গন্তব্য পশ্চিমবঙ্গ। তবে বিনিয়োগের জন্য নয়। বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে শিল্পমহলকে যে সদর্থক বার্তা দেওয়া প্রয়োজন, তা বোঝাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চান বণিকসভা ফিকি-র নতুন সভাপতি আর ভি কানোরিয়া।
এক দিকে রাজ্যের নতুন জমি অধিগ্রহণ নীতি, অন্য দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কার কর্মসূচিতে তৃণমূল বাধা হয়ে দাঁড়ানোর ফলে শিল্পমহলের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে বলে মনে করছে ফিকি। গত কাল ফিকি-র সভাপতি মনোনীত হওয়ার পর আজ কানোরিয়া বলেন, “রাজ্যে বিনিয়োগ আসবে কি আসবে না, তার পুরোটাই নির্ভর করছে নতুন সরকারের উপর। বাম-সরকারের আমলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ কঠিন ঠাঁই বলে চিহ্নিত হয়ে গিয়েছিল। তাই রাজ্যের নতুন ভাবমূর্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বটা আরও বেশি।”
পরামর্শদাতা সংস্থা বেইন অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে যৌথ ভাবে দেশের সাতটি বড় রাজ্যে সমীক্ষা চালিয়ে ‘এমপাওয়ারিং ইন্ডিয়া’ নামের যে রিপোর্ট ফিকি তৈরি করেছে, তাতেও স্পষ্টই বলা হয়েছে, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ বিনিয়োগ টানার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে। রাজ্যে নতুন শিল্পের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে যে ‘এক জানলা’ ব্যবস্থা চালু হয়েছে এবং ৯৯ পৃষ্ঠার আবেদনপত্র কমিয়ে ৭ পৃষ্ঠায় নামিয়ে আনা হয়েছে, তার প্রশংসা করলেও ওই রিপোর্টে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, বিনিয়োগ টানতে গেলে আরও অনেক মৌলিক পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
কী করতে হবে পশ্চিমবঙ্গকে?
|
আর ভি কানোরিয়া |
ফিকি সভাপতি বলেন, “এই রিপোর্টটা অনেকটাই বাম-জমানার কাজকর্মের উপর ভিত্তি করে তৈরি। নতুন সরকারের উচিত একটা সামগ্রিক শিল্পনীতি তৈরি করা।” তবে এ পর্যন্ত নতুন সরকারও যে আশাব্যঞ্জক কিছু করেনি, সেই ইঙ্গিতও দিয়েছেন কানোরিয়া। তাঁর মতে, জমি অধিগ্রহণে রাজ্যের যাবতীয় দায় ঝেড়ে ফেলতে গিয়ে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ কার্যত অসম্ভবের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফিকি-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ন্যানো কারখানার ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে শিল্পের জন্য জমির প্রশ্ন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ও সময় বেঁধে জমি অধিগ্রহণের জন্য রাজ্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
বণিকসভার রিপোর্ট অনুযায়ী, জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে গুজরাত, ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’ তৈরির ক্ষেত্রে কর্নাটক, এক-জানলা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলি অনুকরণযোগ্য নীতি তৈরি করেছে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্য সব রাজ্য এই ধরনের আদর্শ নীতি অনুকরণ করতে পারে। এ বিষয়ে তাঁরা শুধু মুখ্যমন্ত্রী নন, রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষস্তরেও কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন কানোরিয়া।
রাজ্য সরকার শিল্পমমহলের কাছে কী বার্তা পাঠাচ্ছে, তা-ও শিল্পস্থাপনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে ফিকি। এর আগে আমরি-র ঘটনায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে ফিকি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিল, হাসপাতালের দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে যুক্ত না-থাকা সত্ত্বেও পরিচালন বোর্ডের সদস্যদের জামিন না-দেওয়ায় বাণিজ্য মহলে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। কানোরিয়াও আজ বলেন, আমরি-র মতো ঘটনায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা শিল্পমহলে নেতিবাচক বার্তা পাঠাচ্ছে। তাঁর কথায়, “আমরি-র ঘটনায় আমরা এইটুকুই বলতে চেয়েছিলাম যে, বিচার শেষ হওয়ার আগেই কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে ফেলা ঠিক নয়।”
সংস্কারের ক্ষেত্রে ফিকি কর্তারা মনে করছেন, পণ্য-পরিষেবা কর থেকে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের মতো নীতির সুফল সম্পর্কে সঠিক তথ্য না-থাকার ফলেই বিরোধীদের সঙ্গে সরকারের শরিক দলগুলিও সংস্কারের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেই কারণে আরও বেশি করে মমতার সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন।
গত কাল ফিকি-র সভায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, সংস্কারের কর্মসূচিতে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে ফিকি-কে অনুঘটকের ভূমিকা নিতে হবে। সেই সূত্র ধরেই আজ ফিকি সভাপতি জানিয়েছেন, তাঁরা অবিলম্বে সেই কাজ শুরু করে দিতে চান। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গও পণ্য-পরিষেবা কর ব্যবস্থায় রাজ্যের কর বসানোর অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ফিকি কর্তারা বলছেন, কেন্দ্র ও রাজ্য, দু’পক্ষেরই যে সুবিধা হবে, তা বুঝতে হবে। একই সঙ্গে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের সুফল বোঝাতে ফিকি একটি সমীক্ষা চালাবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের মহাসচিব রাজীব কুমার। |