ক্ষমতা থেকে বাংলাদেশের অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শেখ হাসিনাকে সরানোর চেষ্টা হলে, তাঁকে সব রকম সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। বাংলাদেশ সরকারকেও সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে।
ভারত মনে করছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত কালের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের আসল লক্ষ্য ছিল নয়াদিল্লি। হাসিনা সরকার আসার পর থেকেই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে মৈত্রীর পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তাকে ভেস্তে দেওয়াটাই এই সেনা অভ্যুত্থানের লক্ষ্য। দু’দেশের গোয়েন্দারাই রিপোর্ট দিয়েছেন, এই লক্ষ্যে হিজবুত তাহরির, জামাতে ইসলামি ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি একজোট হয়ে কাজ করছে। গোটা ঘটনার মাথা হিসেবে উঠে আসছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের নামও।
এর আগেও ভারত-বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে তারেকের নাম উঠে এসেছে। অভিযোগ, ২০০৪ সালে আলফাকে অস্ত্র জোগানোর পরিকল্পনার পিছনেও খালেদা-পুত্র ছিলেন। চট্টগ্রামে ওই ঘটনার পরেই শেখ হাসিনার উপরে গ্রেনেড হামলা হয়। সেই ঘটনার সঙ্গেও তারেকের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ভারত মনে করছে, এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কারণ গোয়েন্দা সূত্রে খবর, গত সাত-আট মাস ধরেই এই চক্রান্ত চলছে। গত নভেম্বর মাসেই হাসিনাকে উৎখাতের একটি ষড়যন্ত্র হয়। সেনাবাহিনীর কিছু মাঝারি স্তরের অফিসার সেই সময়ে সেনা অভ্যুত্থানের ছক কষেছিল। কিন্তু শুরুতেই তাদের চক্রান্ত ফাঁস হয়ে যায়। তার পর থেকেই নজরদারি জোরদার করে সেনা-গোয়েন্দারা, যার ফলশ্রুতিতে এ বারের চক্রান্তটি ধরে ফেলা সম্ভব হয়। ভারত সরকারের এক প্রবীণ মন্ত্রীর কথায়, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪০ বছর। তার পরে তার অর্ধেক সময়ই কেটেছে সেনাশাসনে। ও দেশে সেনা অভ্যুত্থানের আশঙ্কা তাই সব সময়েই থেকে যায়।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, বিএনপি-জামাত জমানায় বিশেষ উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীতে বেশ কিছু কট্টর মৌলবাদীকেও নিয়োগ করা হয়েছিল। এখনও বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে মাঝারি স্তরের অফিসারদের মগজ ধোলাইদের চেষ্টা চলছে। ইস্তাহার প্রচার করে বলা হচ্ছে, ‘বাংলাদেশ যাতে আর একটা সিকিম না হয়ে যায়, তার জন্য সেনাবাহিনী থেকে ভারতপন্থী অফিসারদের সরাতে হবে।’ পরিস্থিতি সামলাতে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই গোয়েন্দা-তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে র্যাব ও পুলিশ নিষিদ্ধ সংগঠন ‘হিজবুত তাহরির’-এর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। বেশ কিছু হিজবুত-সদস্যকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
কালই শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছিলেন, বিএনপি-ও এই চক্রান্তের পিছনে রয়েছে। সে অভিযোগ অবশ্য আজ অস্বীকার করেছে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলটি। দলের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, তাঁরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই সরকার পরিবর্তনে বিশ্বাসী। দলের নেত্রী খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে তিন বার দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই শেখ হাসিনার মন্তব্য অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু প্রাক্তন সেনাপ্রধান হারুন-অল-রশিদ মনে করছেন, “মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী নেতাদের বিচার শুরু হওয়ায় এই ধরনের ষড়যন্ত্র ফের হবে।” বিএনপি-র পাল্টা যুক্তি,তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমানও মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সারির নেতা ছিলেন। তাঁদের দলেও বহু প্রথম সারির মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। তাই এই চক্রান্তে তাঁদের নাম জড়ানো ঠিক নয়।
