|
|
|
|
|
অতীত ও বর্তমান |
|
সত্যিই অদ্ভুত। যখন গ্রামগঞ্জে, অলিতে-গলিতে, আনাচে-কানাচে, যার-তার হাতে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ঠিক সেই সময়ে দাঁড়িয়ে ডাকাতি ঠেকাতে সাবেক-তিরধনুক হাতে পেট্রোল-পাম্প পাহারা দিচ্ছেন এক যুবক। গল্প নয়, কল্পনা নয় একেবারে দিনের আলোর মতো সত্যি! মালদহ জেলার উত্তরপ্রান্তে সামসির কাছে লস্করপুর। সেখানকার ওয়েসিস পেট্রোল পাম্পে এখন পাহারাদার তিরন্দাজ যুবক বছর পঁয়ত্রিশের কালীপদ মণ্ডল। কাছাকাছি গ্রামে বাড়ি। সারা দিন চাষবাস। বিকেল থেকে বাবুদের পাম্পে তিরধনুক হাতে পাহারার কাজ। সন্ধে পর্যন্ত। বেতন মাসে হাজার দেড়েক। ২০১১-এর মে মাসে এই পাম্পটিতেই ভর সন্ধেবেলা ডাকাতি হয়ে গিয়েছে। তার পর থেকে মালিক প্রণব বন্দ্যোপাধ্যায় কালীপদকে বহাল করেছেন পাহারার কাজে। প্রণববাবুর কথায়, পিস্তল-রিভলভার-বন্দুকের লাইসেন্স লাগে, ঝামেলাও অনেক, খরচও বিস্তর। সেদিক থেকে তির-ধনুক নির্ঝঞ্ঝাট। লস্করপুর গ্রামীণ এলাকা। সন্ধের পর লোকজন ঘরে ঢুকে পড়ে, ঘুমিয়ে যায়। তবু সব দেখেশুনে মনে হয় যেন অতীতের ধনুর্বাণ আর এ যুগের দ্রুতগামী বাইক এসে মিশে গিয়েছে এক রেখায়। যেখানে তিরধনুকও যেমন সত্য, তেমন সত্য পেট্রোল-ডিজেল চালিত মোটরবাইক, স্কুটার এবং এসি গাড়ি।
|
শতবর্ষ |
|
কিছু একটা করতে হবে, এই ভাবনায় ১৯০৯-এ কিছু নাটক পাগল যুবক একজোট হয়ে ঠিক করেছিলেন, থিয়েটার করতে হবে। তাই সে দিন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে সৃষ্টি হয়েছিল একটি নাট্যশালা, যার নাম ‘বালুরঘাট থিয়েট্রিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’। প্রয়োজনের তাগিদে ১৯১১-য় নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ হল ‘দি এডোয়ার্ড মেমোরিয়াল ড্রামাটিক ক্লাব’। তার পর ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্টের পর আবার নাম পরিবর্তন। এ বার নামকরণ হল ‘বালুরঘাট নাট্যমন্দির’। বাংলা একাঙ্ক নাটকের জনক মন্মথ রায় দীর্ঘ দিন বালুরঘাট নাট্যমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সম্প্রতি এই সংস্থা নিজস্ব মঞ্চে পরিপূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে একটি সুন্দর প্রযোজনা উপহার দিল বালুরঘাটবাসীকে। কবিগুরুর গল্প অবলম্বনে বীরু মুখোপাধ্যায়ের নাট্যরূপে উপস্থাপিত হল ‘শাস্তি’। এই নাটকের সম্পদ ছিল অভিনয়। গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়েছিল মঞ্চ। সঙ্গে ছিল মানানসই আলো ও আবহ। নাটকটি দর্শকদের প্রভূত প্রশংসা পেয়েছে।
|
সম্প্রীতি |
রায়গঞ্জের গোয়ালপাড়ার ‘মহন্ত মসজিদটি’ সম্প্রীতির পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত। প্রাচীন এই মসজিদের পাশেই রয়েছে একটি রাধাকৃষ্ণের মন্দির। মন্দিরের পূজারি ফটিক মহন্ত এবং তাঁর পরিবারের লোকজন রক্ষা করে চলেছে মসজিদের পবিত্রতা। এ যেন মেদিনীপুরের পাথরা-র ইয়াসিন পাঠানের গল্পের মতো। সম্পত্তি বিনিময় করে ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় এসে এক মুসলিম পরিবারের কাছ থেকে জমিটি পেয়েছিলেন মহন্তরা। সেই জমিতেই ছিল মসজিদটি। পরে মসজিদের পাশে রাধাকৃষ্ণের মন্দির নির্মাণ করলেও মসজিদের মর্যাদা রক্ষায় মহন্তরা একই রকম নিষ্ঠার পরিচয় দেন। প্রতি দিন সন্ধ্যায় মন্দির এবং মসজিদে একই সঙ্গে ধূপ ও মোম জ্বালানো হয়। মন্দিরে হিন্দুরা এসে যেমন পুজো করেন, মুসলমানরাও আসেন মসজিদে নমাজ পড়তে। নেই কোনও অশান্তি বা বিভেদ।
