পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএম সম্মেলন
দলের ‘রাশ’ দীপক সরকারের হাতেই
ন্যতম সম্ভাব্য ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ তরুণ রায় ‘ফেরার’। তরুণবাবুর অনুগামীরাও সে ভাবে ‘সক্রিয়’ নন। ফলে, সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক হিসাবে দীপক সরকারের পুনর্নির্বাচিত হওয়া শুধুই সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছেন দলের জেলা নেতৃত্বের বড় অংশই। আগামী ৩০ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে চলেছে জেলা সম্মেলন। সম্মেলন হবে মেদিনীপুর শহরে। চলবে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। শেষ দিন প্রকাশ্য সমাবেশে উপস্থিত থাকার কথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। প্রথামাফিক জেলা সম্মেলনে সাংগঠনিক রদবদলের বিশেষ কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মীই।
তাঁদের এই ধারণা আরও পোক্ত হয়েছে জোনালস্তরের সম্মেলন-পর্ব শেষ হওয়ার পরে। কোথাও বড় কোনও রদবদল হয়নি। স্ব-পদে থেকে গিয়েছেন দীপক-অনুগামীরা। অনুজ পাণ্ডে, ডালিম পাণ্ডে থেকে শুরু করে তপন ঘোষ, সুকুর আলি, শ্যাম পাণ্ডের মতো বিতর্কিতরা ‘ফেরার’ থেকেও পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন জোনাল কমিটির সম্পাদক বা সদস্য হিসাবে। অথচ, রাজ্যে পালবদলের প্রেক্ষিতে এ বার লোকাল-জোনালস্তরের সম্মেলনে ‘টিম দীপক সরকার’-এর বিরুদ্ধে অন্য গোষ্ঠীভুক্তরা সরব হবেন বলেই অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ পূর্বাভাস দিয়েছিলেন । পশ্চিম মেদিনীপুরেও দীপকবাবুরা আটকাতে পারেননি পরিবর্তনের ঝড়। ফলে দীপকবাবু-সুশান্ত ঘোষদের ‘সক্রিয় প্রতিরোধ’ তত্ত্ব নিয়ে সম্মেলনে বিতর্ক হবে বলে অনেকে মনে করেছিলেন। সে-সব পূর্বাভাস ব্যর্থ করেই জোনালস্তরের সম্মেলনে ‘রাশ’ ধরে রেখেছেন দীপকবাবুই। জেলা সম্মেলনেও বড় কোনও বদলের সম্ভাবনা আর দেখছেন না কেউ।
সিপিএম জেলা নেতৃত্বের নির্দেশ ছিল, ১২ জানুয়ারির মধ্যেই সমস্ত জোনাল কমিটির সম্মেলন শেষ করতে হবে। তাই-ই হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি ‘প্রতিকূল’ থাকায় অধিকাংশ জোনাল কমিটির সম্মেলনই অবশ্য করতে হয়েছে ‘গোপনে’। বেশিরভাগই মেদিনীপুর শহরে। জোনাল সম্মেলনগুলিতে ‘বিক্ষুদ্ধ’-শিবির সে ভাবে ‘সক্রিয়’ই হয়নি। ‘পুরনো’ মুখ বদলে জোনাল-নেতৃত্বে ‘নতুন’ মুখ আনার ব্যাপারে সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের দাবি সম্মেলনস্তরে সে ভাবে গুরুত্বই পায়নি। না হলে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত, ফেরার, দীর্ঘ দিন ধরে বিতর্কিতরা পুনর্নির্বাচিত হতে পারতেন না। তাঁদের পুনর্নির্বাচনের ক্ষেত্রে দীপকবাবুর ‘পছন্দ’ই শেষ কথা হয়েছে আবারও। দীপকবাবু নিজে বেশ কয়েকটি জোনাল সম্মেলনে আগাগোড়া উপস্থিতও থেকেছেন। তাঁর পছন্দ বুঝে নিয়েই চলেছে সম্মেলনের কার্যক্রম। এলাকার বাইরে মেদিনীপুরে আয়োজিত বেশ কয়েকটি জোনাল সম্মেলন হয়েছে নাম-কা-ওয়াস্তে। ঘণ্টা দু’য়েক নিয়মমাফিক ‘আলোচনা’র পরে অনেকটাই পূর্ব-নির্ধারিত ভাবে তৈরি হয়ে গিয়েছে নতুন জোনাল কমিটি। নামেই নতুন, কার্যত পুরনোরাই ফিরে এসেছেন স্বমহিমায় (অথচ হুগলিতেও বিতর্কিত সুহৃদ দত্ত, অরূপ বসুমল্লিক, মোজাম্মেল হোসেন, গোপাল কচরা জোনাল কমিটি থেকেই বাদ পড়েছেন)।
