দুর্লভকে সুলভ করার উদ্যোগ
ছবির জগৎ
বেলজিয়ামে উনিশ শতকে ছাপা রাম-সীতা তাসের পুরো একটা সেট একসঙ্গে দেখেছেন এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কাঁসারিপাড়া কি চোরবাগান আর্ট স্টুডিয়োর কিছু ছবি দু’একটা বইয়ে দেখা যায়, কিন্তু হাতের নাগালে নৈব নৈব চ। কালীঘাট পটে কালীর নানা রূপ, কিংবা সৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুরের দ্য টেন প্রিন্সিপাল অবতারস অব দ্য হিন্দুজ-এর (১৮৮০) মতো সীমিত সংখ্যায় মুদ্রিত চমৎকার লিথোগ্রাফ-ওলা বই দেখার সৌভাগ্যই বা ক’জনের হয়? সংগ্রহশালার তালাবন্ধ আলমারিতে, নইলে কোনও সংগ্রাহকের কাছেই মুখ লুকিয়ে থাকে এ সব দুর্লভ জিনিস। দুর্লভকে কিছুটা সুলভ করার কাজে এ বার এগিয়ে এসেছেন পরিমল রায় আর কাজি অনির্বাণ। অনেক দিনের অনুসন্ধান আর পরিশ্রমের ফল তাঁরা সাজিয়েছেন ‘আর্ট ট্রেজার্স’-এর ছটি খণ্ডে, মোট ৬৭টি ছবিতে।
রাম-সীতা তাস, দশাবতার (সৌরীন্দ্রমোহনের বইয়ের লিথো-শিল্পী ছিলেন কৃষ্ণহরি দাস, ছাপা হয় স্ট্যানহোপ প্রেস থেকে), কালীর দশরূপ, বটতলা-সুন্দরীর সঙ্গে আছে রবীন্দ্রনাথের ২০টি প্রতিকৃতিও-- শিল্পীদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, চিত্তপ্রসাদ, গোপাল ঘোষ, রোদেনস্টাইন, সত্যজিৎ রায়, অবনী সেন, বামাপদ বন্দ্যোপাধ্যায় , দেবব্রত বিশ্বাস, হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার, যামিনী রায়, কালীকিঙ্কর ঘোষদস্তিদারের মতো বিশিষ্টজন। সব ক্ষেত্রেই মূল ছবি থেকে প্রতিচিত্র তৈরি করা হয়েছে, যাতে রঙ বদলে না যায়। বটতলা-সুন্দরীদের ১৩টি ছবি কাঁসারিপাড়া- চোরবাগান আর্ট স্টুডিয়ো মিলিয়ে, মূলত রাধাপ্রসাদ গুপ্তের সংগ্রহ থেকে। এই উদ্যোগে সাড়া পেলে ওঁরা আরও এমন অনেকগুলি সেট তৈরি করতে প্রস্তুত। পুরো সেট কিনতে হবে এমন নয়, বেছে নেওয়া যাবে পছন্দের ছবিটাও। পুরনো কলকাতার ছবির জগতের কিছুটা এ ভাবে হাতে এসে গেল, বড় কম কথা নয়। সঙ্গে বাঁদিক থেকে, রবীন্দ্র-প্রতিকৃতি (শিল্পী অজ্ঞাত, নীহার মজুমদারের সৌজন্যে), বুদ্ধ অবতার (সৌরীন্দ্রমোহনের বই থেকে) আর কলসসুন্দরী। পাওয়া যাবে হিন্দুস্থান পার্কের গ্যালারি ৫২ডি-তে।

নেপথ্যে
‘বংশের বড়রা বলতেন, ‘ও বড্ড গুডি গুডি টাইপ, ওকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না’। কিন্তু ছেলেটিকে ভালবাসতেন রাঙাকাকু, সুভাষচন্দ্র বসু। ১৯৩৩ থেকেই তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভার দিতেন ছেলেটি, অশোকনাথ বসুকে। শরৎচন্দ্র বসু ও বিভাবতী দেবীর বড় ছেলে অশোকনাথ নেপথ্যেই রয়ে গিয়েছেন সুভাষচন্দ্রের কর্মকাণ্ডে। রাসায়নিক শিল্পে তিনি ছিলেন বিশেষজ্ঞ। সুভাষচন্দ্রের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল এলগিন রোডের বাড়ি থেকে মোটরে বেরিয়ে পর দিন ভোরে আসানসোলে অশোকনাথের বারারি কোম্পানির বাংলোতে থাকবেন, তার পর আসানসোল থেকে মাঝরাতে ট্রেন ধরবেন। কিন্তু অশোকনাথ তাঁকে বলেন, আসানসোলের মতো জনবহুল স্টেশন থেকে ট্রেন না ধরে গোমো-র মতো ছোট নির্জন স্টেশন থেকে ধরা উচিত। সেই মতোই কাজ হয়েছিল। অশোকনাথ (সঙ্গে তাঁর ছবি) তাঁর ‘রাঙাকাকু’কে নিয়ে লিখেছেন একটি বইও, মাই আঙ্কল নেতাজি (ভারতীয় বিদ্যা ভবন)। ১৯১১-তে জন্ম অশোকনাথের, তাঁর জন্মশতবর্ষ পালনে উদ্যোগী হয়েছে তাঁর পরিবার। তাঁর বইটির একটি নতুন সংস্করণ হবে, নতুন ভাবে প্রকাশিত হবে তাঁকে লেখা সুভাষচন্দ্রের চিঠিপত্রও।

