ভোটে উত্তরপ্রদেশ
রাহুল যা চাইবে করব, ঘোষণা প্রিয়ঙ্কার
রনে সুতির শাড়ি। হাসিমুখে বুদ্ধির দীপ্তি আর আত্মবিশ্বাসের ঝলক। স্রেফ তাঁর উপস্থিতির দমকা হাওয়াই যেন শীত-সকালের জড়তা মুহূর্তে ভেঙে দিয়ে গেল!
প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা জানিয়ে দিলেন, ‘‘ভাইয়ের জন্য আমি সব কিছু করতে প্রস্তুত। ও যা চাইবে, তাই করব। প্রয়োজনে অমেঠি-রায়বরেলীর বাইরে গোটা উত্তরপ্রদেশে প্রচারেও যেতে পারি। ফিরে গিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করেই সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।”
উত্তরপ্রদেশ ফিরে পেতে এ বার সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন রাহুল গাঁধী। রাহুলের নেতৃত্ব এবং কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশলের নিরিখে বেশ বড় মাপের ঝুঁকিই নিয়েছেন তিনি। এই মর্যাদার লড়াইয়ে কী হবে প্রিয়ঙ্কার ভূমিকা? এই প্রশ্নটাই কত কয়েক দিন ঘুরপাক খাচ্ছিল রাজনীতির অলিন্দে। প্রিয়ঙ্কার কথা থেকে আজ এই ইঙ্গিত পাওয়া গেল যে, প্রয়োজনে অমেঠি-রায়বরেলীর বাইরে বেরোতে তিনি রাজি। কিন্তু সে কথা তিনি নিজে বলবেন না, যা বলার বলবেন রাহুলই। প্রশ্ন উঠল, রাহুল যদি আপনাকে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিতে বলেন? হেসে জবাব দিলেন, “আমাকে কোথায় কতটা দরকার, রাহুল জানে। আপাতত এই দশটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখছি।”
শেষ পর্যন্ত রায়বরেলী-অমেঠির বাইরে পা রাখবেন কিনা প্রিয়ঙ্কা, তা সময়ই বলবে। কিন্তু মা ও ভাইয়ের লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় দশটি বিধানসভা কেন্দ্রের রাশ এখন তাঁরই হাতে। উত্তরাখণ্ডে প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন সনিয়া। রাহুল প্রচার অভিযান চালাচ্ছেন বুন্দেলখণ্ডে। সেই অবসরে অমেঠি-রায়বরেলীর প্রার্থী মনোনয়ন থেকে প্রচার, যাবতীয় দায়িত্বই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা। শুধু তা-ই নয়, কর্মীদের ‘ভোকাল টনিক’ দিয়ে চাঙ্গা করার ভারও তিনিই নিয়েছেন। আর তাই পাখি পড়ানোর মতো করে বুঝিয়েছেন, “এ বারের লড়াই অন্য বারের মতো নয়। মিশন ২০১২-র ডাক দিয়েছেন রাহুল। এ বার মর্যাদার লড়াই। তোমাদের ওপর ভরসা করেই কিন্তু রাহুলকে কথা দিয়েছি। অমেঠি-রায়বরেলীতে দশে দশ চাই।”
সবার মাঝে রায়বরেলী সফরের ফাঁকে প্রিয়ঙ্কা। মঙ্গলবার। ছবি: পি টি আই
সোমবার রায়বরেলীর ফুরসতগঞ্জের এয়ারস্ট্রিপে প্রিয়ঙ্কার বিমান ছুঁল সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ। সেখান থেকে কিছুটা এগিয়ে বাবুগঞ্জের মোড়ে অবিন্যস্ত ভিড়। থমকে দাঁড়াল কনভয়। পুরনো অভ্যাসবশে চকিতে নেমে পড়লেন সনিয়া-কন্যা। হাঁটু মুড়ে রোয়াকে বসে রোদ পোয়াচ্ছিলেন বৃদ্ধ রাধেশ্যাম। আধপোড়া বিড়ি ছুড়ে ফেলে গলা খাঁকারি দিয়ে উঠলেন, “প্রিয়ঙ্কা মাইয়া কি-ই-ই!” পাশ থেকে তরুণ কণ্ঠ স্লোগান দিল, “ভাইয়াজি (অমেঠি-রায়বরেলীতে এই নামেই পরিচিত প্রিয়ঙ্কা) কি-ই-ই!”