বাংলাদেশের আঁচ যাতে এ দেশে এসে না পড়ে, গোয়েন্দাদের তার জন্য পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে বলা হয়েছে। একই ভাবে বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন সেনা-ঘাঁটিগুলিকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। গত কালের সেনা-অভ্যুত্থান ভেস্তে দেওয়ার পিছনে ভারতের তরফ থেকেও গোয়েন্দা তথ্য ছিল। পশ্চিমবঙ্গ-সহ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে কেন্দ্র।
গোয়েন্দাদের কথায়, বাংলাদেশের বাইরেও হিজবুত তাহরিরের একটি সংগঠন রয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ওই সংগঠনে তারেক জিয়ার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশে হিজবুতের প্রকাশ্য সংগঠন ‘ব্রাদার অফ ইসলাম’ও জামাতে ইসলামি ও বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করছে। তারা প্রচার করছে, টিপাইমুখ প্রকল্প গড়ে বা তিস্তা চুক্তি না-করে ভারত বাংলাদেশকে বঞ্চিত করে চলেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা তা মাথা নিচু করে মেনে নিচ্ছেন। ভারতের বিরুদ্ধে চলছে ধর্মীয় উস্কানিমূলক প্রচারও। গত কালও চট্টগ্রামের একটি মসজিদে জড়ো হয়ে হিজবুত-সদস্যরা উস্কানিমূলক লিফলেট বিলি করছিল। তাদের কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকার উত্তরায় আজ গোপন বৈঠক করার সময় হিজবুতের পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব। সেখান থেকেই উস্কানিমূলক লিফলেট উদ্ধার হয়েছে। রাজশাহি থেকেও এক জনকে আটক করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই ২০০৯-এর ফেব্রুয়ারি মাসে বিডিআর বিদ্রোহ হয়। তার পরে এ বার চক্রান্তে সেনাদেরই একটি অংশ। বারবার এই ঘটনায় চিন্তায় রয়েছে ভারত। কারণ সাধারণ নির্বাচনের এখনও অনেক দেরি। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক প্রকল্প প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। ঢাকাকে একশো কোটি ডলার ঋণ দেওয়া হয়েছে। তিস্তা নিয়ে জট ছাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য পরিবহণ চালু করার চেষ্টাও চলছে।
শেখ হাসিনা সদ্য ত্রিপুরায় ঘুরে গিয়েছেন। শনিবার পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তে আরও একটি আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ হতে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে হাসিনা সরকারের কর্তৃত্ব যাতে কোনও ভাবেই দুর্বল না হয়ে যায়, তার জন্য স্পষ্ট ও কড়া অবস্থান নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
|
(ঢাকা থেকে সহ-প্রতিবেদন: কুদ্দুস আফ্রাদ) |
সরাব না পাশা ও কিয়ানিকে, জানাল সরকার
সংবাদসংস্থা • ইসলামাবাদ |
সেনাপ্রধান আশফাক কিয়ানি এবং আইএসআই প্রধান সুজা পাশাকে সরানোর পরিকল্পনাই নেই গিলানি সরকারের। শুক্রবার আদালতকে এ কথা জানিয়ে দিলেন পাক অ্যাটর্নি জেনারেল। সেনাপ্রধানদের বিরুদ্ধে সরকারকে কোনও চূড়ান্ত পদক্ষেপ না করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আদালতে একটি আবেদন জমা পড়ে। সেই প্রসঙ্গেই আজ এ কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। সম্প্রতি মেমো কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে একটি বিতর্কিত হলফনামা জমা দেওয়ার ফলে প্রতিরক্ষা সচিব নঈম লোদিকে বরখাস্ত করেন গিলানি। সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যান লোদি। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে দু’সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে জবাব দিতে হবে। সেনা বা সরকারের কাছ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস না পেয়ে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রেখেছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মুশারফ। |