শততম সেঞ্চুরির চাপ তাঁর উপর এতটাই যে, ডিফেন্সিভ ব্যাটিং করতে গিয়ে দিতে হচ্ছে উইকেট। চলতি সিরিজে ছ’টা ইনিংস হয়ে গেল, তবু মহাকীর্তি অধরা এখনও। কিন্তু তাতে কী? এ বার ডনের শহর। এবং অ্যাডিলেড টেস্টের আগে সচিন তেন্ডুলকর এতটাই তেতে যে একটা কেন, তাঁর ব্যাট থেকে একাধিক সেঞ্চুরি এলেও টিমমেটরা খুব অবাক হবেন না! “সচিন এতটাই তেতে আছে যে শুধু সেঞ্চুরি করে থেমে থাকবে বলে মনে হয় না। এক বার যদি ও সেঞ্চুরিটা পেয়ে যায়, তা হলে বড় রান করে ফেলবে। সম্ভবত ডাবল সেঞ্চুরি,” শেষ টেস্টের আগে লিটল মাস্টারের যুদ্ধের প্রস্তুতি দেখে বলেছেন জাতীয় দলে তাঁর এক সতীর্থ। অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপকে যখন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে, সচিনের অবস্থা সে তুলনায় মন্দের ভাল। আপাতত তিন টেস্টের ছ’টা ইনিংসে তাঁর মোট রান ২৪৯। গড় ৪১.৫০। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, তত প্রত্যাশা বাড়ছে শততম সেঞ্চুরি নিয়ে। আর ভারতীয় মহাতারকা নিজেও বুঝতে পারছেন যে, মাঝে-মাঝেই রান থেকে তিনি হারিয়ে যাচ্ছেন কেন? এবং সেটা ঘটছে ইনিংসের মাঝপথেই। সিডনি টেস্টকে ধরা যাক। সচিন প্রথম ২০ রান করতে বল নেন ২৪। কিন্তু পরের ২১ তুলতে লেগে যায় ৬৫ বল! সিডনিতেই দ্বিতীয় ইনিংসে আবার প্রথম ৮ রান করতে নিয়ে ফেলেন ৪২ বল। কিন্তু ‘গিয়ার’ পাল্টে পরের ৪২ আসে মাত্র ৪৮ বলে। আর শেষ ২০ রান তুলতে নিয়ে ফেলেন ফের ৪৩ বল।
কেন হচ্ছে এ জিনিস? কখনও দেখা যাচ্ছে উল্টো দিকে উইকেট পড়লে সচিন গুটিয়ে যাচ্ছেন। কখনও আবার সেশনের শেষ পর্বে চলে এলে তাঁর ব্যাট কথা বলছে না। সচিন ঠিক করে ফেলেছেন, এ সব চাপের বোঝা নিয়ে নামবেন না অ্যাডিলেডে। ব্র্যাডম্যানের আঁতুড়ঘরে ব্যাট করতে নামবেন খোলা মেজাজে। আর ডনের শহরে শেষ সফরেও তাঁর সেঞ্চুরি আছে। এর চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আর কী হতে পারে?
|
পরিসংখ্যান যদি সচিনকে আশ্বস্ত করে, তা হলে ওই পরিসংখ্যানই আবার চিন্তায় রাখবে আর এক জনকে। তিনি বীরেন্দ্র সহবাগ। গত ২৫ টেস্টে যা হয়নি, সেটাই মঙ্গলবার থেকে অ্যাডিলেডে ঘটতে চলেছে। ৫০-এর কম গড় নিয়ে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে নামবেন সহবাগ। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যেই কথাবার্তা চালাচালি শুরু হয়ে গিয়েছে যে, দেশের বাইরে সহবাগ মানেই ভারতের ভোগান্তি অনিবার্য। শেষ চার বছরে বিদেশে সহবাগের অবস্থা শোচনীয়। নিউজিল্যান্ড হোক কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা সহবাগের গড় কোথাওই তিরিশ ছোঁয়নি। আরও দেখা যাচ্ছে, বল সুইং করতে শুরু করলেই ভাল রকম ঝামেলায় পড়ে যাচ্ছেন তিনি। “ও বলের লাইনে গিয়েও চালাতে পারছে না কারণ বলটা সিম অথবা সুইং করছে,” বলেছেন জিওফ লসন। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ফাস্ট বোলার সঙ্গে যোগ করেছেন, “আশির দশকের ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসারদের মতো হালের অস্ট্রেলীয় পেসাররাও আপনাকে খুব বেশি সুযোগ দেবে না মারার। সহবাগের খেলার ধরনটা লো-বাউন্সড পিচে কাজ দেয়। কিন্তু বল মুভ করতে শুরু করলে ও যে কী অসুবিধায় পড়ে, সেটা তো দেখাই যাচ্ছে।”
একে তো নিজে জঘন্য ফর্মে। তার উপর অ্যাডিলেডে ধোনি না থাকায় অধিনায়কত্বও সামলাতে হবে সহবাগকে। আর এই দুরবস্থার মধ্যে দিল্লির সতীর্থকে কিছু ভরসা দিচ্ছেন গৌতম গম্ভীর। যিনি জানিয়ে রাখছেন, অ্যাডিলেডে অধিনায়ক সহবাগের কাছে অলৌকিক কিছু প্রত্যাশা করাটা অন্যায় হবে। বলেছেন, “এক জন অধিনায়ক ততটাই ভাল, যতটা ভাল তার টিম। অধিনায়ক নয়, মাঠের এগারো জন ক্রিকেটার তফাতটা গড়ে দেয়।” |