অভাবের তাড়নায় হেঁসেল ছেড়ে উদয়াস্ত ট্রেনের কামরা সাফাইয়ের চাকরি নিতে হয়েছে যাঁকে, সেই বিধবা মহিলাই ২৩ লক্ষ টাকা ভর্তি ব্যাগ পেয়ে হেলায় তা তুলে দিলেন রেলকর্তাদের হাতে। সীমা রাই নামে ওই সাফাইকর্মীর সততার প্রশংসা তাই শোনা যাচ্ছে রেলকর্তাদের মুখে। আর সীমাদেবীর কথায়, “সংসারে যত অভাবই থাকুক, আমি কোনও পাপ করতে পারব না। সারা জীবন না হয় লড়াই করব!”
বৃহস্পতিবার সকালে মালদহ স্টেশনের অদূরে ক্যারেজ ওয়াগন শেডে গৌড় এক্সপ্রেস সাফাই করার সময় প্রথম
|
সীমা রাই।
ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায় |
শ্রেণির বাতানুকূল কামরার একটি ক্যুপ থেকে ওই ব্যাগটি পান সীমাদেবী। মালদহের ডিআরএম রবীন্দ্র গুপ্ত বলেন, “আমার ডিভিশনের এক জন সাফাইকর্মী যে দৃষ্টান্তমূলক সততা দেখিয়েছেন, তাতে আমাদের সকলের মাথা উঁচু হয়ে গিয়েছে। আমি গর্বিত। সততার জন্য সীমাদেবীকে পুরস্কৃত করা হবে।” বর্তমানে ওই টাকা মালদহ রেল পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। রেল পুলিশের আইসি সুজিত ঘোষ জানান, রাত পর্যন্ত কোনও যাত্রী ওই টাকা দাবি করেননি। যে ক্যুপে ব্যাগটি মিলেছে, সেটির চার যাত্রীর নাম-ঠিকানায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে পুলিশ।
রেল সূত্রের খবর, বেলা ১১টা নাগাদ মালদহ টাউন স্টেশন লাগোয়া ক্যারেজ ওয়াগন শেডে গৌড় এক্সপ্রেস সাফাই করতে যান সীমাদেবী। তিনি ‘এ’ কেবিনের লোয়ার বার্থের নীচে একটি ব্যাগ দেখতে পান। ব্যাগটি খুলতেই দেখেন থরে থরে সাজানো হাজার, পাঁচশোর নোট। তিনি ব্যাগ নিয়ে কোচ অ্যাটেনডেন্ট কালু মহম্মদকে ডাকেন। অন্য রেলকর্মীরাও যান। পুলিশে খবর দেওয়া হয়। মধ্য চল্লিশের সীমাদেবীর স্বামী মতিলালবাবু রেলকর্মী ছিলেন। ২০০৭ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে জমানো সব টাকা ফুরিয়ে যায়। ২০০৯ সালে সাফাইকর্মী হিসাবে সীমাদেবী কাজ পান। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। দুই ছেলে নাবালক। নিজের বাড়ি নেই। দিদির বাড়িতে দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন। হাতের কাছে থরে থরে সাজানো টাকা পেয়ে তাঁর কী মনে হয়েছিল? সীমাদেবীর কথায়, “একসঙ্গে অতগুলো টাকা দেখে ঘাবড়েই গিয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গেই সুপারভাইজার-অফিসারদের খবর দিই। অভাব রয়েছে বলে অন্যের টাকা নিতে পারব না। ওটা পাপ।”
সীমাদেবী এমনই। ওই ক্যারেজ ওয়াগন শেডের দায়িত্বপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার তুষারকান্তি মাইতি বলেন, “দু’বছর ধরে ওই মহিলা আমাদের এখানে কাজ করছেন। অসম্ভব সৎ উনি। ওঁর জন্য আমরাও গর্বিত।” কলকাতা থেকে মালদহে পৌঁছনো ট্রেনটির বাতানুকূল প্রথম শ্রেণির কামরার ওই ক্যুপে বুধবার রাতে শিয়ালদহ থেকে ৪ জন উঠেছিলেন। ওই কেবিনের ১ নম্বর সিট ছিল ৩৪ বছরের এম রহমানের। ২ নম্বর সিট ৪০ বছরের এম আলির। ওই কেবিনেরই ৩ নম্বর সিটে ছিলেন ৫১ বছরের জন আরনেস্ট নামে এক বিদেশি। আর চতুর্থ আসনে ৩৭ বছরের চন্দ্রকান্ত কে। ওই কামরার টিকিট পরীক্ষক বিনয়ভূষণ কবিশেখর বলেন, “৩ ও ৪ নম্বর সিটের যাত্রী বুধবার সকালে ফরাক্কায় নেমে যান। ১ ও ২ নম্বর সিটের যাত্রী মালদহে নামেন। চার জন যাত্রীর মধ্যে কে ওই ব্যাগটি নিয়ে উঠেছিলেন, তা বলতে পারব না।” |