, স্বীকার কেন্দ্রের
দুই পুলিশ বাহিনীর একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার খেলায় আসল পাখি ফুড়ুৎ! মুম্বইয়ের ১৩/৭ বিস্ফোরণের তদন্তে ঠিক সেই ঘটনাটাই ঘটেছে বলে সন্দেহ ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে।
এক দিকে দিল্লি পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, অন্য দিকে মুম্বই পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখা বা এটিএস। দুই শিবিরের প্রতিযোগিতায় বিস্ফোরণের আসল ষড়যন্ত্রীরাই পালিয়ে গিয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, মুম্বই এটিএস কাল তদন্তে সাফল্যের কথা ঘোষণা করার পরপরই দিল্লি পুলিশ ও আইবি অভিযোগ তুলেছে, বিস্ফোরণের অন্যতম চক্রী হিসেবে ধৃত নাকি আহমেদ আসলে তাদের ‘চর’ হিসেবে অপরাধীদের ধরিয়ে দিতে সাহায্য করছিল।
দিল্লি পুলিশ ও আইবি-র বক্তব্য, বিস্ফোরণের প্রধান ষড়যন্ত্রকারী ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গি ইয়াসিন ভাটকল। তার নির্দেশে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল দুই পাক জঙ্গি ওয়াকাস ও তাবরেজ। এদের ধরিয়ে দিতেই দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেলের একটি দলের সঙ্গে মুম্বইয়ে গিয়েছিল নাকি আহমেদ। এটিএস-এর দাবি, দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেলের গোয়েন্দারা গত এক মাস ধরে মুম্বইয়ে সাদা পোশাকে ঘুরে বেড়ালেও কাজের কাজ কিছুই করতে পারেননি।
নাকি আহমেদ যে স্পেশ্যাল সেল ও আইবি-র হয়ে কাজ করছিল, আজ তা স্বীকার করে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহ। কে আগে সন্ত্রাসবাদী পাকড়াও করার কৃতিত্ব নেবে, সেই প্রতিযোগিতার ঠেলায় দুই পুলিশবাহিনী যে একে অপরকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করেনি, তা-ও মেনে নিয়েছেন তিনি। ভবিষ্যতে এই সমস্যা এড়াতে রাজ্য পুলিশের ডিজিদের বৈঠক ডাকতে চলেছেন তিনি। তদন্ত ও সমন্বয়ের ক্ষেত্রে ‘অপেশাদারিত্ব’ দূর করতে একটি ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ তৈরি করতে চাইছে কেন্দ্র। যাতে একই জায়গায় বিভিন্ন বাহিনী বা তদন্তকারী সংস্থা কাজ করলে কী ভাবে তথ্য বিনিময় হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকবে। যদিও আপাতত গোটা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে স্বরাষ্ট্রসচিব যুক্তি দিয়েছেন, “পুলিশের চর ছিল বলে নাকি আহমেদ কোনও বিস্ফোরণে জড়িত ছিল না বা থাকতে পারে না, এমনটা নয়।”
বিতর্কের শুরু গত কাল মুম্বইয়ে এটিএস-প্রধান রাকেশ মারিয়ার সাংবাদিক সম্মেলন থেকে। মারিয়া দাবি করেন, মূল ষড়যন্ত্রী ভাটকলকে ধরা না গেলেও তার দুই সঙ্গী, নাকি আহমেদ ও নাদিম আখতারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দু’জনেই বিহারের দ্বারভাঙার। এই সাংবাদিক বৈঠক দেখেই চমকে ওঠেন স্পেশ্যাল সেল ও আইবি-র অফিসাররা। স্পেশ্যাল সেল ও আইবি-কর্তাদের অভিযোগ, এটিএস শুধু ভুল লোককেই ধরেনি, বিস্ফোরণের মূল ষড়যন্ত্রীদের ধরতে যে গোপন অভিযান চালানো হচ্ছিল, তাতেও জল ঢেলে দিয়েছে। এটা আসল দোষীদের পালিয়ে যাওয়াকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা কি না, উঠেছে সেই প্রশ্নও। কারণ এর আগে পুণের জার্মান বেকারিতে বিস্ফোরণের ক্ষেত্রেও প্রথমে মুম্বই পুলিশ যাদের দোষী চিহ্নিত করেছিল, পরে দেখা যায় তারা নির্দোষ।
দিল্লিতে নাকি আহমেদের ভাই তাকি এখন পুলিশ অফিসারদের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁর একটাই প্রশ্ন, নাকি তো পুলিশকে সাহায্য করছিল। তাঁকেই কেন ফাঁসানো হচ্ছে এখন? এটিএস-এর অবশ্য দাবি, নাকি আহমেদ বিস্ফোরণের জন্য ইয়াসিন ভাটকলের থেকে দেড় লক্ষ টাকা নিয়েছিল। মোবাইলের সিমও দিয়েছিল সে-ই। সব কিছুর প্রমাণ রয়েছে। সে কারণেই গত ১২ জানুয়ারি বিহারের দ্বারভাঙা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে নাকি-নাদিমকে। বিস্ফোরণের ৬ মাসের মাথায় এই গ্রেফতারকে নিজেদের সাফল্য বলেই দাবি করেছেন এটিএস-প্রধান।
এটিএস-এর এই আগাম সাফল্য ঘোষণায় ক্ষুব্ধ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। গত কালের সাংবাদিক বৈঠকের আগে এটিএস কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে কিছুই জানায়নি বলে অভিযোগ। সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্রসচিব নিজে সাংবাদিক বৈঠক দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে মুম্বইয়ের এটিএস-প্রধান ও অন্য পুলিশকর্তাদের টেলিফোন করেন। স্বরাষ্ট্রসচিব অবশ্য আজ নিজে জানিয়েছেন, শনিবারই তাঁর সঙ্গে এটিএস-প্রধান রাকেশ মারিয়ার বিস্তৃত আলোচনা হয়েছিল। দিল্লি পুলিশ ও আইবি-র তরফেও তাঁকে সব জানানো হয়। কিন্তু এ কথাও সত্যি যে, স্পেশ্যাল সেলের দলটি গত এক মাস ধরে মুম্বইয়ে থাকলেও, সে বিষয়ে মুম্বই পুলিশকে কিছু জানানো হয়নি। গত কাল রাকেশ মারিয়া মন্তব্য করেছিলেন, দিল্লি ও মুম্বই পুলিশের মধ্যে ‘পেশাদারি প্রতিযোগিতা’ রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার মনে করছে, জাতীয় সন্ত্রাস মোকাবিলা কেন্দ্র (এনসিটিসি) পুরোপুরি কাজ শুরু করলে সমস্ত সংস্থাই তাদের সব তথ্য জানাতে বাধ্য হবে। শুধু গোয়েন্দা-তথ্য নয়, সন্ত্রাসবাদী হামলার তদন্তের অগ্রগতিও জানাতে বাধ্য থাকবে সব সংস্থা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.