ঘর থেকে বেরোলে চোখ ঝলসে যায় আলোয়। অথচ গ্রামের মানুষের প্রধান ভরসা সেই কুপিই। রাজ্যের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র এনটিপিসি-র ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র লাগোয়া ৫১টি গ্রাম এখনও বিদ্যুৎহীন।
তুলসীপুকুর গ্রামের শিক্ষক এনামুল হকের ক্ষোভ, “প্রায় আড়াইশো ঘর এই গ্রামে। পাশেই এনটিপিসি। কিন্তু আমরা লেই অন্ধকারে ডুবে। বহু বার এ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়েছে গ্রামে। রাজনীতির নেতাদের বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারের জন্য গ্রামে পর্যন্ত ঢুকতে দিইনি। কিন্তু বিদ্যুৎ আসেনি। আশপাশের কয়েকটি গ্রামে জেনারেটরে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা হলেও আমাদের গ্রামে অনেকেরই জেনারেটরের বিদ্যুৎ কেনার সামর্থ্য নেই। তাই সে ব্যবস্থাও হয়নি। কেরোসিন মেলাও ভার এলাকায়। তাই কুপিও সব সময়ে জ্বালানো যায় না।” তিনি জানান, ২০০ মিটার দূরে বাহাদুরপুর পঞ্চায়েতের জোরপুকুরিয়া, ইমামনগরের গোয়ালমারি, দামোদরপুরেও কয়েক মাস আগে বিদ্যুৎ এসেছে। ওই সব গ্রামে এর ফলে পড়াশোনার চল বেড়েছে। “বিদ্যুৎ এলে আমাদের গ্রামের ছাত্রছাত্রীদেরও উপকার হবে”, এখনও সেই আশাতেই বসে এনামুল সাহেবরা।
আমতলা, খোসালপুর, লাহারিয়া গ্রামে অবশ্য কষ্টেসৃষ্টে জেনারেটর চালিয়েই সন্ধের সময়টায় আলোর ব্যবস্থা করেছেন কয়েক জন যুবক। আমতলা হাইস্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অন্তত তিন হাজার। প্রাথমিকে ছাত্রসংখ্যা কমপক্ষে ৭০০। গ্রামে রয়েছে মাদ্রাসা, পাঠাগার। দু’পা এগোলেই ঝাড়খণ্ড। আমতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, “১৫ বছর আগে গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি পোতা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ আসেনি। অথচ ফরাক্কায় বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়া হয়েছে আমাদের জমিতেই।” তাঁর কথায়, “সামান্য গম ভাঙাতে ছুটতে হত ৬ মাইল দূরে। ঘরে ঘরে মোবাইল। তাতে চার্জ দিতে, ফুটবল-ক্রিকেট দেখতে হলেও ছুটতে হত পাশের গ্রামে। তাই গ্রামে জেনারেটর বসানো হয়েছে। তা থেকে অন্তত রাত্রি ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ মিলছে।”
কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক বলেন, “১৯৮৬ সালে ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র যখন চালু হয় তখন কথা ছিল কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটির নিদর্শন রেখে ফরাক্কা লাগোয়া ৮ কিলোমিটারের মধ্যে সব গ্রামে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে এনটিপিসি। কিন্তু সে দায়িত্ব পালন করেনি তারা। আর সেই কারণেই ফরাক্কা জুড়ে এত অন্ধকার।” সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ আবুল হাসনাৎ খান ফরাক্কার বাসিন্দা। তিনি বলেন, “রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন যোজনায় এ জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগের দায়িত্ব পেয়েছে এনটিপিসি। কিন্তু সে কাজেও তাদের একটা গা-ছাড়া ভাব। ফলে ফরাক্কার গ্রামগুলিই শুধু নয়, জেলার বিদ্যুদয়ন রয়েছে থমকে।”
ফরাক্কায় গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন কর্মসূচির নজরদারিতে আছে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি। সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের আব্দুল কাদের বলেন, “ফরাক্কায় ৭৩টি গ্রামের মধ্যে বিদ্যুৎ রয়েছে মাত্র ২২টি গ্রামে। এনটিপিসি খুঁটি পোঁতার কাজ শুরু করেছে কিছু গ্রামে। তাদের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে আমাদের। আশা করি বছর খানেকের মধ্যে রাজীব গাঁধী বিদ্যুদয়ন যোজনায় কাজ শেষ হবে।” এনটিপিসি-র বিদ্যুৎ সরবরাহ শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বিশ্বনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “ফরাক্কা ইউনিট চালুর পর সংলগ্ন গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শুরু হয়েছিল। কয়েকটি গ্রামে সংযোগ দেওয়াও হয়েছে। কিন্তু কিছু গ্রামে খুঁটি পুঁতে তার টাঙিয়ে কাজ শুরুর পরে খুঁটি চুরি হয়ে যায়। তাই কাজও থমকে যায়।” এখন মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়েই বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকাঠামো তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে এনটিপিসি। এই পর্বে ফরাক্কাকে অগ্রাধিকার দিয়েই কাজ হচ্ছে বলে দাবি বিশ্বনাথবাবুর।
আপাতত তাই অন্ধকারে ডুবে আলোরই অপেক্ষা। |
কনেযাত্রীদের বাসে লরির ধাক্কা, জখম ৩৫
নিজস্ব প্রতিবেদন |
প্রায় জনা পঞ্চাশ কন্যাযাত্রী নিয়ে রাজ্য সড়ক ধরে ছুটন্ত একটি বাসের সঙ্গে উল্টোদিক থেকে আসা সব্জি বোঝাই এক লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে গুরুতর জখম হয়েছেন অন্তত ৩৫ জন বাসযাত্রী। তাঁদের মধ্যে ৭ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কৃষ্ণনগর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শনিবার সন্ধে সাতটা নাগাদ করিমপুরের পাট্টাবুকা গ্রাম থেকে মুরুটিয়ায় যাচ্ছিল ওই বাসটি। বড় রাস্তায় ওঠার মুখে মুরুটিয়া-করিপুর রাজ্য সড়ক ধরে ছুটে আসা লরিটি সজোরে ধাক্কা মারে বাসে। স্থানীয় গ্রামবাসীরাই আহতদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। তাঁরাই ভ্যান রিকশা করে আহতদের করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। |