সমীক্ষা স্বাস্থ্য দফতরের
সম্পন্ন হাতে বিপিএল কার্ড, সরকারি চিকিৎসা বেদখল
নিজেদের পরিচিতির জোরে, প্রভাব খাটিয়ে বিপিএল কার্ড জোগাড় করে ফেলছেন আর্থিক ভাবে সক্ষম শ্রেণির একাংশ। এবং সেই কার্ডের জোরেই প্রকৃত গরিবদের বঞ্চিত করে দখল করছেন সরকারি হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধার সিংহভাগ। স্বাস্থ্য দফতরের সমীক্ষাতেই সম্প্রতি এই তথ্য উঠে এসেছে।
ডায়মন্ডহারবার হাসপাতালে বিপিএল কার্ড দেখিয়ে বৃদ্ধা মাকে ভর্তি করতে এসেছিলেন এক ভদ্রলোক। খোঁজখবর নিয়ে সুপার জানতে পারলেন, ভদ্রলোক সরকারি অফিসে গ্রুপ ডি পদে চাকরি করেন। তা হলে বিপিএল হলেন কী করে? জেরার মুখে ভদ্রলোক স্বীকার করলেন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকে ধরে বিপিএল সার্টিফিকেট বার করেছেন তিনি।
কিছু দিন আগে হাওড়া জেলা হাসপাতালেও একই ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “বুঝতে পারছিলাম, মহিলা দারিদ্রসীমার নীচের মানুষ নন। কিন্তু তাঁর হাতে বৈধ বিপিএল সার্টিফিকেট। ফলে ফ্রি বেড খালি থাকলে দিতে আমরা বাধ্য।” সিউড়ি হাসপাতালের কর্তারা জানাচ্ছেন, দিন কয়েক আগেই সম্পন্ন চেহারার এক ভদ্রলোক বিপিএল কার্ড হাতে তাঁর মেয়েকে ফ্রি বেডে ভর্তি করতে এলেন। হাসপাতাল কর্তারা চ্যালেঞ্জ জানালে ভদ্রলোক বললেন, “আমার কাছে বৈধ বিপিএল কার্ড আছে। আমাদের ফ্রি বেড দিতে হবে।”
জেলা হাসপাতাল, স্টেট জেনারেল ও মহকুমা হাসপাতাল মিলিয়ে রাজ্যের মোট ৮১টি হাসপাতালে সম্প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। সমীক্ষার রিপোর্টই বলছে, সরকারি হাসপাতালে যে সুযোগসুবিধা দারিদ্রসীমার নীচে থাকা মানুষের পাওয়া উচিত, তার অনেকটাই ‘রেফারেন্স’-এর দৌলতে পাওয়া বিপিএল কার্ডের জোরে ছিনিয়ে নিচ্ছেন আর্থিক ভাবে সম্পন্ন শ্রেণির একাংশ। তাঁদের জন্য প্রকৃত গরিবেরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ হারাচ্ছেন। হাসপাতাল থেকে গরিবদের ফেরানোর ঘটনা এবং বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বাড়ছে।
ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, জেলা স্তরের সরকারি হাসপাতালে আউটডোরে দেখাতে আসা সম্পন্ন রোগীদের মধ্যে প্রায় ৪৬ শতাংশের বৈধ বিপিএল কার্ড রয়েছে! আউটডোরে ভর্তি হওয়া সম্পন্ন শ্রেণির রোগীদের ৫১ শতাংশ বিপিএল কার্ডের অধিকারী। অথচ, আউটডোরে আসা প্রকৃত দরিদ্র রোগীদের প্রায় ৩৮ শতাংশ ওই কার্ড জোগাড় করতে পারেননি। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এমন গরিব রোগীদের ৩২ শতাংশের কাছে বিপিএল কার্ড নেই, ফলে এঁরা ফ্রি বেড ও নিখরচায় ডাক্তারি পরীক্ষার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা স্টেট জেনারেল হাসপাতালগুলির। সেখানে ইনডোরের ৮০ শতাংশই শয্যাই সম্পন্ন শ্রেণির দখলে।
প্রশ্ন হল বিপিএল কার্ডধারীদের মধ্যে কারা দারিদ্রসীমার উপরে থাকা লোক, সেটি সমীক্ষকেরা বুঝছেন কী করে? অর্থনীতির শিক্ষিকা-সমীক্ষক অরিজিতা দত্ত ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কার্ডধারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁদের পরিবারের মাসিক খরচ কত এবং পরিবারে ক’জন সদস্য। মোট খরচকে পরিবারের সদস্যসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে প্রতি সদস্যপিছু মাসিক খরচ বার হয়। অর্থনীতির হিসাবে শহরাঞ্চলে (যেহেতু জেলাস্তরের ৮১টি হাসপাতাল শহরাঞ্চলেই পড়ছে) এই খরচ ৪৫০ টাকার কম হলে ধরে নিতে হবে পরিবারটি দারিদ্রসীমার নীচে রয়েছে। ৪৫০-এর বেশি হলে ধরা হবে পরিবারটির অবস্থান দারিদ্রসীমার উপরে।
বিপিএল কার্ড থাকলে সরকারি হাসপাতালে ফ্রি বেড, নিখরচায় ওষুধ শুধু নয়, আরও নানা সুবিধা পাওয়ার কথা। তার মধ্যে জননী সুরক্ষা যোজনার টাকা থেকে শুরু করে রেশনে কম দামে চাল-ডাল, সরকারি বৃত্তি, কম পয়সায় আবাসন, সরকারি চাকরির সুবিধা সবই রয়েছে। যদিও অরিজিতা জানান, এমনিতেই অনেকে কথা বলতে রাজি হচ্ছিলেন না। ফলে অন্য সুবিধাগুলির ব্যাপারে তাঁদের আর কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি। তবে বিপিএল কার্ড জোগাড় করে স্বচ্ছলদের অনেকে যে অনেক সুবিধাই জুটিয়ে নিচ্ছেন, তা মেনে নিয়েছেন সদ্য দায়িত্ব নেওয়া পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
সুব্রতবাবু বলেন, “অসংখ্য ভুলভাল নাম বিপিএল তালিকায় ঢোকানো আছে। মূলত স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাই এর জন্য দায়ী। এর ফলে হাসপাতাল থেকে শুরু করে চাকরি-রেশন-পড়াশোনার অনেক সুবিধাই আর্থিক ভাবে সম্পন্নরা অন্যায় ভাবে পেয়ে যাচ্ছেন।” তিনি আরও জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের হিসাবে জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ বিপিএল-ভুক্ত হওয়ার কথা, আর রাজ্যের হিসেবে অনুপাতটা ৪৮ শতাংশ। হিসেবের এই পার্থক্যের জন্য জটিলতা আরও বাড়ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.