প্রসঙ্গ: কলেজ ক্যাম্পাসে অশান্তি |
অশান্ত শিক্ষাঙ্গন। কলেজে-কলেজে ছাত্র-সংঘর্ষ। ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হাতে নিগৃহীত হচ্ছেন
অধ্যক্ষ, অধ্যাপকেরাও। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শক্তি প্রদর্শনের হাতিয়ার-সর্বস্ব হয়ে উঠে ছাত্র সংগঠনগুলি
ছাত্র-স্বার্থ থেকে বহু দূরে সরে গিয়েছে বলেও অভিযোগ। কেন এই পরিণতি? কী উপায় উত্তরণের?
ছাত্র-ছাত্রী, ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব, শিক্ষাবিদ, প্রশাসক কী ভাবছেন নানা জন? |
|
রায়গঞ্জে অধ্যক্ষ নিগ্রহ |
|
চাই নিরপেক্ষ প্রশাসন
একদল ছাত্র রাজনীতিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সে জন্যই গোলমাল। পড়াশোনার পরিবেশ বজায় রেখে কর্তৃপক্ষের কাছে ছাত্রছাত্রীদের দাবি তুলে ধরতে আন্দোলন হতে পারে। তবে শান্তিপূর্ণ ভাবে। কলেজে ঢুকে হামলা নিন্দনীয়। প্রশাসনেরও নজরদারির প্রয়োজন। পুলিশকেও নিরপেক্ষ হতে হবে।
বিপ্লব ধাড়া। দ্বিতীয় বর্ষ। তমলুক কলেজ। |
|
ভোট করুক কমিশন
প্রকৃত শিক্ষাদরদীদের পরিচালন সমিতিতে রাখলে কলেজের মানোন্নয়ন সম্ভব। ‘বহিরাগতদের’ ক্যাম্পাসে ঢোকা বন্ধ করতে হবে। ক্লাস চলাকালীন মিটিং-মিছিলে সমস্যা হয়। তা এড়াতে ‘কঠোর’ বিধি চালু জরুরি। শৃঙ্খলাভঙ্গে ‘কড়া’ পদক্ষেপ প্রয়োজনে। কলেজ-ভোটও হোক কোনও কমিশনের তত্ত্বাবধানে।
অনন্যা মাইতি। তৃতীয় বর্ষ। এগরা কলেজ। |
|
পড়ুয়াদের অধিকার স্বীকৃত হোক
পড়ুয়াদের দাবি-অভিযোগ নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য বর্ষ ও শ্রেণি-ভিত্তিক ছাত্র-প্রতিনিধি থাকা অব্যই প্রয়োজন। কিন্তু সংসদ-নির্বাচন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন দরকার। সংগঠন নয়, প্রতিনিধি কে হবেন, তা পড়ুয়াদের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হোক। পড়ুয়ারাই গোপন ব্যালটে নির্বাচিত করুন।
লক্ষীন্দর পালোই। অধ্যাপক। সুবর্ণরেখা কলেজ। |
|
বহিরাগতদের ঢোকা বন্ধ হোক
একাধিক কলেজে সম্প্রতি যা ঘটছে, তা একেবারেই অনভিপ্রেত। কলেজে রাজনীতি থাকুক কিন্তু ‘উচ্ছৃঙ্খল’ রাজনীতি নয়। ক্যাম্পাসে ‘বহিরাগতদের’ ঢোকা বন্ধ করতে হবে। পুলিশকেও নিরপেক্ষ হতে হবে। যে হামলা করবে তার বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ করতে হবে। ছাত্র সংগঠনগুলিরও উচিত, পড়াশোনার পরিবেশ রেখে আন্দোলন করা।
অন্তরা ভট্টাচার্য। জেলা সভাধিপতি, পশ্চিম মেদিনীপুর। |
|
দখলের রাজনীতিই ‘বিষ’
জয় নয় এখন ছাত্র সংসদ ‘দখল’ করা হচ্ছে। সরকারি মদতেই চলছে দখলদারির রাজনীতি। নীতি-আদর্শ নেই। রায়গঞ্জ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘ছোট ঘটনা।’ এতে ওঁদের কর্মীরাই উৎসাহিত হলেন। পুলিশ-প্রশাসন নিরপেক্ষ না-হলে এমন ঘটনা এড়ানো মুশকিল। কলেজ কর্তৃপক্ষকেও দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে পদক্ষেপ করতে হবে।
