ওই শিশুদের চিকিৎসা করারই সুযোগ মেলেনি, বললেন মমতা
মালদহ সদর হাসপাতালে ৪৮ ঘণ্টায় ১৫টি শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা গাফিলতির অভিযোগ উড়িয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অবশ্য এ দিন ৭টি শিশু মারা গিয়েছে বলে দাবি করেন। মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, শিশুগুলি এমন অবস্থায় হাসপাতালে এসেছিল যে তাদের চিকিৎসার কোনও সুযোগই পাওয়া যায়নি। এ দিন নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের পঞ্চায়েতি-রাজ সম্মেলনে মালদহে শিশুমৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দু’টি শিশুকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। বাকি শিশুগুলিও অপুষ্ট ও কম ওজনের ছিল। তাদের চিকিৎসার কোনও সুযোগ ছিল না।”
মালদহ হাসপাতালে একাধিক বার শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেছেন, “খবরের কাগজে যত দূর দেখেছি, এই সরকার আসার পরে বার পাঁচেক মালদহ হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটেছে।” কেন বার বার ওই হাসপাতালে এমনটা ঘটছে, সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, মালদহে এখনও গড়ে প্রায় ৮ হাজার প্রসূতি বাড়িতেই প্রসব করেন এবং তাতেই ওই জেলায় শিশুমৃত্যু ঘটছে। প্রসূতিরা ঠিক মতো খাবার পান না। ফলে ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের অপুষ্ট বাচ্চা জন্মায়। আর সেই শিশুরা মারা যায়।
সাম্প্রতিক শিশুমৃত্যু নিয়ে হাসপাতালের গাফিলতির অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী উড়িয়ে দিলেও এ দিন মালদহের ওই হাসপাতালে গিয়ে অভিভাবকদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন স্বাস্থ্য দফতরের টাস্ক ফোর্সের দুই কর্তা। ঘটনাচক্রে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল এই ১২ ঘন্টায় ওই হাসপাতালে আরও ৪টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আর তা নিয়ে অভিভাবকদের ক্ষোভ চরমে উঠেছে। তিন তলার শিশু বিভাগে টাস্ক ফোর্সের তদন্তকারীরা মৃত শিশুদের আত্মীয়দের মুখোমুখি পড়ে যান। শুরু হয় বিক্ষোভ।
অভিভাবকদের কেউ অভিযোগ করেন, রাতে ছেলেকে ভর্তি করলেও সকাল পর্যন্ত কোনও ডাক্তার তাদের দেখতে যাননি। কারও অভিযোগ, ২৪ ঘণ্টায় এক বার ডাক্তার দেখতে আসছেন। কেউ বলেছেন, কয়েক জন ডাক্তার হাসপাতাল ছেড়ে চেম্বারে রোগী দেখছেন। তাঁরা হাসপাতালে সামান্য সময় দেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন ঝরিয়াত, মালদহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস ভট্টাচার্য-সহ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক কর্তা সেই সময় তদন্তকারীদের সঙ্গেই ছিলেন। ক্ষোভ সামাল দিতে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা বলে টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যত্র চলে যান।
মুখ্যমন্ত্রীর কথার সঙ্গেই সঙ্গতি রেখে তদন্তকারী ত্রিদিববাবু বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছে, কম ওজন, শ্বাস কষ্ট, নিউমোনিয়ায় শিশুগুলি মারা গিয়েছে। তাদের কোনও ভাবেই বাঁচানো যেত না। এর পিছনে কারও গাফিলতি নেই বলেই আমাদের প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছে।” তা হলে অভিভাবকদের এই ক্ষোভের কারণ কি? ত্রিদিববাবু বলেন, “মানুষ যখন অসুস্থ হয়, তখন তাদের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। শিশুদের পরিবারের অভিযোগের এক মাত্র সমাধান, চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো। সেটা দেখা হচ্ছে। ওয়ার্ড বাড়ানোর চেষ্টাও করা হচ্ছে।