শুধু ছাত্র সংসদের নির্বাচনই নয়, সরস্বতী পুজোকে ঘিরেও যে ‘রাজনীতি’র দাপাদাপি হতে পারে, শনিবার তা দেখল অশোকনগরের নেতাজি শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়।
সরস্বতী পুজোর কমিটি এবং প্রতিমার বায়না বাতিল করে নতুন করে তা করতে হবে, এই দাবিতে শনিবার ওই কলেজে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রায় দেড় ঘণ্টা আটকে রাখল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) একাংশ। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, কাউকে কিছু না জানিয়ে ওই কমিটি গড়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুধানাথ চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষ এবং বারাসতের দলীয় সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের হস্তক্ষেপে ঘেরাও ওঠে। কলেজে যান অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূূলের সমীর দত্ত এবং ভাইস-চেয়াররম্যান প্রবোধ সরকার। বিক্ষোভকারীরা এর পরে অধ্যক্ষের ঘরের সামনেই সন্ধ্যা পর্যন্ত ‘অনশন’ করেন। অসুস্থ থাকায় সুধানাথবাবু এ দিন কলেজে আসেননি। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন। |
অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক ধীমান রায় বলেন, “এই ঘটনায় দলের কেউ যুক্ত থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কাছে।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সঞ্জয় রাহার দাবি, “তাঁদের সংগঠনের ওই কলেজ ইউনিটের কোনও সদস্য ওই ঘটনায় যুক্ত নন। সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে কারা ওই কাজ করল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
কলেজ সূত্রে খবর, এখন ছাত্র সংসদের ক্ষমতায় কেউ নেই। গত বছর থেকে নির্বাচন হয়নি। তার আগে ক্ষমতায় ছিল এসএফআই। দিন কয়েক আগে সরস্বতী পুজোর কমিটি গড়ার জন্য অধ্যক্ষের সই করা বিজ্ঞপ্তি টাঙানো হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, অধ্যক্ষের উপস্থিতিতে ১৮ জানুয়ারি ৪৩ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে বৈঠক হয়। ১০ জন পড়ুয়াকে নিয়ে কমিটি গড়া হয়। তার পরেই প্রতিমার বায়না হয়। কিন্তু টিএমসিপি-র একাংশ বিজ্ঞপ্তির কথা মানতে চাননি। তাদের দাবি, ১৬ জানুয়ারি থেকে শনিবার পর্যন্ত পরীক্ষা চলায় ক্লাস হয়নি। সবাই বিজ্ঞপ্তির কথা জানতে পারেননি। অশোকনগরের টিএমসিপি-র প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ সিংহের নেতৃত্বে দুপুর ২টো থেকে ঘেরাও হয়। তাতে ‘বহিরাগত’ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরাও ছিলেন বলে খবর। সব ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বৈঠক করে নতুন কমিটির দাবি করেন প্রদীপ। সুধানাথবাবুর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনেছেন পুরপ্রধানও। তিনি বলেন, “অধ্যক্ষের নানা সিদ্ধান্তে ছাত্রছাত্রীরা বিপথে চালিত হচ্ছেন। যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের দাবি ন্যায্য। অধ্যক্ষ কাউকে কিছু না জানিয়ে কমিটি তৈরি করেছেন।” জেলা তৃণমূল সভাপতি বলেন, “ওই ঘটনায় আমাদের ছাত্র সংগঠনের কেউ যুক্ত নেই বলে জেনেছি। ঘেরাও তুলে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।”
ঘেরাওয়ের খবর পেয়ে সুধানাথবাবু বিধায়ককে সমস্যা মেটাতে অনুরোধ করেন। বিধায়ক ওই কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য। সুধানাথবাবু বলেন, “ছাত্র সংসদের কেউ ক্ষমতায় না-থাকায় সরস্বতী পুজোর কমিটি গড়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। নিয়ম মেনেই কমিটি গড়া হয়েছে।”
টিএমসিপি-র এই ‘আন্দোলন’-এর সমালোচনা করেছে ছাত্র পরিষদ এবং এসএফআই। দুই সংগঠনেরই বক্তব্য, এ ভাবে কলেজে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। |