ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের শুভ্রতা রক্ষা করতে কলকাতা হাইকোর্টের যাবতীয় নির্দেশ তিন সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর করতে হবে, রাজ্য সরকারকে বুধবার এই নির্দেশ দিল উচ্চ আদালত।
সাদা মার্বেলে মোড়া ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের শুভ্রতা বাঁচাতে এবং কলকাতার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে ২০০৭ সালে কলকাতা হাইকোর্ট যে নির্দেশগুলি দিয়েছিল, সেগুলি হল
১) ধর্মতলা থেকে বাস টার্মিনাস সরাতে হবে।
২) এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে হোচিমিন সরণির মোড় পর্যন্ত অবাধ ট্রাফিকের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩) ভিক্টোরিয়ার তিন কিলোমিটারের মধ্যে খোলা জায়গায় উনুন জ্বালানো বন্ধ করতে হবে।
৪) ওই ঐতিহাসিক সৌধ ঘিরে ত্রিস্তরের সবুজ বলয় গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু হাইকোর্টের এই নির্দেশগুলির কোনওটিই কার্যকর হয়নি। |
বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ ও মৃণালকান্তি চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের করা একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি ছিল। সেখানে সুভাষবাবু জানান, ৪ বছর আগে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, ধর্মতলার বাস টার্মিনাস তিন মাসের মধ্যে সরাতে হবে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় তৎকালীন রাজ্য সরকার। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশই বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। তার পরেও বাস টার্মিনাস সরানোর ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি রাজ্য। সেই সঙ্গে কলকাতা পুলিশের তদানীন্তন কমিশনার হলফনামা দিয়ে হাইকোর্টকে জানিয়েছিলেন, ভিক্টোরিয়ার পূর্ব দিকের রাস্তাকে যানজটমুক্ত করে তোলার জন্য অবাধ ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। সেটাও কার্যকর হয়নি। ভিক্টোরিয়ার পাশের রাস্তা দিয়ে সারারাত ভারী লরি চলে। সুভাষবাবু জানান, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও সেগুলো বন্ধ করার ব্যাপারে কিছুই করেনি রাজ্য।
হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও ভিক্টোরিয়ার চার পাশে তিন কিলোমিটার এলাকার মধ্যে খোলা উনুনের ব্যবহার এখনও পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়নি বলে সুভাষবাবুর অভিযোগ। এ ছাড়া, যানবাহনের ধোঁয়ার কার্বন শুষে নেওয়ার জন্য ভিক্টোরিয়া ঘিরে তিনটি স্তরে বিভিন্ন প্রজাতি ও উচ্চতার গাছ লাগিয়ে সবুজ বলয় গড়ে তুলতে নির্দেশ দেয় আদালত। সেই কাজও শুরু হয়নি বলে জানান সুভাষবাবু। এ দিন তিনি আদালতকে আরও জানান, সরকারে পরিবর্তন আসার পরেও একই অবস্থা চলছে। অধিকাংশ দিনই সরকারি আইনজীবী উপস্থিত থাকেন না অথবা তাঁদের কাছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের নির্দেশ থাকে না। ফলে মামলায় তাঁদের কোনও ভূমিকাও থাকে না।
ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের মুখ্যসচিবকে এ দিন নির্দেশ দিয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকর করতে রাজ্য সরকার কী করেছে, তা সুনির্দিষ্ট ভাবে জানাতে হবে। যদি তা কার্যকর না হয়ে থাকে, তাহলে সে ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, তা তিন সপ্তাহের মধ্যে আদালতকে জানাতে হবে। |