বাম জমানায় কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ্যে এল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার উচ্চশিক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির পরিদর্শনের জেরে। চলতি সপ্তাহে ওই কমিটি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে যায়। সেখানে তারা জানতে পারে, ২০১০ সালে তিনটি লেকচারার পদে নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগ তুলে এডুকেশন বিভাগের ‘ডিন’ শুভলক্ষ্মী নন্দী পদত্যাগ করেন। ওই নিয়োগ নিয়ে একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অলোক বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানান, কোনও বেনিয়ম হয়নি। তাঁর অভিযোগ, শুভলক্ষ্মীদেবীর পছন্দের প্রার্থী লেকচারার পদের প্যানেলভুক্ত না হওয়ায় তিনি বেনিয়মের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেছিলেন।
২০১০-এর ৯ মার্চ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন বিভাগে তিন জন লেকচারার বাছাই হয়। শুভলক্ষ্মীদেবী তখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে এডুকেশন বিভাগের ‘ডিন’ ছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, লেকচারার বাছাই প্রক্রিয়ায় বেনিয়ম হয়েছে। তারই ‘প্রতিবাদে’ তিনি এডুকেশন বিভাগের ‘ডিন’ পদে ইস্তফা দেন। ইস্তফাপত্রে তিনি লেখেনওই লেকচারার বাছাই প্রক্রিয়ায় ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই)-এর ২০০৯ সালের নিয়ম মানা হয়নি, কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের বাছা হয়েছে এবং এডুকেশন বিভাগের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রার্থী বাছা হয়নি। বিধানসভার উচ্চশিক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে এই সমস্ত তথ্য জানতে পেরেছে।
অলোকবাবু অবশ্য দাবি করেন, ওই লেকচারার নিয়োগে কোনও বেনিয়ম হয়নি। তাঁর কথায়, “এডুকেশন বিভাগের তৎকালীন ডিনের নিজের পছন্দের এক প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু তিনি ওই লেকচারার পদে চাকরি পাননি। তাই ওই ডিন ক্ষুব্ধ হয়ে প্রার্থী বাছাইয়ে বেনিয়মের অভিযোগ তোলেন এবং পদত্যাগ করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলাও হয়। সে মামলা এখনও চলছে।” অলোকবাবু জানান, ওই তিন লেকচারার পদে আবেদনের শর্ত ছিলপ্রার্থীর এডুকেশনে এম এ ডিগ্রি এবং সেখানে অন্তত ৫৫% নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি, তাঁর বিজ্ঞান, কলা বা বাণিজ্য শাখার কোনও একটি বিষয়ে ডিগ্রি থাকলে ভাল। অলোকবাবু বলেন, “এডুকেশন বিভাগ বিজ্ঞান, কলা এবং বাণিজ্যএই তিন শাখার প্রতিটি থেকে এক জন করে এমন প্রার্থী নিতে চেয়েছিল, যাঁদের প্রত্যেকের এডুকেশনে এমএ ডিগ্রি এবং সেখানে অন্তত ৫৫ শতাংশ নম্বর আছে। একটি সংরক্ষিত পদে বাণিজ্য শাখার এক জন প্রার্থী প্যানেলভুক্ত হন। আবার এডুকেশনের তৎকালীন ডিনের পছন্দসই প্রার্থীও ছিলেন বাণিজ্য শাখার। ডিন চেয়েছিলেন, তাঁকে নেওয়া হোক। কিন্তু বাছাই কমিটি বলে, বাণিজ্য শাখার এক জন প্রার্থী সংরক্ষিত পদে প্যানেলভুক্ত হয়েছেন। বাণিজ্য শাখা থেকে প্রার্থী নেওয়ার প্রয়োজন নেই। বাকি দুই পদে বিজ্ঞান এবং কলা শাখার প্রার্থীই নিতে হবে। বাছাই কমিটিতে আচার্যের মনোনীত প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের তিন জন বিশেষজ্ঞ ছিলেন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে বিধানসভার উচ্চশিক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি আরও জেনেছে, সেখানে ‘ইউনিভার্সিটি ইনস্ট্রুমেন্টেশন সেন্টার’ ছিল। সেটিকে ইউজিসি-র নিয়ম মেনে ‘শিক্ষা বিভাগ’-এ পরিণত করা হয়েছে। অথচ, সেখানকার দু’জন অফিসারকে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অলোকবাবু অবশ্য বলেন, “নিশ্চয়ই ওঁদের শিক্ষক হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। এই মর্মে বিশ্ববিদ্যালয়ের গৃহীত সিদ্ধান্ত সরকারকে চিঠি লিখে জানানো হয়েছে। সরকারের সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষায় আছি।” |