আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি নদিয়ার ১৭টি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। আগের বারের মতোই এ বারও একই দিনে জেলার কলেজগুলিতে নির্বাচনের দিন ফেলা হয়েছে। জেলার মোট কলেজ অবশ্য ১৯টি। তবে দু’টি কলেজ নতুন বলে সেখানে এ বার ভোট হবে না।
এই বছরে জেলার একের পর এক কলেজে ছাত্র সংঘর্ষ হয়েছে। তার জেরে পঠনপাঠন ব্যাহত হয়েছে। উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। কে কোন কলেজ দখল করবে, তা নিয়ে দ্বন্দ্বের চোরা স্রোত জেলার রাজনীতিকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। অতিরিক্ত জেলা শাসক শ্রীকুমার চক্রবর্তী বলেন, “শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন করার জন্য আমরা বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ছাড়াও আমরা সমস্ত ছাত্র সংগঠন ও কলেজ কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে নিয়ে এক দফা বৈঠকও করেছি। এখন মহকুমা স্তরে সেই বৈঠক শুরু হয়েছে। জেলা স্তরে আবার আমরা পরে এমন বৈঠক করব।”
বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক কৌশিক দত্তের বক্তব্য, “গত বছরও একই দিনে এই ভাবেই জেলার কলেজগুলিতে ভোট হয়েছিল। কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সেই ভোটে যে কলেজে যাঁরা জিতেছিলেন, এখন যদি দেখেন, তা হলে মেলাতে পারবেন না। কারণ বিধানসভা ভোটের পরে জেলার অনেকগুলি কলেজে ছাত্র সংসদ দখল করে নিয়েছে এমন ছাত্র সংগঠন, যারা ভোটে কিন্তু হেরে গিয়েছিল। যেমন উদাহরণ হিসেবে দেখানো যায়, কৃষ্ণনগর দ্বিজেন্দ্রলাল কলেজে গত বছর ভোটে জিতেছিল এসএফআই। কিন্তু এখন সেই কলেজের ছাত্র সংসদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দখলে।” বিধানসভা নির্বাচনের পরে ওই কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সহ সিংহভাগ ছাত্র প্রতিনিধি তৃণমূল ছাত্র পরিষদে যোগ দেন। বেথুয়াডহরি কলেজেও ভোটে জিতেছিল এসএফআই। কিন্তু রাজ্য রাজনীতিতে পালাবদলের পরে সেই কলেজের ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা যোগ দেন ছাত্র পরিষদে। কৌশিক বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনের পরে রাজ্য রাজনীতিতে যাঁরা ক্ষমতায় এসেছেন বিভিন্ন কলেজে তাঁদের ছাত্র সংগঠনগুলি জোর করে ছাত্র সংসদ দখল করছে। তাই আমরা ভোটে জিতেও ছাত্র সংসদ দখলে রাখতে পারছি না।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি জয়ন্ত পাল বলেন, “আমরা কাউকে ভয় দেখাচ্ছি না। বরং বিধানসভা ভোটের পরে রাজ্যে পালা বদল ঘটায় ছাত্র ছাত্রীরাই নিজেদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা পেয়েছে। এত দিন ভয়ে তাঁরা কুঁকড়ে থাকতেন। এখন তাঁরা আমাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন।”
ছাত্র পরিষদের জেলা স্তরের নেতা বগুলা কলেজের ছাত্র পরিষদের নেতা নিত্যানন্দ মণ্ডল বলেন, “ছাত্র সংগঠনগুলিকে নিজেদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা নিজেরা যদি একে অপরকে উস্কানি না দিই, তা হলে কোনও গণ্ডগোল হবে না। সেই দায়িত্বটা নিতে ছাত্র সংগঠনের নেতাদেরই। প্রশাসনের হাতে সব ছেড়ে রাখলে চলবে না।” তবে সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, “কলেজ কর্তৃপক্ষকেও নিরপেক্ষ থাকতে হবে।” ছাত্র সংগঠনগুলির তরফে জানানো হয়েছে, মনোনয়নপত্র তোলার সময় থেকেই গণ্ডগোলের সূত্রপাত ঘটে। কলেজ কর্তৃপক্ষ যদি সেখানে সতর্ক থাকেন, তা হলে অশান্তির আশঙ্কা অনেকটাই কমবে।”
কলেজগুলির কর্তৃপক্ষেরা অবশ্য উদ্বিগ্ন। মাজদিয়ার সুধীরঞ্জন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সরজেন্দ্রনাথ কর বলেন, “এ বারের নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ রাখাটা আসলে আমাদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। কলেজের কোনও শিক্ষকই রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। বাধ্য হয়ে আমাকেই এই দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। আমি সব সংগঠনের সঙ্গেই যোগাযোগ করছি। চেষ্টা করছি সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন পক্রিয়া শেষ করতে।” বগুলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অরুণকান্তি সাহার কথায়, “আমরা প্রত্যেকটি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বসে কথা বলছি। প্রশাসনের সঙ্গেও দফায় দফায় বৈঠক হবে।” |