ইতিহাস কানে কানে
কথা বলে রাজস্থানে
বীর-ভূমি রাজস্থান, ইতিহাসপ্রিয় ভ্রমণপিপাষু বাঙালিকে হাতছানি দিয়ে ডেকেছে চিরকাল। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে আমরাও রাজস্থান ভ্রমণের জন্য রওনা দিলাম। ১৬ অক্টোবর মধ্যরাতে ধরলাম হাওড়া-যোধপুর এক্সপ্রেস। সঙ্গে স্ত্রী এবং আরও ৩৬ সঙ্গী।
যোধপুর পৌঁছনোর পরের দিন রওনা হলাম সওয়াই জয় সিংহের গড়া পিঙ্ক সিটি জয়পুরের দু’টি প্রধান দ্রষ্টব্য যন্তরমন্তর (মানমন্দির) ও জয়পুর সিটি প্যালেস দেখতে। যন্তর মন্তর প্রাঙ্গণে চিহ্নিত প্রস্তর খণ্ডের সামনে দাঁড়িয়ে গাইড আমাদের বলে দিলেন, কী ভাবে জয়পুরের স্থানীয় সময় ও ভারতীয় সময় বের করা যাবে। আকাশে ধ্রুবতারার অবস্থান ঠিক করা যাবে কী ভাবে আর জানা যাবে জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত বহু তথ্য। এর পরে টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম সিটি প্যালেসে। গাইড আমাদের নিয়ে গেলেন শিলেখানা বা অস্ত্রাগারে।
রানা ও রাজপুত বীরদের ব্যবহৃত নানা ধরনের অস্ত্র, উষ্ণীষ, বর্ম এখানে রাখা হয়েছে। ঝোলানো আছে হলদিঘাট যুদ্ধের নকশা। কাছেই টেক্সটাইল মিউজিয়ামে রাজপরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত চোখ ধাঁধানো সব পোশাক প্রদর্শিত হচ্ছে। প্যালেসের একটি অংশে রয়েছে পূর্বতন জয়পুর রাজাদের তৈলচিত্র। একে একে দেখলাম মুবারক মহল, মহারানি মহল, দেওয়ান-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস। সিটি প্যালেসে আমার সব থেকে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে, বিশালাকৃতি দু’টি রৌপ্য কলসকে।
বিকেলে দেখলাম বিশুদ্ধ মার্বেলের তৈরি বিড়লা মন্দির। পরের দিন পৌঁছলাম জয়পুর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে পুরনো রাজধানী অম্বর দূর্গে। সম্রাট আকবরের প্রিয় অমাত্য মহারাজ মান সিংহের স্মৃতি বিজড়িত এই দূর্গেও আছে দেওয়ানি আম, দেওয়ানি খাস, শিষমহল, তৎকালীন বাতানুকূল ব্যবস্থা সমন্বিত প্রকোষ্ঠ ইত্যাদি। আর আছে বাংলাদেশের যশোহর থেকে আনা প্রতিষ্ঠিত কালী মূর্তি।
পরের দিন অজমেঢ় যাওয়ার পথে পবিত্র তীর্থ পুষ্কর হ্রদের জল স্পর্শ করলাম। ভারতের এক মাত্র ব্রহ্মা মন্দির দর্শন করে বিকেলে পৌঁছে গেলাম অজমেঢ়ের হোটেলে। কিছুক্ষণ পরে গেলাম খাজা মৈনুদ্দিন চিস্তির সমাধি দরগায়। নিজাম গেট দিয়ে ঢুকে শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম।
অজমেঢ়ে রাত কাটিয়ে উদয়পুর যাওয়ার পথে পরের দিন ঘুরলাম চিতোর দূর্গ। কথিত আছে, সমস্ত গড়ের মধ্যে এটি-ই শ্রেষ্ঠ। বিষ্ণু মন্দির, মীরাবাঈয়ের মন্দির, জয়স্তম্ভ, কালিকাদেবীর মন্দির, পদ্মিনী প্যালেসে বেশ কিছুটা সময় কাটল। কী ভাবে এক প্রাসাদে দাঁড়িয়ে থাকা রূপসী পদ্মিনীর প্রতিবিম্ব আয়নায় প্রতিফলিত হতে দেখেছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন, গাইডের সেই চিত্তাকর্ষক কাহিনী মুগ্ধ করে দিল সকলকে।
রানাদের পুরনো রাজধানী উদয়পুরে রানাদের শিবমন্দির একলিঙ্গজি, নাথদ্বারার কৃষ্ণমন্দির, প্রতাপ সিংহের প্রিয় অশ্ব চেতকের সমাধি ও সুবিখ্যাত সিটি প্যালেস দেখে আমরা রওনা দিলাম শৈল শহর মাউন্ট আবুর দিকে। শারীরিক ভাবে পেরে না ওঠায় পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত অর্বুদাদেবীর মন্দিরে উঠতে পারলাম না। তবে জৈন মন্দিরের ভিতরে অপরূপ ভাস্কর্য দেখে তার আশ মিটিয়ে নিয়েছি।
পরের গন্তব্য জয়সলমীর ও যোধপুর। দূর্গ দেখার পাশাপাশি স্মরণীয় হয়ে আছে, জয়সলমীর থেকে বাস ও পরে উট আর উটের গাড়িতে চড়ে মরু প্রান্তরে ‘স্যাম ডেজার্টে’ পৌঁছে সূর্যাস্ত দর্শন, যোধপুরের উমেদ ভবনে পুরনো মডেলের গাড়ি, নানা ধরনের ঘড়ি, চিত্রিত সেরামিকস্ পাত্রগুলিও বেশ আকর্ষণীয়।
প্রায় ১০ দিনের রাজস্থান ভ্রমণ শেষ করে ২৬ অক্টোবর ট্রেনে উঠলাম। রওনা দিলাম সুজলা সুফলা, শস্য শ্যামলা বঙ্গভূমির দিকে।
(ছবি দু’টি লেখকের পাঠানো।)

লিখুন অনধিক ৫০০ শব্দে। খামে ‘পুজো এক্সপ্রেস’
লিখে পাঠিয়ে দিন: আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ ১০, ডক্টরস কলোনি, সিটি সেন্টার, দুর্গাপুর - ৭১৩২১৬।
অবশ্যই দেবেন ছবি (নিজেদের বাদে)।
ছবি মেল করতে চাইলে: durgapuredit@abp.in
(লেখা নির্বাচনে সম্পাদকীয় বিভাগের বিবেচনাই চূড়ান্ত)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.