ইস্টবেঙ্গল-৪
(পেন, টোলগে-২, রবার্ট)
পৈলান অ্যারোজ-১ (প্রথমেশ) |
টোলগে ওজবে অস্ট্রেলিয়ান হয়েও একেবারে ক্রিকেট দেখেন না। টেস্ট সিরিজ ৩-০ হওয়ার দু’দিন পরে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে জানতে চাইছিলেন, “কী রেজাল্ট হয়েছে যেন?”
মার্ক টেলর, মাইকেল ক্লার্কের কীর্তির খবর টোলগে শুনেছেন কি না সন্দেহ থাকছে। টেলর বা ক্লার্ক ট্রিপল সেঞ্চুরি পেরিয়েও ডিক্লেয়ার করে এক আশ্চর্য জলছবি এঁকেছেন খেলোয়াড়সুলভ মনোভাবের। ডন ব্র্যাডম্যানকে টপকাবেন না বলে। যুবভারতীতে টোলগের সামনেও ওই জাতীয় মহান হওয়ার আশ্চর্য সুযোগ এসে গিয়েছিল। দল ৩-১ এগিয়ে, মিনিট পনেরো বাকি। হঠাৎই নির্জীব বল ধরতে গিয়ে প্রতিপক্ষ স্টপার ও কিপার ধাক্কাধাক্কি করে বক্সের বাইরে পড়ে গেলেন। বল বক্সে টোলগের পায়ে। পাশেই পেন।
ফাঁকা গোলপোস্ট ডাকছে, আয়, আয়। হাতে অনন্ত সময়।
অতীব ভদ্র টোলগে রোমান্টিকতার শৃঙ্গে উঠে কি বল গোলের বাইরে মারবেন তখন?
ফুটবল মাঠে এখনও প্রতিপক্ষ চোট পেলে, অধিকাংশ ফুটবলার খেলা থামিয়ে বাইরে মেরে দেন বল। বিশ্বকাপেও, পাড়ার ফুটবলেও। ক্ষুদ্র অংশ বলেন, পেশাদারি যুগে এমন রোমান্টিকতা চুলোয় যাক। ভদ্রতাবোধ তাঁদের কাছে অচল। বিপক্ষ পেনাল্টি বক্সে প্রতিপক্ষ এমন চোট পেলে অনেকে গোল করে যান।
টোলগে দ্বিতীয় পথটাই নিলেন। প্রতিপক্ষের পক্ষে আরও রুক্ষ, নৃশংস পথ। প্রায় হেঁটে হেঁটে বল নিয়ে গিয়ে গোললাইনে দাঁড়ালেন। গোললাইনের উপর নিচু হয়ে মাথা ছুঁইয়ে গোল। প্রতিপক্ষকে ইয়ার্কির স্তরে নামিয়ে। হেডে গোল, এই অস্ট্রেলিয়ানের বেশি নেই। আর একটা হল। কিন্তু সুখবিন্দর সিংহের মতো বিতর্কহীন লোকও বলে গেলেন, “এমন মাথা দিয়ে গোল না করলেই ভাল করত। পা দিয়ে মারলে কিছু বলার ছিল না।” বাড়ি ফেরত টোলগে-ভক্তদের মুখেও গুঞ্জন। |
৪-১ জয়ে টোলগের দল কতটা রোমান্টিক ছিল? কতটা নৃশংস?
ইস্টবেঙ্গল এ বছর কোনও দিন ছন্দবেঙ্গল। কোনও দিন দ্বন্দ্ববেঙ্গল। মঙ্গলবার ছন্দবেঙ্গলই বেশি।
খুঁটিয়ে দেখলে চোখে পড়ে, এই হলুদ-লালে মাত্র এক জন জাতীয় দলের প্রথম এগারোয় ঢোকার উপযুক্ত। মেহতাব হোসেন। বাকিরা বড়জোর অতিরিক্ত তালিকায়। মেহতাবের সঙ্গে তিন বিদেশি মসৃণ চতুর্ভুজ তৈরি করলে ইস্টবেঙ্গল ছন্দবেঙ্গল হয়। মাঝমাঠে পাসের ঢেউ। নইলে দ্বন্দ্ববেঙ্গল। কী ভাবে আক্রমণে উঠবে, তা নিয়ে দ্বন্দ্ব। এই ম্যাচেও পেন-টোলগে বোঝাপড়া অ্যাটাকিং থার্ডে তীক্ষ্ন হলে ইস্টবেঙ্গল ছন্দবেঙ্গল। গোলগুলো তখনই। দ্বন্দ্ববেঙ্গলের মূহূর্তে আবার কিপার গুরপ্রীতকে তিনটে ভাল সেভ করতে হল। ডিফেন্স টালমাটাল তখন।
ও দিকে না তাকিয়ে বরং পেনকে দেখা যাক। পেনই এখন ইস্টবেঙ্গল প্রাণ। ‘অ্যাটাকিং হোল’-এ থেকে এক গোল করলেন, আর দুটোর পিছনে তিনি। টোলগের সেই ‘হেড গোল’টার সময় তিনিও পাশে। ছত্তীশগঢ়ের ম্যাচ কমিশনার কী ভাবে তাঁকে না বেছে টোলগেকে সেরা বাছলেন, প্রশ্ন থাকল।
