ফের কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠল করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে।
মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে এই হাসপাতালেরই এক চিকিৎসককে কর্তব্যে গাফিলতির জন্য ‘শো-কজ’ করা হয়। সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে শুক্রবার এক বালকের থুতনি কেটে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ক্ষতস্থানে সেলাই করতে রাজি হননি বলে অভিযোগ ওঠে। পরে তাঁকে ‘শো-কজ’ করা হয়। রবিবার ওই হাসপাতালেরই আর এক চিকিৎসক ঐন্দ্রিলা বসুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল, মাত্র ৮ মাসের এক শিশুর তিনি চিকিৎসা করতে চাননি।
শিশুটির বাবা স্থানীয় অভয়পুরের বাসিন্দা তপন কর্মকার জানান, এ দিন বাড়িতেই মেঝেয় বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ পড়ে যায় তাঁর সন্তান অনীক। জ্ঞান হারায় সে। কিন্তু ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে প্রথমে কাউকে ‘দেখতেই পাননি’ তপনবাবুরা। তপনবাবু বলেন, “বেশ কিছু ক্ষণ পরে ওই চিকিৎসকের দেখা পাই। তিনি ছেলেকে ছুঁয়েও দেখেননি। সোজা বললেন, কোনও শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে।” বাধ্য হয়ে তপনবাবু তখন করিমপুরেরই এক চিকিৎসক সুব্রত সাহার ব্যক্তিগত চেম্বারে নিয়ে গিয়ে ছেলেকে দেখান। সুব্রতবাবু বলেন, “বাচ্চাটির সিটি স্ক্যান করতে বলা হয়েছে। এখন সে ভাল রয়েছে।”
ওই হাসপাতালের সুপার বিধুভূষণ মাহাতো বলেন, “বাচ্চাটিকে যখন হাসপাতালে আনা হয়েছিল, তখন জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ওই চিকিৎসকের উচিত ছিল সঙ্গে সঙ্গে তার কী হয়েছে, তার প্রাথমিক চিকিৎসা করা। তা ছাড়া, যদি শিশু বিশেষজ্ঞের কাছেও পাঠাতে হয়, তা হলে তিনি প্রাথমিক চিকিৎসার পরে অন্য হাসপাতালে বাচ্চাটিকে ‘রেফার’ করে দিতে পারতেন। কেন তিনি তা করেননি, তা খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
চিকিৎসক ঐন্দ্রিলাদেবীর অবশ্য দাবি, “বাচ্চাটিকে দেখে মনে হচ্ছিল, খুব দ্রুত তাকে কোনও শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। আমি যদি সময় নষ্ট করতাম, তাতে বাচ্চাটিরই ক্ষতি হত।” কিন্তু কোনও সরকারি হাসপাতালে ‘রেফার’ করলেন না কেন? ঐন্দ্রিলাদেবী বলেন, “বাচ্চাটির বাড়ির লোক খুব তাড়াহুড়ো করছিলেন। ফলে, নিয়ম মেনে ‘রেফার’ করে উঠতে পারিনি।” তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েক জনের বক্তব্য, ‘রেফার’ করা হলে ওই বাচ্চাটিকে নিয়ে যেতে হত প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরের কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে। তাতে কম করেও আড়াই ঘণ্টা সময় লাগত। সেক্ষেত্রে স্থানীয় ভাবে কোনও চিকিৎসককে দেখানোয় সময় কম নষ্ট হয়েছে।
নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত হালদার বলেন, “সব হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। কিন্তু তা বলে কোনও বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়লে তার প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু করা হবে না, এ আবার কেমন কথা! ওই চিকিৎসকের উচিত ছিল প্রাথমিক ভাবে শিশুটির কী হয়েছে, তা বোঝার চেষ্টা করা। পরে ‘রেফার’ করার প্রসঙ্গ। তিনি শিশুটিকে দেখতেই চাননি বলে অভিযোগ উঠেছে।”
কিন্তু বারবার এই হাসপাতাল নিয়ে কেন অভিযোগ উঠছে? অমিতবাবু বলেন, “খুব তাড়াতাড়িই ওই হাসপাতালের সব চিকিৎসককে নিয়ে আলোচনায় বসে দেখতে হবে, ঠিক কোথায়, কী সমস্যা হয়েছে।” |