সৌগত পন্ডা। সম্পাদক, এসএফআই। পশ্চিম মেদিনীপুর। |
|
|
রামপুরহাটে অধ্যক্ষকে শাসানি |
|
আদর্শহীনতার ফল
ছাত্র সংসদ নিয়ে দখলদারির মানসিকতাই সমস্যার মূলে। সমাজবিরোধীদেরও কাজে লাগানো হচ্ছে। নীতি-আদর্শহীন রাজনীতি ছাত্রদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটাচ্ছে। ভর্তি থেকে সংসদ ভোট--সব ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা জরুরি। কর্তৃপক্ষকেও নিরপেক্ষ হতে হবে। বহিরাগতদের যাতায়াত বন্ধেও ‘সক্রিয়’ হতে হবে কর্তৃপক্ষকে।
চিন্ময় ঘোড়াই। সম্পাদক, ডিএসও। পূর্ব মেদিনীপুর। |
|
এসডিওরা ভোট করুন
তথাকথিত ‘বড়’ সংগঠনগুলির লক্ষ্য যে ভাবে হোক ছাত্র সংসদ দখল করা। ‘বহিরাগতরা’ ঢোকার ফলেই ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। মা-বাবা’র পরেই শিক্ষকের স্থান। অথচ, সেই শিক্ষকদেরই নিগ্রহ করা হচ্ছে। অশান্তি এড়াতে কর্তৃপক্ষের তরফে চাই স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা। সংসদ-ভোটে এসডিও-বিডিওদের রিটার্নিং অফিসার করা হোক।
মহম্মদ সইফুল। সভাপতি, ছাত্র পরিষদ। পশ্চিম মেদিনীপুর। |
|
কর্তৃপক্ষ নিরপেক্ষ হোন
কলেজে হামলা নিন্দনীয়। গত ৩৪ বছরের বাম-অপশাসনে কলেজ কর্তৃপক্ষের একাংশও পক্ষপাতদুষ্ট হয়েছেন। তাঁদের প্ররোচনাতেই অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ করতে হবে। তাঁদের নিরপেক্ষ ভূমিকায় দেখতে চান ছাত্রছাত্রীরা। তবে ছাত্র সংগঠনগুলিকেও আরও সতর্ক হতে হবে।
দীপক দাস। সভাপতি, টিএমসিপি। পূর্ব মেদিনীপুর। |
|
কড়া হোন কর্তৃপক্ষ
কলেজে রাজনীতি থাকুক। তবে, ‘উচ্ছৃঙ্খল’ রাজনীতি নয়। অধ্যক্ষ-শিক্ষক-ছাত্র নিগ্রহের ঘটনা কেউই সমর্থন করতে পারে না। কলেজে পড়তে আসি। গোলমালে জড়াতে চাই না। পড়াশোনার পরিবেশ বজায় রাখতে ছাত্র সংগঠনগুলিই এগিয়ে আসুক। কলেজ কর্তৃপক্ষকেও ‘কড়া’ হতে হবে। কেউ বিশৃঙ্খলা তৈরি করলে কঠোর পদক্ষেপ করা জরুরি।
বাসুদেব মান্না। তৃতীয় বর্ষ। মেদিনীপুর কমার্স কলেজ। |
|
ছাত্রস্বার্থে আন্দোলন হোক
আমরা সাধারণ ঘর থেকে পড়তে এসেছি। কলেজে অশান্তি ভাল লাগে না। ইউনিয়ন থাকুক। ছাত্রছাত্রীদের দাবি নিয়ে আন্দোলন হোক। কিন্তু ক্যাম্পাসে হিংসা কেন? সবাইকেই সংযত হতে হবে। অন্য দিকে, বিশৃঙ্খলা এড়াতে কর্তৃপক্ষকেও প্রয়োজনে ‘কঠোর’ হতে হবে। দরকারে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনাও করতে হবে।
নিবেদিতা পাল। প্রথম বর্ষ। মেদিনীপুর কলেজ। |
|
দু’পক্ষই মরিয়া, অশান্তি
আগে এক পক্ষ দাপাদাপি করেছে। এখন দু’পক্ষই মরিয়া। তাতেই অশান্তি। শিক্ষকদের উপরেও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। অনেকের গায়ে দলীয় তকমা সেঁটে দেওয়া হচ্ছে। অশান্তিতে পড়াশোনারই ক্ষতি। ছাত্র সংসদের ভোট-প্রক্রিয়া প্রশাসনিক স্তর থেকে দেখভাল করা উচিত। ছাত্র সংগঠনগুলিকে সংযত হতে হবে।
মুকুল রায়। প্রাক্তন অধ্যক্ষ, মেদিনীপুর কলেজ। |
|