অনাদৃত
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস কলঙ্কজনক হলেও স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে দ্বিতীয় হলওয়েল মনুমেন্ট-এর গুরুত্ব আছে। ১৭৫৬-য় সিরাজদ্দৌলার কলকাতা আক্রমণের সময় ‘অন্ধকূপ হত্যা’-র গল্প তৈরি করে, ১৭৬০-এ রাইটার্স বিল্ডিংস্-এর উত্তর-পশ্চিম কোণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করান জন জেফানিয়া হলওয়েল। পরে হেস্টিংসের নির্দেশে সেটি ভেঙেও ফেলা হয়। কিন্তু ১৯০২-এ লর্ড কার্জন ওই পুরনো স্মৃতিস্তম্ভটির অবিকল এক প্রতিরূপ নির্মাণ করান। ইতিহাসবিদ বিহারীলাল সরকার ও অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় তথ্য-প্রমাণ দিয়ে অন্ধকূপ হত্যার গল্পকে মিথ্যা প্রমাণ করেন। প্রায় চল্লিশ বছর ওই জায়গায় থাকার পরে, ১৯৪০-এ সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে স্মারকটির অপসারণ আন্দোলন আরম্ভ হয়। কিন্তু শুরুতেই সুভাষ গ্রেফতার হন। তবে এর ফলেই শেষ পর্যন্ত ১৯৪০-এর ২৪ সেপ্টেম্বর স্তম্ভটিকে তুলে এনে সেন্ট জন্স চার্চ প্রাঙ্গণে নির্বাসিত করা হয়। ভারতের বুকে সেটিই সুভাষচন্দ্রের শেষ প্রকাশ্য রাজনৈতিক আন্দোলন। এখনও স্মৃতিস্তম্ভটি রয়েছে চার্চ প্রাঙ্গণে। স্তম্ভের গায়ে গজিয়ে গিয়েছে অশ্বত্থ-চারাও। ঐতিহাসিক এই স্মারকটির আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। সেই যুক্তিতে সম্পূর্ণ ইতিহাস-সহ এর সংরক্ষণ প্রয়োজন।

শতবর্ষে
১৯৩৮-এর এক সন্ধে। কলেজ স্ট্রিটের পুরনো বইয়ের দোকানে খুঁজতে খুঁজতে এক পাঠক পেয়ে গেলেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নবরত্নমালা। সত্যেন্দ্রনাথ সে বইয়ে লিখেছিলেন, ‘ইহাতে সংস্কৃতের যে সকল অনুবাদ আছে তন্মধ্যে আমার নিজের ছাড়া কতকগুলি শ্রীমান রবীন্দ্রনাথ-কৃত।’ কিন্তু কোনগুলি? মাত্র দু’টির নীচে লেখা ‘র’। কিন্তু কবিতায় নিবিড় ওই পাঠকটির মনে হল, রবীন্দ্রনাথের আরও অনুবাদ আছে ওই বইয়ে। খুঁজতে লাগলেন তিনি, কবিতার পাঠের বিচারে। তার পরে কোনগুলি রবীন্দ্রনাথের সেটা স্থির করে চিঠি লিখলেন স্বয়ং কবিকেই। ‘বিস্মিত’ রবীন্দ্রনাথ ডেকে পাঠিয়েছিলেন তাঁর নিবিষ্ট পাঠকটিকে। পরবর্তী কালে রবীন্দ্র-গবেষণায় ইতিহাস হয়ে উঠেছিলেন সেই পাঠকটি, জগদীশ ভট্টাচার্য (১৯১২-২০০৭)। তাঁর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে রবিবার সকাল সাড়ে দশটায় শিশির মঞ্চে প্রথম জগদীশ ভট্টাচার্য স্মারক বক্তৃতায় বলবেন সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। থাকবেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও উজ্জ্বলকুমার মজুমদার। প্রকাশিত হবে জগদীশ ভট্টাচার্যের অগ্রন্থিত গদ্যের একটি সংকলনও। আয়োজনে ‘জগদীশ ভট্টাচার্য মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’।

