সম্পাদকীয় ১...
অবাঞ্ছিত, দুর্ভাগ্যজনক
ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বনাম ভারতীয় সেনাধ্যক্ষের মধ্যে তাঁহার জন্মসাল ও অবসরের বয়স লইয়া যে অবাঞ্ছিত কাজিয়া চলিয়াছে, তাহা দুর্ভাগ্যজনক। কাজিয়া আদালত পর্যন্ত গড়াইয়াছে, যেহেতু সরকার সেনাধ্যক্ষের দাবি ও প্রমাণ মানিতে না-চাওয়ায় তিনি সুপ্রিম কোর্টে মামলা ঠুকিয়াছেন। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে সামরিক বাহিনীর প্রধানের সহিত অসামরিক সরকারের এই দ্বন্দ্ব কেবল লজ্জাকর নহে, ভয়ঙ্কর। সেই দ্বন্দ্বের প্রকাশ্য চাপান-উতোর এবং তাহাকে আদালত পর্যন্ত গড়াইতে দেওয়া বিপজ্জনক। সেনাবাহিনী এ দেশে শৃঙ্খলার পরাকাষ্ঠা হিসাবেই গণ্য হয়, এবং নির্বাচিত, অসামরিক, গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বের সরকারের সহিত তাহার সম্মানজনক দূরত্ব এই গণতন্ত্রের এক অসামান্য শক্তি হিসাবে স্বীকৃত।
সেনাধ্যক্ষের বক্তব্য, তাঁহার জন্মসন ভুল ভাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নথিতে অন্তর্ভুক্ত হইয়াছে এবং তিনি সেই ভ্রান্তি শোধন করিতে আগ্রহী। বক্তব্যের সমর্থনে তিনি স্কুল-ছাড়ার শংসাপত্রও পেশ করিয়াছেন, যাহা সর্ব ক্ষেত্রেই দেশে সকলের জন্মসনের প্রমাণপত্র রূপে গ্রাহ্য হইয়া থাকে। একটি প্রশ্ন সঙ্গত। সেনাধ্যক্ষ এত দিন নথিপত্রের এই ভুলটি সংশোধন করিতে উদ্যোগী হন নাই কেন? লক্ষণীয়, সেনাধ্যক্ষ বিজয়কুমার সিংহ তাঁহার অবসরগ্রহণের লগ্ন স্থগিত করিয়া চাকুরির মেয়াদ সম্প্রসারিত করায় আগ্রহী নহেন। এক বারের জন্যও তেমন কোনও দাবি তাঁহার কণ্ঠে উচ্চারিত হয় নাই। বরং এ কথা মনে করার সঙ্গত কারণ আছে যে, এই মামলা দায়ের করার পর তিনি সম্ভবত তাঁহার পদে ইস্তফা দিবেন। আর নিজে হইতে ইস্তফা না দিলে সরকারের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে মামলা করার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রক যে তাঁহার বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক’ ব্যবস্থা লইতে পারে, সে আশঙ্কা সম্পর্কেও তিনি সম্যক অবহিত। তথাপি তিনি যে আদালতের দ্বারস্থ হইয়াছেন, তাহার কৈফিয়ত হিসাবে তিনি আপন সম্মান ও মর্যাদা পুনরুদ্ধার করার যুক্তি দিয়াছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসাবে এটুকু হয়তো তাঁহার প্রাপ্য। কিন্তু একই সঙ্গে, তাঁহার পদাধিকারের কারণেই এই মামলা করা তাঁহার উচিত হয় নাই। মামলা করিবার অধিকার তাঁহার নিশ্চিত আছে, সেই অধিকার প্রয়োগ করিতে আইনত কোনও বাধাও নাই। কিন্তু, এই মামলা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করিল, সেনাধ্যক্ষ তাহা না করিলেই পারিতেন। তবে, এই মামলাটি সরকারের ভূমিকা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ভূমিকা লইয়া প্রশ্ন তোলে। সেনাধ্যক্ষের জন্মসনের নথিতে সংশোধন কী এমন ব্যাপার, যে জন্য এত দিন ধরিয়া প্রকাশ্যে চাপান-উতোর চালাইতে হইবে? খুঁটিনাটি পদ্ধতিগত বিষয়ে আটকা পড়িয়া বৃহত্তর প্রেক্ষিত ও স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে ভুলিয়া যাওয়া ভারতীয়দের একটি পুরানো অভ্যাস। সেনাপ্রধানের সহিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর যে কোনও ধরনের মতবিরোধই এমন প্রকাশ্যে এত দিন ধরিয়া চর্চিত হওয়া অনুচিত। ইহাতে বাহিনীর মধ্যে অসামরিক কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে বিরূপতার সৃষ্টি হইতে পারে। স্বয়ং সেনাপ্রধানের কর্তৃত্ব ও মর্যাদা লাঘব হইতে দেখিলে জুনিয়র অফিসারদের মধ্যে যেমন আজ্ঞাবহতার ঐতিহ্য লঘু হইয়া পড়িতে পারে, তেমনই সমগ্র বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলাপরায়ণতা ও নিয়মানুবর্তিতাও শিথিল হইবার আশঙ্কা। পূর্বতন এন ডি এ সরকারের আমলে নৌসেনাপ্রধান অ্যাডমিরাল বিষ্ণু ভাগবৎকে লইয়া কিছু সমস্যা হইয়াছিল। তিনিও সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে যান, তবে বরখাস্ত হওয়ার পর। সুপ্রিম কোর্টে সরকারের বিরুদ্ধে গিয়া জেনারেল সিংহ হয়তো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মর্মে স্থিত ‘সেনাবাহিনীর উপর অসামরিক কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ’-এর ধারণাটিকে আঘাত করিয়াছেন। তবে সংবেদনশীলতার সহিত বিচার করিলে সরকার এই অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি এড়াইতে পারিত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.