বাবুগঞ্জ-গৌরীগঞ্জ হয়ে প্রিয়ঙ্কার কনভয় সোজা পৌঁছে গেল মুন্সিগঞ্জে সঞ্জয় গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল সংলগ্ন গেস্ট হাউসে। কিন্তু রাস্তায় ভিড় দেখা মাত্রই গাড়ির গতি কমালেন। জানলার কাঁচ নামিয়ে হাত নাড়লেন। উপচে পড়ল জনতার উচ্ছ্বাস! কিন্তু গেস্ট হাউসে পৌঁছে আর বাইরে পা রাখা নয়। বরং বেলা সাড়ে ১১টা থেকে উঠোনেই শামিয়ানা টাঙিয়ে সন্ধে পর্যন্ত চলেছে ভাইয়াজি-র দরবার। চেয়ারে নয়। টেবিলে চড়ে, পা দুলিয়ে সেই দরবার চালিয়েছেন আদ্যোপান্ত বৈঠকী মেজাজে। অমেঠি লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্র ধরে ধরে ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তরের কংগ্রেস কর্মীদের ডাকা হয়েছে সেখানে। গত বার মাত্র চারশো ভোটে অমেঠির তিলোই কেন্দ্র হারিয়েছিল কংগ্রেস। সেই তিলোইয়ের কর্মীদের কাছেই প্রিয়ঙ্কা জানতে চেয়েছেন, “এ বার পরিস্থিতি কী? আর কিন্তু কোনও কোন্দল দেখতে চাই না।” বাধ্য শিশুর মতোই সমস্বরে জবাব এসেছে, “না না, দিদি আর হবে না!” জগদীশপুরের পাঁচ বারের কংগ্রেস বিধায়ক বৃদ্ধ রামসেবক ধোবিকে জানিয়ে দিয়েছেন, “বাবুজি এ বার আরাম করো। আর ভাইপোকে আশীর্বাদ করো, ও যেন জিততে পারে।” গৌরীগঞ্জের টিকিটের আশায় ছিলেন ফতেবাহাদুর। তাঁকে মুখের উপর বলে দিয়েছেন, “নঈম আপনার থেকে যোগ্য। বেগড়বাই না করে ওঁর সঙ্গে কাজ করুন।” ফতেবাহাদুর টুঁ শব্দ করেননি। বাইরে তাঁর সমর্থকদের লম্ফঝম্ফও তাতেই বন্ধ হয়েছে।
মঙ্গলবার অমেঠির গেস্ট হাউস ছেড়ে জগদীশপুর হয়ে রায়বরেলীর অতিথিনিবাসে দরবার বসান সনিয়া-কন্যা। পথে এক বন্ধ কারখানার কর্মীরা তাঁর পথ আগলে দাঁড়ালেন। কর্মীদের অভাব অভিযোগ শুনলেন প্রিয়ঙ্কা। ভবিষ্যতে সহযোগিতার আশ্বাসও দিলেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতা হল সেখানেই। এর পর গত কালের মতোই রায়বরেলীর পাঁচ বিধানসভা কেন্দ্রের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক ও প্রার্থী-নির্বাচন প্রক্রিয়া চলল সন্ধ্যা পর্যন্ত। গোটা উত্তরপ্রদেশে হাতে গোনা যে ক’টি আসনে কংগ্রেস এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেনি, অমেঠি-রায়বরেলী তার মধ্যে অন্যতম।
বাইশ বছর ধরে রাজ্যে ক্ষমতার বাইরে থাকা কংগ্রেস-কর্মীদের প্রিয়ঙ্কা বলেছেন, “সরকার বানাতে যদি বা না-ও পারে কংগ্রেস, এ বার লখনউতে কংগ্রেস ছাড়া সরকার হবে না।” তবু অমেঠি-রায়বরেলীর লড়াই যে সহজ নয়, সেটাও তাঁর অজানা নয়। এখনও তো দশে পাঁচ। দিল্লি ফেরার আগে তাই বলে গেলেন, “এ বার আর ওপর-ওপর রোড শো করব না। গ্রামে গ্রামে যাব। প্রয়োজনে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরব। কারণ লড়াইটা এ বার ঘুরে দাঁড়ানোর।” ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে গাঁধী পরিবারের ‘তুরুপের তাস’টি কি এ বারও সীমিত থাকবে অমেঠি-রায়বরেলীর লক্ষ্মণরেখার মধ্যেই? জবাব দেবেন রাহুল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.