অতিথি
সন্দেশ আর বার্গারকে মিলিয়ে দিলেন তিনি। ডেবোরা বেকারের জন্ম শার্লট্সভিলে। পড়াশুনো ভার্জিনিয়া এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম বই এক কবির জীবনীগ্রন্থ। শুরু করেন পুস্তক সম্পাদনা ও প্রকাশনাও। ১৯৯০-এ কলকাতায় এসে লেখেন ইন এক্সট্রিমিস: দি লাইফ অব লরা রাইডিং। লেখক অমিতাভ ঘোষের সঙ্গে পরিচয় এবং পরিণয়। ২০০৮-এ প্রকাশিত হয় আ ব্লু হ্যান্ড: দ্য বিট্স ইন ইন্ডিয়া। পরে ফেলোশিপ নিয়ে কাজের সময় নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরিতে খুঁজে পান ইসলাম ধর্ম নিয়ে পাকিস্তানে চলে যাওয়া ইহুদি-আমেরিকান মহিলা মরিয়ম জেমিলার চিঠি। ডেবোরাও যান পাকিস্তানে তাঁর ডেরায়। মরিয়মকে নিয়েই ডেবোরার নতুন উপন্যাস, দ্য কনভার্ট: আ টেল অব এক্সাইল অ্যান্ড এক্সট্রিমিজম (পেঙ্গুইন-ভাইকিং)। সম্প্রতি ডেবোরা শহরে এসেছিলেন এপিজে লিটারেরি ফেস্টিভ্যালে। সন্দেশ প্রথম পছন্দ হলেও ইলিশ আর চিংড়ির মালাইকারির স্বাদ ভোলা যায় না কি! অকপটে জানালেন তিনি।

স্মরণ
দুই চিকিৎসকের জন্মের সার্ধশতবর্ষকে সামনে রেখে এ বার পুনর্মিলন উদযাপন করবেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনীরা। একজন নীলরতন সরকার, অন্য জন কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়। ২৮-৩১ জানুয়ারি, পুনর্মিলন উৎসবের তিনটি দিনকে নীলরতন সরকার ও কাদম্বিনীদেবী স্মারক দিবস হিসেবে পালন করা হবে বলে প্রাক্তনীদের পক্ষ থেকে সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী ও আশিস বসু জানিয়েছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি নীলরতন ছিলেন শিক্ষাবিদ, স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিজ্ঞানমনস্ক এমনকি শিল্পোদ্যোগীও। সায়েন্স কলেজ এবং কারমাইকেল (আর জি কর) মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠাতেও তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। আর কাদম্বিনী ব্রিটেনের বাইরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট। চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতক হওয়ার পরে বিদেশ থেকেও তিনি মেডিক্যাল ডিগ্রি লাভ করেন। এঁদের জীবনের নানা অজানা তথ্য তুলে ধরতে চান নীলরতনের প্রাক্তনীরা।

মোর সন্ধ্যায়
রক্তে ছিল গান, কিন্তু ছোটবেলায় ভাবেননি, গানই হবে অবলম্বন। ডানপিটে মেয়েবেলার শেষে গান এল, আক্ষরিকই, কী মহা সমারোহে! কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে শ্রাবণী সেন, অতঃপর, পাড়ি দিলেন দীর্ঘ পঁচিশটি বছর। সেই লগ্নটি স্মরণীয় করে রাখতেই আগামী রবিবার সায়ংকালে, নজরুল মঞ্চে, ‘এবং ভাবনা’-র আয়োজনে তাঁর একক অনুষ্ঠান, ‘সাথের সাথী’। ‘গান শুনতাম প্রচুর, মার গান তো শুনতামই, আরও অনেকের গান। অনেক রকম গান। সেই সব শুনতে শুনতেই বোধহয় গানে এসে পড়েছি।’ সুমিত্রা সেনের কন্যা যে মাতৃ-কণ্ঠে মুগ্ধ হবেন, অনুমান করাই যায়। তাঁর আর এক অতীব প্রিয় শিল্পী সাগর সেন। সেই প্রেক্ষিত পিছনে। সামনে দিগন্ত। কোন গানটি উৎসর্গ করতে চাইবেন এই মুহূর্তটিকে? ‘মোর সন্ধ্যায় তুমি সুন্দরবেশে এসেছ, তোমায় করি গো নমস্কার’, জানালেন শ্রাবণী।

