বিপর্যস্ত ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র সচিন তেন্ডুলকরই ছন্দে আছেন বলে মনে করছেন ডেভিড ওয়ার্নার। তবে অ্যাডিলেডে শেষ টেস্টে সহবাগ-দ্রাবিড়-লক্ষ্মণদের ব্যাটেও আগ্রাসন দেখার আশায় রয়েছেন বিধ্বংসী অস্ট্রেলীয় ওপেনার।
“ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের অনেকেই নিশ্চয়ই ভাবছে কী ভাবে রান করবে। ওদের মধ্যে একমাত্র সচিনকে দেখেই মনে হচ্ছে যে ছন্দে রয়েছে। মনে হচ্ছে ও-ই ব্যাট করার সময় সাইটস্ক্রিন ব্যবহার করছে,” বক্তব্য ওয়ার্নারের। বিশ্বখ্যাত ভারতীয় ব্যাটিং লাইন-আপকে অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি। “সচিন ছাড়া বাকি ব্যাটসম্যানরাও বিশ্বমানের ক্রিকেটার। ভারতের প্রথম ছ’জন ব্যাটসম্যানের মিলিত রান দেখলেই সেটা বোঝা যাবে। অবিশ্বাস্য কৃতিত্ব! আশা করছি পরের টেস্টে ওরা আগ্রাসী ভাবে ব্যাট করবে।”
বিদেশে পরপর সাতটা টেস্টে হারা ভারতকে ৪-০ হারানোর লক্ষ্য নিয়ে অ্যাডিলেড ওভালে নামবে অস্ট্রেলিয়া। ওয়ার্নার বলছেন, “পারথে জিতে উঠে ক্লার্ক বলেছিল, এই জয় নিয়ে যত খুশি আনন্দ করো। কিন্তু দিনের শেষে মনে রাখা উচিত, বিশ্বের দু’নম্বর দলকে ৪-০ হারানোর চেষ্টা করতে হবে। ওটা আমাদের কাছে বিরাট একটা ব্যাপার। ২০১৩ অ্যাসেজের সময় টেস্টে বিশ্বসেরার জায়গায় আমরা আবার পৌঁছতে চাই।”
অ্যাডিলেডে খেলতে মরিয়া রায়ান হ্যারিস আবার অস্ট্রেলীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে অনুরোধ করেছেন শেষ টেস্টের দল থেকে তাঁকে বাদ না দিতে। প্রথমে পিটার সিডলকে বিশ্রাম দিয়ে নাথান লিয়ঁকে খেলানোর কথা ভাবা হলেও বিশ্রাম নিতে চাননি সিডল। ফলে এখন হ্যারিস বা মিচেল স্টার্ককে বসানো হতে পারে। |
ভারতীয়দের বিরুদ্ধে সে রকম সাফল্য পাননি লিয়ঁ। শেষ টেস্টে কিছু করে দেখাতে মরিয়া অফস্পিনার বৃহস্পতিবার শেন ওয়ার্নের ক্লাস করতে চলেছেন। অস্ট্রেলীয় পেসাররা যেখানে তিনটে টেস্ট থেকে সব মিলিয়ে ৫৭ উইকেট তুলেছেন, সেখানে দুটো টেস্ট থেকে মাত্র দুটো উইকেট পেয়েছেন লিয়ঁ। ওয়ার্ন আবার ফর্মে না থাকা উইকেটকিপার ব্র্যাড হাডিনের পাশে দাঁড়িয়ে জানিয়েছেন, এখনও কয়েক বছর জাতীয় দলে খেলতে পারেন হাডিন। হাডিনের উত্তরসুরি হিসেবে ম্যাথু ওয়েড-কে বেছে দিয়েছেন ওয়ার্ন। অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি উইকেটকিপার ২৪ বছরের ওয়েড কয়েক দিনের মধ্যে ওয়ান ডে দলেও খেলতে পারেন বলে খবর।
অ্যাডিলেড আবার বড় পরীক্ষা হতে যাচ্ছে দু’দলের দুই ফর্ম হারানো ব্যাটসম্যানের কাছে। এক জন ভিভিএস লক্ষ্মণ, অন্য জন শন মার্শ। লক্ষ্মণের অবসর নিয়ে নানা কথা উঠলেও তিনি নিজে এ কথা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার এক সংবাদপত্রে লেখা হয়েছে, “ভারতীয় এক টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকের সামনে লক্ষ্মণ পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, তিনি অবসর নিচ্ছেন না।” অ্যাডিলেডে যদি তিনি শেষ পর্যন্ত দলে থাকেন, তবে সম্ভবত কেরিয়ারের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে এই হায়দরাবাদি ব্যাটসম্যানকে।
উল্টো দিকে শন মার্শও প্রচণ্ড চাপের মুখে সিরিজের শেষ টেস্টে খেলতে নামবেন। তবে মার্শ অন্তত এটুকু জানেন যে অ্যাডিলেডে আর একটা সুযোগ পাবেন তিনি। মার্শের কথায়, “টিমের জয়ে আমার কোনও অবদান থাকছে না, এটা ভেবেই খুব খারাপ লাগছে। আপনি টেস্ট ক্রিকেট খেলার বেশি সুযোগ পাবেন না। বুঝতে পারছি আমার সুযোগ শেষ হয়ে আসছে। যা ভুল করেছি, সেগুলো আর করতে চাই না। এখন যে সুযোগ পাব, সেগুলোই কাজে লাগাতে হবে।”
ওয়াসিম আক্রম আবার বলেছেন, পারথ এবং সিডনি বুঝিয়ে দিয়েছে বয়স হলে ক্রিকেট খেলাটা কত কঠিন হয়ে যায়। আক্রমের কথায়, “প্রায় আড়াই দিন ধরে ফিল্ডিং করার পর অন্তত তিন জন ভারতীয় ব্যাটসম্যানের পা নড়েনি ব্যাট করার সময়। যাদের চল্লিশের কাছে বয়স হচ্ছে, তাদের তাই বোঝা উচিত এ বার সরার সময় হয়েছে।” এ দিকে, ৩-০ সিরিজ জয়ের পর অস্ট্রেলীয় দল এবং সমর্থক যতই খুশি হোক, প্রচুর আর্থিক খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের বোর্ড এবং চ্যানেল নাইন-কে। চলতি মরসুমে নিউজিল্যান্ড এবং ভারতের বিরুদ্ধে কোনও টেস্টই পঞ্চম দিন পর্যন্ত গড়ায়নি। ফলে বিজ্ঞাপন এবং টিকিট বিক্রির অর্থ পাওয়া যায়নি। |