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে হঠাৎই উত্তেজিত হয়ে ত্রিদিববাবু বলেন, “এখন শিশু মৃত্যু নিয়ে কেন এত হইচই হচ্ছে? আগে অনেক শিশু মারা গেলেও মিডিয়া এত হইচই করত না।” এর পর তিনি বলতে শুরু করেন, “৩৪ বছরে রাজ্যে ক’টা মেডিক্যাল কলেজ হয়েছে? কোথায় কত ডাক্তারের ট্রেনিং হয়েছে? ৭ মাস হল নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। সরকারের কাছে কি জাদুকাঠি আছে নাকি? রাতারাতি সব কাজ হয়ে যাবে? এক জন অসাধারণ নেত্রী ৬ মাসে অসাধারণ কাজ করছেন।”
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সমালোচনা করে ত্রিদিববাবু বলেন, “আগের মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ৩০ সেকেন্ড সময় দিতেন না। অথচ বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে এসএমএস করলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি উত্তর দেন।” শিশু মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে এসে টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান এ ভাবে দলীয় প্রচারের আদলে কথা বলতে শুরু করায় হকচকিয়ে যান সেখানে উপস্থিত জেলা স্বাস্থ্যকর্তারাও।
স্বাস্থ্য পরিষেবা ‘ভেঙে পড়া’র জন্য বাম-আমলকেই দায়ী করেছেন মমতাও। তাঁর অভিযোগ, “প্রসূতি ও শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে বাম আমলে কোনও পরিকল্পনা না হওয়ার ফলেই এমন দশা। বাম আমলে প্রতি বছরে গড়ে ৪০ হাজার শিশুর মৃত্যু হত।” নতুন সরকারের সাত মাসে এ রাজ্যে শিশুমৃত্যুর হার ২% কমেছে দাবি করে মমতা বলেন, “৫ বছরে শিশুমৃত্যুর হার ২৫% কমাব।” শিশুমৃত্যু কমাতে কী করণীয় এবং সরকারি স্তরে কী পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তা-ও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বলেন, “কেউ গর্ভবতী হলেই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। হেল্থ কার্ড করিয়ে নিয়মিত চেক-আপ করাতে হবে। প্রসূতি ও শিশুদের অ্যান্টিটিটেনাস ও পোলিওর টিকা দিতে হবে।” দুঃস্থ প্রসূতিদের পুষ্টিকর খাবার দিতে ভিটামিন প্যাকেট দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা বর্তমানে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “শিশুমৃত্যুর হার ২% কমেছিল, এটা উনি (মমতা) ঠিকই বলেছেন। কিন্তু ‘স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সার্ভে’র ওই হিসেবটা ২০১০ সালের! অর্থাৎ বাম আমলের। বেরিয়েছে এখন। রিপোর্ট আসতে একটু সময় লাগে। ওঁদের আমলে কী হাল দাঁড়িয়েছে, সেটা পরে জানা যাবে।” তা ছাড়া মৃত্যুর হার কমানোর বিষয়টি প্রতি হাজারে হিসেব হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সদ্যোজাতদের চিকিৎসার ব্যাপারে বাম আমলের ‘পুরুলিয়া মডেল’ যে আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃত হয়েছিল, তার উল্লেখ করে সূর্যবাবুর দাবি, “জেলায় জেলায় নিও-নেটাল ইউনিট যা আছে, সবই বাম আমলের। একটারও ফিতে কেটেছেন ওঁরা? যেগুলো আছে, তা-ই চালাতে পারছেন না!” তাঁর সরকারের আমলে হাসপাতালগুলিতে সাড়ে তিন হাজার নতুন শয্যা তৈরি হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী যে দাবি করেছেন, তাকে চ্যালেঞ্জ করেছে সূর্যবাবু বলেন, “৩৫টার হিসেব দিতে পারবেন?” রাত পর্যন্ত স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছ থেকে জবাব মেলেনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.