ফিরে দেখা
চর্যাপদ থেকে রবীন্দ্রনাথ এখানেই শেষ বাংলা সাহিত্য? কৌতূহল জেগেছিল ইতালীয় মেয়েটির মনে। খোঁজ শুরু করে সন্ধান পান ‘বনলতা সেন’-এর। তার পরই জীবনানন্দের কবিতা ইতালীয় ভাষায় অনুবাদ করতে শুরু করেন ক্যারোলা এরিকা লোরেয়া। ২৬ জানুয়ারি বইমেলায় প্রকাশিত হবে তাঁর ফিরে দেখা বনলতা সেন (এন ই পাবলিশার্স)। চব্বিশ বছরের ক্যারোলা (সঙ্গে তাঁর ছবি) রোম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো করেছেন প্রাচ্য ভাষা ও কৃষ্টি বিষয়ে। বর্তমানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা লোকসঙ্গীত-লোকসাহিত্যে গবেষণারত। ক্যারোলার কথায়, জীবনানন্দের কবিতা অনুবাদ করা সম্ভব নয়। তাই শুধু জীবনী আর কবিতা নয়, ইতালির পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন রাজনৈতিক-সামাজিক প্রেক্ষাপট। বইটিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লিখেছেন উদয়নারায়ণ সিংহ, সি পার্থপ্রতিম, সুনন্দন রায়চৌধুরী।

বিয়ের বই
এক সময়ে বিবাহ উপলক্ষে প্রকাশিত হত নানা ছড়া-কবিতা, হাস্যরসাত্মক রচনার পুস্তিকা। বিয়ের পরে পড়াশোনার জন্য বরকে বিদেশে গিয়ে থাকতে হলে তার মনের অবস্থা কেমন হয়, তা নিয়ে ১৩২৯ বঙ্গাব্দে ‘বিয়ে’ নামে এক সচিত্র পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছিল শিশির পাবলিশিং হাউস থেকে। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের প্রবাদপুরুষ ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় (ডিজি) ওই পুস্তিকার ছবিতে পুত্র, পিতা, মাতা, স্ত্রী, সখা, সখী-সহ সমস্ত ভূমিকাই গ্রহণ করেছিলেন। গল্পের প্লটও তাঁর রচনা। বিয়ের পরে পরীক্ষার কারণে নাতবউ থাকবেন পিতৃগৃহে, তাই কাঁকুরগাছি নিবাসী বিভারাণী ভৌমিক তাঁর নাতি-নাতবউ অরিজিৎ-উমার বিয়ের বধূবরণের আমন্ত্রণপত্রে ওই ‘বিয়ে’ পুস্তিকাটি সংযোজিত করে দিয়েছেন। আমন্ত্রণপত্রে আরও রয়েছে পাত্রের পিতা-মাতার বিয়ের কিছু পুরনো ছবি এবং ভৌমিক পরিবারের বংশলতিকা।

এক মঞ্চে
১৯৫৭-য় শিশু সাহিত্যিক ‘স্বপনবুড়ো’ (অখিল নিয়োগী) তৈরি করেন শিশুদের প্রতিষ্ঠান ‘সবপেয়েছির আসর’। তাঁর কথায়, এ হল ‘মানুষ গড়ার কারখানা’। তখন নাচ, গান, কবিতা, ব্রতচারী ইত্যাদি নানা আয়োজনে ভরা থাকত ছোটদের বিকেলগুলো। আসর বসত শোভাবাজার রাজবাড়িতে। পরে এর নানা শাখা কলকাতার গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। জে বি রায় আয়ুর্বেদিক হাসপাতালের মাঠে বসত ‘নবমিতালি সবপেয়েছির আসর’। এটি পরে চলে আসে দেশবন্ধু পার্কে। বর্তমানে ৫৬তম বর্ষে এর সদস্যসংখ্যা শতাধিক। ২০০৩-০৪-এ জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত এই আসরটির বার্ষিক অনুষ্ঠান গতকাল শুরু হয়েছে, চলবে আট দিন। যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশের শিশু প্রতিষ্ঠান ‘কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর’-এর একটি দল। নানা অনুষ্ঠানে ‘স্বপনবুড়ো মঞ্চে’ দুই বাংলার শিশুদের দেখা যাবে এক সঙ্গে।

