সীমান্তে ‘অতিথি’দের আগলে রাখছেন ওরাই।
সকালের পড়া শেষ হলেই এক ছুটে বিলের ধারে, তারপর স্কুল ফেরত আবার বিলের দিকটায় একবার ঢুঁ মেরে বাড়ি। রবিবার হলে তো কথায় নেই। দিন ভর বিলের ধারে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো। অতিউৎসাহী কাউকে দেখলেই গম্ভীর গলায় তাদের পরমার্শ, “দূর থেকে দেখবেন কিন্তু, ওদের বিরক্ত করবেন না।’’ মুরুটিয়ার সীমান্তঘেঁষা দিঘলকান্দি গ্রামের ধন্দির বিলে গত নভেম্বর থেকেই ভিড় করেছে পিনটেল, বার হেডেড গুজ, ডার্টার-সহ বিভিন্ন প্রজাতির ইগ্রেট আর হেরন। বৎসর ভরের বাসিন্দা গাই বগলা, রাতচরা, ডাহুক, জ্যাকানা’রা তো রয়েছেই। ফেুয়ারির গোড়ায় শীত হারাতা শুরু করলে ওরা ফিরে যায়। এ বারও হয়তো যাবে। পঞ্চম শ্রেণীর সহদেব পাহাড়িয়া, নবম শ্রেণীর অমিত বালা কিংবা অষ্টম ক্লাসের পড়ুয়া বাপন কীর্তনিয়া বলছে, ‘‘শুধু আমরা নই, সারা গ্রামের মানুষ এই পাখিদের অতিথি বলেই মনে করেন। পাখি মারা তো দুরের কথা বাইরে থেকে এসে যাতে কেউ ওদের বিরক্ত না করেন সে জন্য আমরা সবসময় নজর রাখি। বিলের পাশেই একটা বাঁশবাগান। রাতে অনেকে সেখানেও উড়ে যায়। অনেকে বিলের জলেই পানার উপরে ঘর বেঁধে রয়েছে। আমরা সে দিকেও নজর রাখি।’’ |
দিঘলকান্দির বিলে ছবিটি তুলেছেন কল্লোল প্রামাণিক। |
দিঘলকান্দির কমল পাহাড়িয়া, মিনু বালাদের কথায়, ‘‘পাখিগুলোর জন্য গ্রামের ওই ছেলেগুলোর যেন রাতের ঘুমও চলে গিয়েছে। দিনরাত শুধু পাখিদের চিন্তায় মশগুল। ওদের কয়েকজন আবার পাখির ডাকও নকল করে ফেলেছে। পাখিরা চলে গেলে ক’দিন বিলের ধারে মনমরা হয়ে বসে থাকে ওরা। কয়েক বছর ধরে ওদের এই কান্ড।’’
ধন্দির বিলে কমবেশি সারাবছরই জল থাকে। রাতে বিল পাহারা দেন পাশের গ্রাম গোয়াবাড়ির প্রশান্ত বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘বেশ কয়েক বছর ধরেই দেখছি শীতের এই সময়টাতেই এই পাখিগুলো চলে আসে এ বার নভেম্বরের শুরুতে আরও অনেক পাখি এসেছিল। তবে মাঝখানে কয়েক দিন আকাশ মেঘলা থাকার পরে দেখছি বেশ কিছু পাখি কমে গিয়েছে।’’ দিঘলকান্দি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলের কার্তিক মণ্ডল বলেন, ‘‘সীমান্ত লাগোয়া এই এলাকাগুলো অপেক্ষাকৃত ভাবে নির্জন। এই নিরিবিলি তাই পাকিদের খুব পছন্দের।’’
বন দফতরের রেঞ্জ অফিসার অমলেন্দু রায় বলেন, ‘‘বাচ্চাগুলোর পাখি-প্রেম দেখার মতো। বন দফতর থেকেও পরিযায়ীদের যাতে কেউ বিরক্ত না করে সে জন্য আমরাও পাহারা দিই। পঞ্চায়েতগুলোকেও এ ব্যাপারে নজর রাখতে বলা হয়েছে।’’ |