জোনাল নেতৃত্বে নতুন মুখ আনার দাবি গুরুত্ব পায়নিএ অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য। তাঁর যুক্তি, “যেখানে নতুন মুখ প্রয়োজন ছিল, সেখানে নতুন মুখই এসেছে। ডেবরায় জাহাঙ্গির করিমের জায়গায় প্রাণকৃষ্ণ মণ্ডল, খড়্গপুর গ্রামীণে মিহির পাহাড়ির জায়গায় কমল পলমল, বেলপাহাড়িতে অমিয় সেনগুপ্তের বদলে উদ্ধব মাহাতো সম্পাদক হয়েছেন।”
তাঁর দাবি, “আমাদের দলে কারও পছন্দে কেউ সম্পাদক হন না। পার্টি-প্রতিনিধিরাই সম্পাদক ঠিক করেন।” মামলায় অভিযুক্তদের দলে নিজ-নিজ পদে থেকে যাওয়া নিয়ে তাঁর যুক্তি, “কেউ অভিযুক্ত হলেই দোষী প্রমাণ হয় না। দলের কাজ করতে গিয়ে মামলায় জড়িয়ে থাকলে ‘বিপদে’ দল তাঁর পাশে থাকবে না কেন?” জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর অন্য এক সদস্য আবার মনে করাচ্ছেন, “জোনালস্তরে যাঁদের পদচ্যুত করা হয়েছে তাঁরা কেউই ইদানীং আর দীপকবাবুর আনুগত্য স্বীকার করছিলেন না। সে কারণেই তাঁদের সরানো হয়েছে। অন্য দিকে, দীপকবাবুর অনুগামীদের গায়ে যত কাদাই লাগুক, সম্মেলনে আঁচড়টিও পড়েনি।” সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্যের পরস্পরবিরোধী ‘বিশ্লেষণ’ই বুঝিয়ে দিচ্ছে জেলা-পার্টিতে দীপক আর দীপকবিরোধী গোষ্ঠীর অস্তিত্ব। কিন্তু শেষ বিচারে দীপকবিরোধীরা সেই ‘একান্তে সমালোচনা’র মধ্যেই আটকে। পার্টিতে জোরের জায়গা তৈরি করতে পারেননি। ব্যতিক্রম নারায়ণগড়। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের ‘খাসতালুকে’ এ বারও দীপকবাবুর প্রভাব কাজ করেনি। ‘প্রভাব’ কাজ করবে না জেনেই সেখানকার জোনাল সম্মেলনে হাজিরও হননি দীপকবাবু।
তবে, রাজ্যে ও জেলায় ‘পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ সিপিএমের সাংগঠনিক-স্তরে কোনও প্রভাব ফেলেনি বলা যাবে না। দলীয় নেতৃত্বকে এই জেলাতেও কয়েকটি শাখা কমিটি ভেঙে দিতে হয়েছে। একাধিক শাখা-কমিটি মিলিয়ে একটি কমিটি করতে হয়েছে। একদা ‘দুর্গ’ কেশপুরের দক্ষিণপল্লি আর বনকাটা শাখা কমিটি যেমন মিলিয়ে দিয়ে নতুন দক্ষিণপল্লি শাখা-কমিটি তৈরি হয়েছে। জোনাল কমিটির সংখ্যা আবার বেড়েছে। আগে ৩২টি জোনাল কমিটি ছিল। এ বার ৩৩টি হয়েছে। মেদিনীপুর গ্রামীণ জোনালকে ভেঙে পূর্ব ও পশ্চিম করা হয়েছে। জেলা কমিটির তরফে সংশ্লিষ্ট এলাকার দেখভালের দায়িত্বে থাকা এক নেতার কথায়, “মাঝে শহর আর শহরের দু’দিকের এলাকা এত দিন গ্রামীণ জোনালের আওতায় ছিল। কাজের সুবিধার জন্যই এই জোনাল কমিটি ভেঙে দু’টি কমিটি করা হয়েছে।” মেদিনীপুর গ্রামীণ জোনালের সম্পাদক ছিলেন অজিত ভুঁইয়া। ক’মাস আগেই প্রবীণ এই নেতার মৃত্যু হয়। এ বার পূর্ব-জোনালের সম্পাদক হয়েছেন নিরঞ্জন মাইতি। পশ্চিমে দেবাশিস দত্ত।
দলীয় সূত্রের খবর, জেলা-পার্টিতে নিজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিঃসংশয় হয়ে দীপকবাবু এখন বলছেন, ‘৩৫ বছরে আমাদের কিছু ভুল কাজের জন্যই মানুষের মধ্যে সন্দেহ, অসন্তোষ ও অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এখন ফের ভাল কাজের মধ্যে দিয়ে এ-সব দূর করতে হবে। জ্বলন্ত সমস্যাগুলিকে সামনে রেখে গরিব মানুষের পাশে থেকে লড়াই করতে হবে’।
কিন্তু দলেই সংশয় রয়েছে, নিজের অনুগামীদের সাত খুন মাফের ফর্মুলায় দীপকবাবু সব সন্দেহ-অসন্তোষ দূর করতে পারবেন তো!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.