হৃদয়স্পন্দ
এলভিস প্রেসলি থেকে ‘খোকাবাবু যায়’, এই বিপুল ব্যবধানের দু’প্রান্তে নিজের জীবনটাকে ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সমিধ মুখোপাধ্যায়। সুরকার-জুড়ি ঋষি-সমিধ-এ ছিলেন এক সময়। জোড় ছিন্ন হয়ে এখন তিনি স্বাধীন, স্বতন্ত্র। এক সময় জীবন ছিল সন্ধেয় হিপ পকেট-এ বাজনা, আর গোটা দিনটা জুড়ে নিজেরই সন্ধান। ছিলেন ‘পরশপাথর’-এ। যথেষ্ট জনপ্রিয়তাও পেয়েছিল সেই ব্যান্ড। অতঃপর সমিধ শুরু করলেন জনতার দিকে যাত্রা। ‘মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের মধ্যেই বদ্ধ থাকব? এই যে বিরাট জনগোষ্ঠী, এদের কাছে পৌঁছনোরও তো একটা দায় থাকে, টান থাকে’, বলছেন সমিধ! ‘কোকাকোলা’-র মতো গানই প্রমাণ, তিনি পৌঁছতে পেরেছেন জনতার হৃদয়পুরে। কাল, আত্মপ্রকাশ করবে তাঁরই সুরারোপিত ছবি ‘মাচো মুস্তাফা’-র গান। ‘সমিধের গুণ ওর বৈচিত্র্য, ও যে টাইপকাস্ট ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারে, এই ছবিই তার প্রমাণ’, বলছেন ছবির প্রযোজক পি পি তিওয়ারি। তরুণ সুরকার আত্মবিশ্বাসী। কারণ, তিনি জানেন, তাঁর গানের যে তাল গড় বাঙালিকে নাচিয়েছে, সেই ‘বিট’ আর কিছুই নয়, আমজনতার হৃদয়স্পন্দ।

নারীবাদী
বড়ো টিপ, ‘বাকু’-পরা, ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর। একই ভাবে স্বচ্ছন্দ চেতলার বস্তি, বানতলার চায়ের দোকান থেকে ক্যালকাটা ক্লাবের পার্টি। হাজারিবাগের মৈত্রেয়ী। সেন থেকে কলকাতায় এসে চট্টোপাধ্যায় হয়ে ওঠার পর্বে কি বাহিরানাতেই থেকে গেলেন? সংগীত, নাটক পর্যালোচনা আর অন্তর্তদন্তমূলক লেখার সুবাদে বিশিষ্ট পরিচিতি। ১৭ জানুয়ারি চলে গেলেন, ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত বেঁচে থাকলে হতেন ৭২। বনেদিয়ানার ঠোক্কর, মেয়ে বলে বৈষম্য তাঁকে নিজের অজান্তেই পরিণত করেছিল নারীবাদীতে। ১৯৮৩-তে পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতায়, রাজনৈতিক কিন্তু দলীয় আনুগত্যের বাইরের স্বতন্ত্র সংগঠন ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ মঞ্চ’-র সঙ্গে প্রথম থেকেই তিনি। তাঁর বাড়িই হয়ে উঠল নারী আন্দোলনের অফিস। যেখানে নারীকর্মী থেকে নির্যাতিত মহিলা যখন খুশি হাজির হতে পারতেন। তাঁর বাড়িতেই শুরু হল বাম-পুলিশের নজরদারি। তবুও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার আজীবন। তসলিমাকে ফেরানোর জন্য যত দূর যেতে হয় তিনি প্রস্তুত, শুধু শরীরটা দিচ্ছিল না। অসংখ্য ছোট পত্রিকা তাঁর লেখায় সমৃদ্ধ। তাঁর লেখার সংকলন বাঁধন ছেঁড়ার সাধন, বাঁধ ভেঙে দাও, মেয়েদের পাড়ায় পাড়ায়। দাদু হেমেন্দ্রকুমার রায়ের গপ্পো, সিনেমার গান আর চিত্রনাট্যের রসে মজানো মৈত্রেয়ী ছিলেন আশ্চর্য স্মৃতির ঝাঁপি। স্বামী প্রয়াত কিশোর চট্টোপাধ্যায় ছিলেন শিল্পী, বিজ্ঞাপন ও সঙ্গীত জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং মৈত্রেয়ীর ঝোড়ো পথচলার সহমর্মী। দু’জনের শিল্পসংগ্রহ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া এখনই প্রয়োজন।
   


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.