গড়বেতায় সিপিএম কার্যালয় খুলতে ‘বাধা’
রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে আট মাস ধরে বন্ধ লোকাল কমিটির অফিস খুলতে গিয়ে শাসক তৃণমূলের লোকজনের কাছে বাধা পেলেন সিপিএম কর্মীরা। বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটল গড়বেতা শহরে। এক সময়ে সুশান্ত ঘোষ, তপন ঘোষ, সুকুর আলিদের ‘খাসতালুক’ গড়বেতা আর সে গড়বেতা নেই কয়েক মাস ধরেই। এখন সেখানেও তৃণমূলের ‘দাপট’। বন্ধ সিপিএম পার্টি-অফিসগুলিও। এমনকী গড়বেতা জোনাল সম্মেলনও হয়েছে ‘গোপনে’, মেদিনীপুর শহরে। এ দিকে, এ মাসের শেষেই সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন। তার আগে বন্ধ পার্টি-অফিসগুলি খুলে ফের রাজনৈতিক কাজকর্ম শুরুর চেষ্টা চালাচ্ছেন সিপিএম কর্মীরা।
সে রকমই চেষ্টা হয়েছিল গড়বেতায়, বৃহস্পতিবার সকালে। কিন্তু তৃণমূলের বাধায় সিপিএম কর্মীদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। দলের লোকাল কমিটির সম্পাদক অজয় শর্মা ও দু’জন সর্বক্ষণের কর্মীকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। হেনস্থা করা হয় মহিলা সমিতির নেত্রী কাজল গোস্বামীকেও। গোলমালের খবর পেয়ে পুলিশও যায়। গড়বেতার ওলি শৈলেন বিশ্বাস অবশ্য জানান, কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। এক সিপিএম নেতার বক্তব্য, এখনও এলাকায় যা পরিস্থিতি তাতে দলীয় কর্মীদের উপরে আরও সন্ত্রাস হবে এই আশঙ্কাতেই লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, “যা ঘটেছে তা সিপিএমেরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।”
তবে, শাসকদলের ‘মাতব্বরি’, ‘সন্ত্রাস’ নিয়ে অভিযোগ আসছে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই। সিপিএম করার ‘অপরাধে’ চন্দ্রকোনার সিমলা গ্রামে কৃষ্ণদাস পাল নামে এক জনকে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জরিমানার অর্থ না দেওয়ায় তাঁকে বেধড়ক মারধর করাও হয়েছে। ‘বয়কট’-এর ফতোয়া দিয়ে চাষ করতেও বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়েই ওই চাষি এখন গ্রাম ছেড়ে দূর-দূরান্তে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যাচ্ছেন। এ নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি বলেই অভিযোগ কৃষ্ণদাসবাবুর। তাঁর কথায়, “এক সময়ে গ্রামে থাকতে হলে সিপিএম-ই করতে হত। তাই আমিও করতাম। সেটাই হয়েছে আমার অপরাধ। রাজ্যে সরকার বদলের পরেই আমাকে ২ লক্ষ ১৯ হাজার ৬৪০ টাকা জরিমানা করা হয়। টাকা দিতে না পারায় বেধড়ক মারধর করে। প্রায়ই কয়েক জন আমার বাড়ি এসে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমি তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায়-সহ প্রত্যেককেই বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।”
কৃষ্ণদাসবাবু জানান, তাঁর নিজের ৭০ ডেসিমেল জমি রয়েছে। ৫ জনের পরিবার। ৭০ ডেসিমেল জমিতে চাষ করেই কোনও রকমে সংসার চলত। এখন চাষ বন্ধ হওয়ায় চরম সমস্যার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। কৃষ্ণদাসবাবুর কথায়, “নেহাৎ রাজমিস্ত্রির কাজ জানতাম। দূরে দূরে কাজ জুটিয়ে কোনওক্রমে চলছে। কিন্তু কত দিন আর এ ভাবে চলবে!” এই অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা প্রদ্যোৎ ঘোষের বক্তব্য, “ওই সব এলাকায় এক সময়ে সিপিএমের লোকজন অনেক অত্যাচার করেছেন। তাই স্থানীয় মানুষজনের ক্ষোভ থাকতে পারে। কিন্তু তা বলে কাউকে চাষে বাধা দেওয়া কিছুতেই মানা যায় না। দলের কেউ জড়িয়ে থাকলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”
পিংলার জলচকে আবার একটি শিব-মন্দিরের সেবাইতের দায়িত্ব থেকে একটি পরিবারকে উৎখাতের চেষ্টার সঙ্গেও জুড়ে গিয়েছে শাসকদলের নাম। তিলেশ্বর পাট শিব মন্দিরটি অতি প্রাচীন। ওই মন্দিরে নিত্য পুজোর পাশাপাশি বছরভর নানা অনুষ্ঠান ও মেলা হয়। গ্রামের বাসিন্দা সুধীরচন্দ্র চক্রবর্তীর দাবি, “মন্দিরটি চক্রবর্তী পরিবারের। যাবতীয় নথিও রয়েছে। বহু বছর ধরে আমরাই সেবাইত। কিন্তু রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরেই আমাদের সেবাইতের দায়িত্ব থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কয়েক জন। তৃণমূলের একটি অংশ তাতে প্রত্যক্ষ মদত দিচ্ছে।” এ বিষয়েও সুধীরবাবুরা তৃণমূল জেলা নেতৃত্বের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। তৃণমূলের অবশ্য ‘যুক্তি’, মন্দির পরিচালনা ও মন্দিরকে কেন্দ্র করে মেলা পরিচালন কমিটি রয়েছে। যে কমিটিতে সেবাইত, পুরোহিত ছাড়াও গ্রামের মানুষজন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যেই বিবাদ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.