দুই শিশুকন্যা-সহ মায়ের অপমৃত্যু হয়েছে। বাঘমুণ্ডির সুইসা থানার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মুকু রায় (২৫) নামের ওই বধূ তাঁর দুই মেয়ে মেঘা রায় (৫) ও বর্ষা রায়কে (৩) নিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় কুয়োয় ঝাঁপ দিয়েছিলেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। তাঁরা ওই বধূকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করলেও মেয়ে দু’টি মারা যায়। মঙ্গলবার সকালে ঘরের ভিতরে বধূটির দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর গলায় কালশিটের দাগ রয়েছে। বধূর বাবা কার্তিক ভাণ্ডারী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, শ্বাসরোধ করে তাঁর মেয়েকে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা খুন করেছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মুকুদেবীর স্বামী প্রদীপ রায়, শাশুড়ি লতিকা রায় এবং দুই দেওর সুদীপ রায় ও অধীর রায়কে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে খুন, প্রমাণ লোপাট ও বধূ নির্যাতনের অভিযোগ হয়েছে। শিশু কন্যা দু’টির দেহ মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছিল। পুলিশ বিডিও’র উপস্থিতিতে দেহ দু’টি তুলে ময়নাতদন্তে পাঠায়। মা ও দুই শিশুর দেহ এ দিন ময়নাতদন্তে করা হয়। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুইসা গ্রামে মুকুদেবীর শ্বশুরবাড়িতে অভাব-অনটন নিয়ে মাঝে মধ্যেই অশান্তি হত। রবিবার সন্ধ্যায় পাড়ার কুয়োর ভিতর থেকে শব্দ পেয়ে বাসিন্দারা দৌড়ে গিয়ে দেখেন কুয়োর ভিতরে মুকুদেবী ও তাঁর দুই মেয়ে পড়ে রয়েছে। বাসিন্দারা মুকুদেবীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেন। কিন্তু তাঁর দুই মেয়ে মারা গিয়েছিল। মুকুদেবীর শ্বশুরবাড়ির লোকজন পুলিশকে খবর দেয়নি। তারা স্থানীয় ভাবে মুকুদেবীর চিকিৎসা করান। দুই শিশুর দেহ বাড়ির বেশ কিছু দূরে মাটি খুঁড়ে পুঁতে দেয়। তারপর এ দিন মুকুদেবীর মৃতদেহ শ্বশুরবাড়ি থেকে মেলায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
মুকুদেবীর বাবা বাঘমুণ্ডি থানার হারুপ গ্রামের বাসিন্দা কার্তিক ভাণ্ডারী বলেন, “রবিবার মেয়ের সঙ্গে অল্প কথা হয়েছিল। সে অচৈতন্য হয়ে পড়ছিল। পাড়ার লোকজনের কাছে শুনেছিলাম, দুই মেয়েকে নিয়ে মুকু কুয়োয় ঝাঁপ দিয়েছিল। মুকু নিজে কুয়োয় ঝাঁপ দিয়েছিল কিনা আমি জানি না। যদি করে, তার কারণ হল ওর শ্বশুরবাড়ির লোকেদের অত্যাচার।” তাঁর অভিযোগ, এ দিন সকালে আত্মীয়দের কাছে খবর পেয়ে এসে দেখি ঘরের মেঝেতে মেয়ের দেহ পড়ে রয়েছে। তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমাকে জানায়, মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু তার গলায় কালশিটের দাগ ছিল। আমি নিশ্চিত শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই আমার মেয়েকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে।” তিনি পুলিশে খবর দেন।
পুলিশ এসে শ্বশুরবাড়ির ঘরের ভিতর থেকে মুকুদেবীর দেহ উদ্ধার করেন। বাড়ির লোকেদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে শিশু দু’টির দেহ পুঁতে রাখা জায়গাটির সন্ধান পায়। এরপর বাঘমুণ্ডির বিডিও শুভঙ্কর রায়ের উপস্থিতিতে দেহ দু’টি পুলিশ উদ্ধার করে। বিডিও বলেন, “শিশু কন্যা দু’টির দেহ দুই-আড়াই ফুট নীচে পাশাপাশি শোয়ানো ছিল। পুলিশ তিনটি দেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়।” মুকুদেবীর বাবা জানান, বছর ছ’য়েক আগে ছোলাভাজা বিক্রেতা প্রদীপের সঙ্গে দেখাশোনা করে কার্তিকবাবু মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। ওর শ্বশুরবাড়িতে অভাব ছিল। তা নিয়ে অশান্তিও হত। কিন্তু এমন ভাবে দুই নাতনি, মেয়েকে হারাতে হবে ভাবতে পারছেন না। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে অনুমান সাংসারিক অশান্তির জেরে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দেহগুলি ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে। |