মালদহ জেলা হাসপাতালে শিশু-রোগীদের চাপ কমাতে আশপাশের কয়েকটি হাসপাতালের শিশুবিভাগের পরিকাঠামো উন্নত করার সিদ্ধান্ত নিল স্বাস্থ্য দফতর।
শনিবার স্বাস্থ্য দফতরে স্বাস্থ্য সচিব সঞ্জয় মিত্র, স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপতী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কমিশনার দিলীপ ঘোষ, স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বেশ কিছু স্বাস্থ্য-কর্তা মালদহ হাসপাতালের ‘পরিস্থিতি’ নিয়ে বৈঠকে বসেন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সেখানে ঠিক হয়েছে, মালদহ জেলা হাসপাতাল থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে মিল্কি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে মালদহ হাসপাতালের ‘গ্রামীণ ইউনিট’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ওই হাসপাতালে সদ্যোজাতদের চিকিৎসার জন্য দু’টি ‘সিক নিওনেটাল স্টেবিলাইজিং ইউনিট’ রয়েছে। তার সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। পাশাপাশি, গাজল ও চাঁচল হাসপাতালে সদ্যোজাত ও শিশুদের চিকিৎসার পরিকাঠামো কতটা বাড়ানো যায় তা দেখতে, আগামী ২৪ জানুয়ারি ওই দু’টি হাসপাতাল পরিদর্শনে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। |
মালদহ জেলা হাসপাতালের ছাদে একটি অস্থায়ী কাঠামো তৈরি করে তাতে শিশুদের জন্য আরও ৬০-৭০টি শয্যা রাখার ব্যাপারেও এ দিন সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ১২টি ‘রেডিয়েন্ট ওয়ার্মার’ ও দু’টি ‘ফটো-থেরাপি’ যন্ত্র। বাড়ানো হয়েছে চিকিৎসকও। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, মালদহ জেলা হাসপাতাল ছাড়াও রাজ্যে আরও অনেক জেলা ও মহকুমা হাসপাতালে রোগীর চাপে পরিষেবা দেওয়াই কঠিন। বিশেষ করে গর্ভবতী মা ও সদ্যোজাত অসুস্থ শিশুদের সংখ্যাও অনেক হাসপাতালে বেশি। সে সব জায়গাতেও পরিকাঠামো বাড়ানোর কথা বা নতুন ‘ইউনিট’
খোলার কথা কেন ভাবা হচ্ছে না? মালদহে সাম্প্রতিক শিশুমৃত্যু নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে বলেই কি সেখানে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে?
স্বাস্থ্য-কর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, ‘বিষয়টি’ ঠিক তা নয়। যে সব হাসপাতালে মা ও শিশুদের ভিড় বেশি সেখানে ৮-১০ তলা ‘কেয়ার সেন্টার’ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের। তবে সে জন্য সময় লাগবে।
তাঁদের বক্তব্য, “মালদহের বিষয়টি আলাদা।” কেন আলাদা? স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপতীর বক্তব্য, “মালদহে ১৫টি ব্লক রয়েছে। কিন্তু কোনও মহকুমা হাসপাতাল ছিল না। চাঁচল সবে মহকুমা হাসপাতালের পরিচয় পেয়েছে, কিন্তু সেই অনুযায়ী পরিষেবা শুরু হয়নি। পুরো চাপটাই মালদহ জেলা হাসপাতালের উপর পড়ে। তার উপরে বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকেও সেখানে রোগীরা আসেন। তাই মালদহ সদর হাসপাতালের জন্য আগে কিছু করা দরকার।”
মালদহ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রত্যেকেই গুরুতর অসুস্থ ছিল। শিশুমৃত্যু রুখতে কলকাতা থেকে ৪ জন শিশু বিশেষজ্ঞ সেখানে পাঠানো হলেও নার্সের সংখ্যা না বাড়ায় ‘বিপাকে’ পড়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। বতর্মানে ‘সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ)-এর ১৬টি শয্যার জন্য ৬ জন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, ৭ জন নার্স ও ২ জন সাফাইকর্মী রয়েছেন। অথচ, এসএনসিইউ-এ কমপক্ষে ৩০ জন নার্সের প্রয়োজন বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। সুপার হিমাদ্রি আড়ি বলেছেন, “রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আরও নার্স চেয়ে আবেদন করেছি। কিন্তু নার্স পাঠানো হচ্ছে না।” |