৭৫ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন। কথা ছিল এখানে চালু হবে ১০ শয্যাবিশিষ্ট অন্তর্বিভাগ। কিন্তু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা হয়নি। ফলে চালু করা যায়নি অন্তর্বিভাগটি। চিত্রটি আমতা ২ ব্লকের অধীন গাজিপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের।
এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শুধুমাত্র বর্হিবিভাগ চলে। বছর পাঁচেক আগে জেলা স্বাস্থ্য দফতর ঠিক করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে ১০ শয্যার অন্তর্বিভাগে পরিণত করা হবে। সেই মতো হাওড়া জেলা পরিষদ জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্প (এনআরএইচএম)-এ হাসপাতাল ভবন তৈরির কাজ শুরু করে। এর জন্য বরাদ্দ করা হয় ৭৫ লক্ষ টাকা।
মাস ছয় আগেই ভবনটি তৈরি করে আমতা ২ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী না-নিয়োগ হওয়ার ফলে স্বাস্থ্য দফতর এটি হাতে পেয়েও এখানে অন্তর্বিভাগ চালু করতে পারছে না।
হাসপাতালের ভবনে ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। জল তোলার জন্য বসানো হয়েছে আরও কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে বৈদুতিক পাম্প। অথচ এই সব দেখাশোনার জন্য কোনও নজরদারির ব্যবস্থা নেই। ফলে মূল্যবান পাম্প-এর যন্ত্রাংশ যে কোনও দিন চুরি হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্তারাই।
১০ শয্যার অন্তর্বিভাগ চালু করতে হলে প্রয়োজন দু’জন চিকিৎসক, দু’জন নার্স, দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এবং দু’জন ঝাড়ুদার। এ ছাড়াও, প্রয়োজন দু’জন ফার্মাসিস্টের। একটি পদেও নিয়োগ হয়নি বলে ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
আপাতত স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে রয়েছেন একজন মাত্র চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। পুরনো বাড়ি থেকে বর্হিবিভাগটি উঠে এসেছে নতুন ভবনে। সপ্তাহের ছয় দিন এখানেই বর্হিবিভাগটি চলে। ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন এক জন করে চিকিৎসক এসে চিকিৎসার কাজ করেন। সপ্তাহে এক দিন করে বর্হিবিভাগে রোগী দেখতে আসেন বিএমওএইচ অভিজিৎ ভট্টাচার্য নিজেও। গাববেড়িয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয়েছে একজন ফার্মাসিস্টকে। সপ্তাহে তিন দিন এখানে বসেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। তাঁর জন্য একটি পৃথক চেম্বার করে দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্থায়ী কর্মী বলতে ওই চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। তিনিই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দরজার চাবি খোলেন। তিনিই বন্ধ করেন। ফার্মাসিস্ট কোনও দিন গরহাজির থাকলে ওই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীই চিকিৎসককে ওষুধপত্র দেওয়ার কাজে সাহায্য করেন।
বিএমওএইচ বলেন, “ভবনটিই শুধু হাতে পেয়েছি। অন্তর্বিভাগ চালু করার জন্য ১০টি শয্যাও চাইলেই পেতে পারি। কিন্তু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী না-আসায় অন্তর্বিভাগ চালু করতে পারছি না।”ভবনটির চারি দিকে আবর্জনায় ভরে গিয়েছে। ভবনটির রক্ষণাবেক্ষণও হচ্ছে না ঠিক ভাবে। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি ভবনটি দেখার কেউ নেই। এ বিষয়ে বিএমওএইচ বলেন, “আমরা কী করব! অন্তর্বিভাগ চালু হয়ে গেলে এখানে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা থাকতেন। তখন দেখভালের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হত না।” জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে। তারাই এই সব পদে নিয়োগ করবে। তাঁর আরও মন্তব্য, “আসলে রাজ্য জুড়েই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব রয়েছে। তার ফলেই জেলার আরও অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর পদ শূন্য রয়েছে।” |