নতুন ধান ঘরে তোলার আনন্দে নবান্ন উৎসব। এই উৎসবে বিষাদের ছায়া পড়ে যখন পাশের গ্রামের বৃদ্ধা ও বৃদ্ধ ভিক্ষুক খোঁড়াতে খোঁড়াতে ভিক্ষার থলি নিয়ে নবান্নের দরজায় কড়া নাড়েন। বৃদ্ধার নাম মাদো মুর্মু। বৃদ্ধের নাম মঙ্গল মুর্মু। দু’জনেই দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডি থানার লোহাগঞ্জ গ্রামের নয়াপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা। বৃদ্ধার বয়স আনুমানিক ৬৫ বছর। কোমর সোজা করতে পারেন না। লাঠির সাহায্যে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলেন। দিনে বড়জোর ১২-১৩টি বাড়ি। ছেলেমেয়েরা বিয়ে করে আলাদা হয়েছে, খবর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না। ওঁর রেশন কার্ড হারিয়ে গিয়েছে বহু দিন। ভোটার পরিচয়পত্র নেই। কাজেই বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা ও অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধার বালাই নেই। মঙ্গল মুর্মু জন্ম-প্রতিবন্ধী। মধ্য-ষাটের এই বোবা ব্যক্তির ডান-পা খোঁড়া। তাঁর ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, প্রতিবন্ধী পরিচয় পত্র আছে। এমনকী ব্যাঙ্কে কিছু টাকাও আছে। প্রতিবন্ধী হিসেবে যা তাঁর প্রাপ্য। কিন্তু তুলতে পারেন না। তাঁর স্ত্রী ও তিনি ব্যাঙ্ক ও পঞ্চায়েত অফিসে কিছু দিন ঘুরে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। মঙ্গল মুর্মুর স্ত্রী অন্যের বাড়ি কাজ করেন। তাঁদের কন্যা প্রতিবন্ধী।
এখন আকাশে বাতাসে নবান্নের গন্ধ। কিন্তু ‘আমার আনন্দ সকলের আনন্দ হোক’ এই বাণী থেকে আমরা আজ শত যোজন দূরে। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা মাদো মুর্মু, মঙ্গল মুর্মুর বিষয়গুলি বার বার এড়িয়ে চলেন। অথচ তাঁদের মূল উদ্দেশ্য নাকি উন্নয়ন। |
গত ১১ অগস্ট, ২০১১-এ পশ্চিমবঙ্গের রেজিস্টার অব কো-অপারেটিভ সোসাইটিজ (৬২৩৩/১-৭২৯/৪৯) দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সমবায় কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্কের নির্বাচিত বোর্ড অব ডাইরেক্টরদের বাতিল করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সমবায় আইনের ২০০৬-এর ১৩৪সি (১১)(সি) ধারা অনুযায়ী। ওই আইনের ১৩৪সি(১২)(বি) ধারা অনুযায়ী বাতিলের দু’মাসের মধ্যে ভোট হওয়ার কথা। যদি নির্বাচন সম্ভব না হয়, ১৩৪সি(১২)(বি) ধারা মতো রাজ্য সরকার ছ’মাসের মধ্যে নির্বাচন করার আদেশ দিতে পারেন। ছ’মাস অতিক্রান্ত হলে যে কী ভাবে নির্বাচন হবে, তার কোনও বিধান নেই। মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক যিনি পরিচালন সমিতির কাজকর্ম দেখছেন, তিনি নির্বাচন করার কোনও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। |
গত ডিসেম্বরে অরুণাচল প্রদেশের বমডিলায় গিয়ে পায়ে হেঁটে শহর দেখতে বেরিয়েছিলাম। হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। একজন প্লাস্টিকের থলেতে আনাজ নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁকে দাম জিজ্ঞেস করলাম। প্রায় অগ্নিমূল্য। আমরা বাঙালি জেনে আপ্লুত হয়ে পড়লেন। ওঁর নাম সত্য বর্মন। বাড়ি দিনহাটার মাতালহাটে। তিরিশ বছরের যুবক, বাড়িতে বিধবা মা, স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে রেখে বমডিলায় এসেছেন। বিপিএল তালিকায় ওদের নাম আছে। সম্বল কাঁচা জীর্ণ একটা বাড়ি, আর তিন কাঠা জমি। আসলে কৃষি শ্রমিক, কিন্তু এলাকায় কাজ পান না। তাই দৈনিক ২৬০ টাকা মজুরিতে রাজমিস্ত্রির জোগানদারের কাজ করতে বমডিলায় আসা। থাকার খরচ লাগে না, কিন্তু খাওয়া দৈনিক একশো টাকা। শীতবস্ত্র নেই। ওঁর মন পরে থাকে মাতালহাটে। ওঁর মা বিধবা ভাতা পান না। পরিবার ইন্দিরা আবাস যোজনায় ঘর পায়নি। ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে সত্য বর্মন কাজ পাননি। সত্যদের মতো অনেক মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে ঘর ছেড়েছেন। ওঁদের ফিরিয়ে এনে কাজের সুযোগ করে দেওয়া যায় না কি? কর্তৃপক্ষ কি এ ব্যাপারে সদয় হবেন? |
মোবাইল ফোন নবীন প্রজন্মের কাছে আজ একটা সম্পদ বিশেষ। দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে মোবাইল নামক বস্তুটি আজ অবিচ্ছেদ্য। কিন্তু আমার বক্তব্য বা বিরক্তি আজকাল মোবাইল ফোনে অহরহ এসএমএস-এর দৌরাত্ম্য নিয়ে। আগেকার টেলিগ্রামের মতো মোবাইলে এসএমএস পাঠাতে বা পেতে খুবই সুবিধে। যখন খুশি বা যে কোনও জায়গায় এসএমএস-এর মাধ্যমে বার্তা পৌঁছে যায়। কিন্তু বিরক্তি লাগে বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থার বিজ্ঞাপনের বহর দেখে। আজকাল আবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু তথাকথিত সংস্থা। এদের ইঙ্গিতপূর্ণ এসএমএস সাহসী হচ্ছে ক্রমশ। উঠতি বয়সি ছেলেমেয়েদের বিপাকে ফেলতে যা যথেষ্ট। এদের এখনই লাগাম টানা উচিত। তা ছাড়া অর্থের বিনিময়ে বিজ্ঞাপন সর্বত্র দেওয়া হয়। কিন্তু মোবাইলের বেলায় এরা পার পেয়ে যায়। মোবাইল মালিককে এ ভাবে বঞ্চিত করা কতটা অধিকারসম্মত? |