দামোদরে ‘বিষ’ মেশাচ্ছে কারখানা
লের রং চকচকে লাল! যে নালা দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তার দু’পাশে ঘাসের অস্তিত্ব নেই। বৃষ্টিতে নালা ছাপিয়ে জমি প্লাবিত হলে ফসলের দফারফা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিনের পর দিন এ ভাবেই দূষিত বর্জ্য জল বেরোচ্ছে জাতীয় সড়কের দক্ষিণে নমো সগড়ভাঙার একটি বেসরকারি স্পঞ্জ ও ফেরো ম্যাঙ্গানিজ কারখানা থেকে। সেই জল তিন-চার কিলোমিটার এগিয়ে গিয়ে পড়ছে দামোদরে। দূষণের ‘বিষে’ কলূষিত হচ্ছে দামোদরও।
বাসিন্দারা জানান, প্রায় ৯ বছর আগে ওই কারখানাটি গড়ে ওঠে। পূর্বতন বাম সরকারের উদ্যোগে শিল্পায়নের প্রথম পর্বে দুর্গাপুরে যে বেসরকারি কারখানাগুলি গড়ে উঠেছিল তার মধ্যে এটি অন্যতম। প্রথম দিকে দূষণ নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের। চুল্লি দিয়ে ধোঁয়ার সঙ্গে বেরোনো গুঁড়োয় শ্বাসকষ্ট হত স্থানীয় বাসিন্দাদের। বর্জ্য জলের রং ছিল একেবারে কালো। সেই জল জমিতে মিশলে ফসল মরে যেত। প্রতিবাদে বেশ কয়েক বার কারখানার গেটে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। এর পরেই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। কিন্তু সুদিন চিরস্থায়ী হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কারখানা কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝেই দূষণ নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হন না। ফলে সেই সময় এলাকায় ব্যাপক হারে দূষণ ছড়ায়। যার প্রভাব পড়ে সংলগ্ন এলাকা ছাড়াও কিছু দূরের বাবনাবেড়া, আমলাজোড়া, ধোপাঘাটা, ন’পাড়া প্রভৃতি গ্রামেও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় যখন কারখানা কর্তৃপক্ষ দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বন্ধ করে দেন, তখন বাতাসে প্রচুর পরিমাণে কালো গুঁড়ো উড়তে থাকে। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যায় ভোগা রোগীদের কষ্ট বাড়ে। কষ্ট পায় শিশুরাও। গুঁড়ো জমে গাছপালার উপরে, ধানখেতে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ধান থেকে চাল তৈরি করার পরেও দেখা যাচ্ছে চালের রঙ তত সাদা নয় বরং কালচে আভা। এমনকী কুঁড়োর রংও কালচে। দূষিত ঘাস খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে গবাদি পশু।
ছবি: বিশ্বনাথ মশান।
কারখানার বর্জ্য জল একটি মেঠো নালা বেয়ে প্রায় চার কিলোমিটার গিয়ে পড়ে দামোদর নদে। সেই জলের রঙ চকচকে লাল। নালার দু’পাশের ঘাস মরে গিয়েছে। বৃষ্টি হলে নালা ছাপিয়ে বর্জ্য জল উঠে পড়ে আশপাশের জমিতে। তাতে জমির ফসলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। রুগ্ণ হয়ে পড়ে চারাগুলি। চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এলাকার বাসিন্দা শ্যামল রুইদাস, বিনয় বাদ্যকরদের অভিযোগ, “কারখানা কর্তৃপক্ষ মুনাফা লুঠছেন। আর কুফল ভোগ করছি আমরা।” দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “আগের সরকার ওই কারখানাগুলি গড়েছিল। ২০০১-এ বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পরে সাধারণ মানুষকে বলেছিলাম দূষণের কথা। কিন্তু এলাকার বেকার ছেলেদের কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিয়ে সিপিএম এলাকার বাসিন্দাদের সমর্থন আদায় করে। আজ সবাই বুঝছেন।” কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, লৌহ আকরিক জলে ধুয়ে নেওয়া হয়। সেই জলই নালা দিয়ে বেরিয়ে যায় বাইরে। তাই জলের রং চকচকে লাল। দূষণ যে হচ্ছে তা স্বীকার করেছেন কারখানার এক আধিকারিকও। তবে তাঁর দাবি, “আগে দূষণের মাত্রা অনেক বেশি ছিল।” এলাকার বাসিন্দাদের কথায়, আগের থেকে পরিস্থিতি কিছুটা ভাল। তবে তা যথেষ্ট নয়। অবিলম্বে দূষণ পুরোপুরি রোধ করতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে কার্যকরী পদক্ষেপ করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। পরিবেশ দফতরের এক আধিকারিক জানান, বাসিন্দাদের তরফে অভিযোগ পেয়ে সম্প্রতি ওই বর্জ্য জল সংগ্রহ করে এনে দফতরের গবেষণাগারে পরীক্ষা করানো হয়েছে। তাতেও বেশ ভাল দূষণ ধরা পড়েছে বলে জানান তিনি। দফতরের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট প্রবীরকুমার বাড়ৈ জানান, পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য সেই রিপোর্ট ইতিমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.