এমনিতে টোলগের গতি ও বাঁ পায়ের ঝলসানি আটকাতে এখন একটা রাস্তা বেছে নিয়েছেন ভাল ডিফেন্ডাররা। মিডল থার্ডের মুখে বল ধরলে তাঁকে কোনও মতে ইনসাইড কাট করতে দেওয়া যাবে না। ইনসাইড দেখিয়ে আউটসাইড করার অস্ত্র অচল করে দাও। অ্যারোজ ডিফেন্স সেই ফর্মুলা না মানায় ৪ হজম করল। এঁদের দেখে অবাক লাগল একটা ব্যাপারে। এক মাস আগেই এঁরা ডিফেন্সে লোক বাড়িয়ে ইস্টবেঙ্গলকে আটকে দিয়েছিলেন। এ দিন হঠাৎ মুক্তকচ্ছ হলেন কী করে? সুখবিন্দরের হাতে জোরদার ব্যাখ্যা নেই। কিন্তু এটা বাস্তব, তাঁর বিদেশিহীন দল মাঝমাঠ তুলে দিয়েছিল পেন-মেহতাবদের।
মর্গ্যান গত এক বছরে দলে গতি ও ছন্দ এনেছিলেন চার্চিলের প্রাক্তন নওবা-ভাসুমের বোঝাপড়া অন্যতম অস্ত্র করে। নওবার চোটে সেটা ভেস্তে যাওয়ায় কোচ চেষ্টায় পাইতে-রবার্টকে দিয়ে কিছু করার। এঁরাও চার্চিলের পুরনো জুটি। দলের প্রধান চতুর্ভুজের সঙ্গে এই দু’জনের সরলরেখা আলো জ্বালাল। অ্যারোজে গত বারের সেরা সব প্রতিভা থাকলে ইস্টবেঙ্গলকে থামানো যেত। এই দলে অত প্রতিভা নেই। পৈলানের কর্তারাও মনে হয় তা বুঝতে পেরে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। প্রথম দিকে মাঠে ঢাক ঢোল-সহ প্রচুর লোক আনতেন তাঁরা। এখন সব উৎসাহ শেষ।
নতুন উৎসাহ আবার ইস্টবেঙ্গলে। নতুন নিয়মে তারা বহু দিন পরে লিগের এক নম্বরে। একটা ম্যাচ বেশি খেলে। ম্যাচ শেষে যথারীতি জয়ধ্বনি। আগের মঙ্গলবারই এমন একটা ৪-১ ম্যাচের পরে ফুটবলারদের মাঠে আটকে রেখেছিলেন না সমর্থকরা?
ওহ, হ্যা। ভুলে গেছি। আগেই বলা উচিত ছিল। এডমিলসন মার্কেস নামে এক ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড শেষ দশ মিনিটের জন্য নেমেছিলেন। দুটো সিটার পেয়েও গতিমন্থরতার জন্য গোল পেলেন না। বল বেরিয়ে গেল।
টোলগে-পেন ছন্দবেঙ্গলের প্রতীক হলে এডমিলসন দ্বন্দ্ববেঙ্গলের মুখ।
ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, রবার্ট, ওপারা, গুরবিন্দর, হরমনজিৎ, ভাসুম (সুশান্ত), সঞ্জু, মেহতাব (সুবোধ), পাইতে, পেন, টোলগে।
|
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মাটিতে শুয়ে বলে মাথা ছুঁইয়ে গোল করে টোলগে ওজবে যতই আনন্দ করুন কোচ ট্রেভর মর্গ্যান তা মোটেই পছন্দ করেননি। ড্রেসিংরুমে সবার সামনেই তিনি টোলগেকে বলেন, “যখন ওদের গোলকিপার চোট পেয়ে পড়ে আছে তখন ওই রকম ভাবে হেড করে গোল করা উচিত হয়নি।” টোলগের বক্তব্য ছিল, “আমাদের টিম যে ওদের তুলনায় ভাল সেটা বোঝাতেই ওই গোলটা করেছিলাম।” যাতে মর্গ্যান বলেন, “প্র্যাক্টিস ম্যাচে এ ভাবে গোল চলতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলক ম্যাচে নয়।” গোলটি খুশি করতে পারেনি মর্গ্যানের সহকারীদেরও। গোলকিপার কোচ অতনু ভট্টাচার্যের কথায়, “গোলটার পর আমি আর অ্যালভিটো আলোচনা করছিলাম, বিপক্ষকে এই ভাবে হেয় করাটা ঠিক নয়।” |