|
ব্যতিক্রমী |
|
দু’চোখে দেখতে না পেলেও গান, কবিতা, আবৃত্তি, নাচ এবং সঞ্চালনার পাশাপাশি হস্তশিল্পেও যে ওরা কতটা ঋদ্ধ, তারই প্রমাণ পাওয়া গেল ইসলামপুর নেতাজি সুভাষ মঞ্চের অনুষ্ঠানে। গত ডিসেম্বরে ‘স্বপ্ন’ আর্তজনের ঠিকানা, ব্রাত্যজনের মেলবক্স এই সংস্থার উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আবহ থেকে শুরু করে সব কিছুই ছিল ভিন্ন স্বাদের। ব্যতিক্রমী। মূল শিল্পী, সঞ্চালক এবং যন্ত্রসঙ্গীতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের পাশাপাশি সহশিল্পী ছিল থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু এবং ইসলামপুর শিশু শ্রমিক আবাসিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। মূলত থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের সাহায্যার্থে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শকরা রীতিমত বাকরুদ্ধ। অন্ধ পড়ুয়াদের বিষাদের গান-কবিতা মন ছুঁয়ে গেল। ওই শিশুরা একটু সুযোগ আর প্রশিক্ষণ পেলে সত্যিই যে যথাযথ শিল্পী হয়ে উঠতে পারে, তার প্রমাণ প্রতিটি দর্শক হৃদয়ে ওরা রেখে গেল। চোপড়ার সুভাষ নগরে ‘ডিবিএম অন্ধ আশ্রমে’র যামিনী ছেত্রী, রাজু ভৌমিক সহ একাধিক শিশু কিশোর-কিশোরী এ দিনের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। বড় মঞ্চে এত দর্শকের মাঝে এ ধরনের অনুষ্ঠান এই প্রথম। দু’চোখে দেখতে না পেলেও সিন্থেসাইজারে রবীন কর্মকার, তবলায় জাকরিয়া বোরকেট্টা এবং সঞ্চালনায় বিপিন এক্কারা নিজেদের সৃজনশৈলীকে তুলে ধরে। ‘মানুষ মানুষের জন্য’, আরও এক বার বুঝিয়ে দিল ওরা।
|
উৎসব |
|
হাড় হিম করা শীত আর কুয়াশা উপেক্ষা করে প্রাক-বড়দিনের উৎসবে মাতলো ‘চণ্ডীপুর ব্রীজ অব হোপে’র শিশু-কিশোর-কিশোরীরা। নাচ-গান-নাটক-অভিনয়ের মধ্য দিয়ে গত ১৫ ডিসেম্বরের শীতল সন্ধ্যাকে উষ্ণ করে রাখল কিছু প্রান্তিক, অনুন্নত সম্প্রদায়ের খুদে শিল্পী। তাদের অভিনয়, নাচ, গানে তেমন শৈল্পিক সুষমা হয়তো প্রতিফলিত হয়নি, কিন্তু তাদের উদ্যম চোখে পড়ার মতো। আসলে চণ্ডীপুর ব্রীজ অব হোপ ‘বিলিভার্স চার্চ’-এর একটি শিশু বিকাশ প্রতিষ্ঠান। সংস্থাটি দুঃস্থ শিশুদের আশার আলো দেখায়। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমণ্ডি ব্লকের অন্তর্গত প্রান্তিক এই চণ্ডীপুর গ্রামে এই সংস্থাটি নীরবে এবং নিরলস ভাবে শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশের কাজটি করে আসছে। এখানকার আদিবাসী, রাজবংশী, মুণ্ডা, প্রভৃতি পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের শিশু ও কিশোরদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করছে। শিশুদের খাবার, পোশাক, লেখাপড়ার সামগ্রী, বিছানা সহ নানা প্রয়োজনীয় উপকরণ বিনামূল্যে বিতরণ করে এই সংস্থা। এদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য লেখাপড়ার প্রত্যেকটি বিষয়ে আলাদা আলাদা শিক্ষক নিযুক্ত রয়েছেন। এখানে নার্সারি থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার ব্যবস্থা আছে। বর্তমানে ছোট-বড় সব মিলিয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ১১৮।
|
উত্তরের কড়চা বিভাগে
ছবি ও লেখা দিলে
পুরো
নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করবেন।
উত্তরের কড়চা
এ বি পি প্রাঃ লিমিটেড
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১ |
|
|
|
|
|
|