ধান কেনায় গতি নেই, মাথাচাড়া ফড়েদের
রাজ্য সরকার ধান কেনার জন্য সমবায়গুলিকে এখনও সে ভাবে মাঠে নামাতে না পারায় ফড়েরাজ মাথাচাড়া দিয়েছে। চালকলগুলির মাধ্যমে ধান কেনার কাজও নানা কারণে গতি পায়নি। ফলে ফড়েদের কাছেই চাষিরা সরকার নির্ধারিত সহায়ক মূল্যের কমেই ধান বিক্রি করছেন। রাজ্যের অন্যান্য জেলার সঙ্গে বাঁকুড়া জেলাতেও এই ছবি দেখা যাচ্ছে।
ধান কেনা নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলি ইতিমধ্যেই আন্দোলন শুরু করেছে। একই দাবি নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূলের শরিক কংগ্রেসও। তৃণমূল নেতাদের একাংশও ক্ষুব্ধ। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনেরও নাজেহাল অবস্থা। বাঁকুড়া জেলার খাদ্য নিয়ামক শংকরনারায়ণ বাঁকুড়া’র আশ্বাস, “কিছু সমবায় সমিতি ধান কেনা শুরু করেছে। আরও সমবায়ের মাধ্যমে ধান কেনার চেষ্টা করা হচ্ছে।” ধান কেনার পরিস্থিতি যে কী ভয়াবহ তা জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে পাওয়া পরিসংখ্যানে স্পষ্ট। বাঁকুড়ার উপ মুখ্য কৃষি অধিকর্তা অনন্ত হাজরা বলেন, “এ বার জেলায় ১৮ লক্ষ হেক্টরের বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে।” সেখান বিক্রির হাল কেমন? জেলা খাদ্য নিয়ামক বলেন, “এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান কেনা গিয়েছে। সিংহ ভাগ ধান চালকলের মাধ্যমে কেনা হয়েছে।
কেন এই পরিস্থিতি? চাষিদের অভিযোগ, জেলায় ৫৬টি চালকলকে ধান কেনায় নামানো হয়েছে। গাঁটের কড়ি খরচ করে ভাড়াগাড়িতে চালকলে ধান নিয়ে যাওয়ার পরে নানা বাহানা তুলে চালকলগুলি আমাদের হয়রান করছে। কোথাও মিল মালিকরা ধান কিনতে চাইছে না, কোথাও ভাল ধানকে খারাপ বলে ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। কোথাও বা ধানের সঠিক মূল্য দেওয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে বাঁকুড়া জেলা রাইসমিল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুনীল সিংহের দাবি, “ধান কেনা নিয়ে চাষিদের অহেতুক হয়রানি করার অভিযোগ ঠিক নয়।” একই সঙ্গে তাঁর অসহায় স্বীকারোক্তি, “আমাদের মূলধন খুব বেশি নেই। তাছাড়া ধান রাখার জায়গাও সীমিত। এই দুই কারণে বেশি পরিমাণ ধান কিনতে আমাদের সমস্যা হচ্ছে।” খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অত্যাবশকীয় পণ্য নিগম কয়েক সপ্তাহ ধরে কোতুলপুর, জয়পুর ও ওন্দা ব্লকের কিছু এলাকায় ধান কেনা শুরু করেছে। বেনফেডের বাঁকুড়ার ম্যানেজার জগবন্ধু সেন বলেন, “আমাদের ধান কেনার টাকা নেই। জেলার ৪৪টি সমবায় সমিতি আপাতত নিজেরা দাম দিয়ে ধান কিনতে চেয়েছে। তাদের মাধ্যমে ধান কেনা শুরু করা হচ্ছে। আপাতত জয়পুর ও পাত্রসায়রে কয়েকটি সমবায়ের মাধ্যমে আমরা ধান কেনা শুরু করেছি।”
সারা জেলা জুড়ে ভালো করে ধান কেনা শুরু না হওয়ায় ফড়েদের ঠেকানো তো দূরের কথা, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারাই চাষিদের কাছে ‘মুশকিল আসান’ হয়ে উঠেছেন। বিষয়টি নিয়ে বাঁকুড়া জেলা ধান ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিখিল সিংহ বলেন, “মিলে ধান বিক্রি করতে না পেরে চাষিরা আমাদের কাছেই ধান বিক্রি করতে চাইছেন। জেলার কয়েকটি জায়গায় চাষিরা ধান ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রি করছেন বলে শুনেছি।” পখন্নার তরুন গোস্বামী, ওন্দার সুবল দাসেরা বলেন, “আগের পরিস্থিতিই ভাল ছিল। সমবায়গুলি ধান কিনত। ব্যবসায়ীরাও ধান কিনে নিয়ে যেত। ধান বিক্রি করার এত হ্যাপা ছিল না।” তাঁদের আক্ষেপ, এইবার ঘরে ধান পড়ে রয়েছে। অথচ বিক্রি না করতে পেরে টাকার অভাবে না খেয়ে মরতে হচ্ছে। সিপিএমের কৃষকসভার বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক নকুল মাহাতো বলেন, “রাজ্য সরকারের প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় ধান ক্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলা উচিত। তবেই এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যাবে।” জেলার তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশও কৃষকসভার এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত। এক তৃণমূল বিধায়ক বলেন, “ঘরে ঘরে ধান জমে রয়েছে। অথচ ধান বিক্রি করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি খুব জটিল হয়ে পড়েছে।” ওন্দা ব্লকের তৃণমূলের সানতোড় অঞ্চল সভাপতি সাধন মণ্ডল নিজেই একজন প্রান্তিক চাষি। তিনি বলেন, “সমবায়সমিতিগুলি কবে থেকে ধান কেনা শুরু করবে, সেই অপেক্ষায় রয়েছি।”
ধান কেনা নিয়ে প্রায় দিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা অবরোধ, ব্লক অফিসে বিক্ষোভ হচ্ছে। তা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন জেলার বিডিরাও। এক বিডিও বলেন, “কিছু হলেই চালকলে বা অবরোধস্থলে ছুটতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই চাষিরা বা বিভিন্ন সংগঠন দল বেঁধে ব্লক অফিসে এসে বিক্ষোভ দেখিয়ে যাচ্ছেন।” বিডিওদের একাংশের বক্তব্য, “জেলায় চালকলের সংখ্যা খুবই কম। সঠিক পরিকাঠামো তৈরি না করে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা একটি প্রক্রিয়াকে হঠাৎ সরাতে গিয়ে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে চেকে পেমেন্টের ব্যবস্থাও প্রান্তিক চাষিদের কাছে খুব জটিল। পরিস্থিতি সামলাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.