নয়াদিল্লি-ঢাকা ‘রাজনৈতিক মেলবন্ধন’ আরও জোরদার করতে বাণিজ্য সম্পর্ককেও প্রসারিত করতে চায় ভারত। চায় আরও বেশি করে বাংলাদেশি পণ্য আমদানি করতে। আজ সীমান্তের কাঁটাতারের সামনে দাঁড়িয়ে, বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে পাশে নিয়ে এ কথাই ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়।
ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত বাণিজ্যে গতি বাড়াতে অভিন্ন ‘কার পাশ’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আজ দুপুরে কলকাতা থেকে হেলিকপ্টারে পেট্রাপোলে উপস্থিত প্রণববাবু। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্র ফাঁস হওয়ার পরে বাংলাদেশের অন্দরমহল যখন অস্থির, তখন আজকের এই অনুষ্ঠান যথেষ্ট বার্তাবহ। মনমোহন সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে, অগণতান্ত্রিক ভাবে সরানোর চেষ্টা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশেই থাকবে দিল্লি। আর তার ঠিক পরের দিন আজ বাণিজ্য ক্ষেত্রেও বাংলাদেশকে একই ভাবে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিলেন প্রণববাবু। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্যে ভারত যে অনেকটাই এগিয়ে পরিসংখ্যান দিয়ে তা স্বীকার করে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি এ কথাও জানিয়েছেন, ভারত চায় এই পরিস্থিতি বদলাক। প্রণববাবুর কথায়, “বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যে বৈষম্য রয়েছে। ঢাকায় অনেক বেশি রফতানি করি আমরা। আমদানি হয় কম। এই পেট্রোপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়েই গত আর্থিক বছরে ভারত ৮০৮৫ কোটি টাকার পণ্য রফতানি করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আমরা আমদানি করেছি মাত্র ১২৬৭ কোটি টাকার জিনিস।” |
সীমান্তে এই ‘কার পাশ’ ব্যবস্থা চালু হওয়ায় দু’দেশের পণ্যবাহী ট্রাকের সীমান্ত পেরিয়ে ভিতরে যাতায়াত অনেক সহজ হবে। সুবিধা হবে মাল খালাসেও। সময় অনেক কম লাগায় জিনিস নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও কমবে। বেআইনি ভাবে মালপত্র নিয়ে যাওয়া বা অনুপ্রবেশের মতো সমস্যাও কমবে। স্বাভাবিক ভাবেই এর ফলে দু’দেশই উপকৃত হবে। নয়াদিল্লি যে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছে, সে কথাও আজ বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরেছেন প্রণববাবু। বলেছেন, “গত নভেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সিদ্ধান্ত নেন, অনেক পণ্যই বিনাশুল্কে ভারতীয় বাজারে পাঠাতে পারবে বাংলাদেশ। এর ফলে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতি অবশ্যই চাঙ্গা হবে।”
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীও আজ দরাজ ভাবে জানিয়েছেন, সব রকম প্রয়োজনেই ভারতকে পাশে পাওয়া যাচ্ছে। তাঁর কথায়, “আমরা ভারতের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সব রকমের সহায়তা পাচ্ছি। শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক ভারত সফরে সর্ম্পকের ক্ষেত্রে যে নতুন দিগন্ত রচিত হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ঢাকা সফর তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে।”
ভারতীয় কূটনীতিকদের মতে, সব কিছুর পরেও তিস্তা থেকে টিপাইমুখ, দু’দেশের মধ্যে মতবিরোধ এবং শৈত্যের জায়গাগুলি রয়েছেই। কিন্তু তার মধ্যেই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে দু’দেশ। শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক আগরতলা সফরে তৈরি হওয়া আবেগ এবং অসম রাইফেলস-এর ময়দানে গণসম্বর্ধনার ইতিবাচক কূটনৈতিক রেশ ধরেই আজকের এই সীমান্ত-মৈত্রী। মনে করা হচ্ছে, বরফ গলাতে এই পরিমণ্ডল কিছুটা উষ্ণতা জোগাবে। কাঁটাতারের দু’পাশের প্রতীক্ষারত সারিবদ্ধ মানুষের উজ্জ্বল মুখগুলিও সেই কথাই বলছে।
শুধু আম জনতাই নন। দৃশ্যতই অভিভূত দু’দেশের অর্থমন্ত্রীও। প্রণববাবুর বক্তব্য, “আমি পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। অন্তত দু’শো বার বনগাঁ এসেছি। কিন্তু কখনও পেট্রাপোল সীমান্তে আসা হয়নি। এক দিকে ভালই হয়েছে, কেন না আজ এই স্মরণীয় দিনে প্রথম এলাম।” আর আব্দুল মুহিতের কথায়,“প্রায় ষাট বছর পর আবার স্থলপথে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করলাম। ছাত্রাবস্থায় করেছিলাম। তার পর এই আজ।”
বাণিজ্য-যোগাযোগের এই নতুন পদক্ষেপ, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রতীক হয়ে উঠবে, আপাতত এমনটাই আশা করছে মনমোহন সরকার। |