মদনপুর কেন্দ্রীয় আদর্শ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিগ্রহ নিয়ে অভিযোগ হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। বরং পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএম নেতারা।
শনিবার দুপুরে এই বিদ্যালয়ে ঢুকে সহকারী প্রধানশিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্কুলেরই পরিচালন সমিতির সদস্য তৃণমূলের স্থানীয় নেতা দিলীপ সাহার বিরুদ্ধে। ফেল করা ছাত্রদের পাশ করানোর দাবি করতে গিয়ে তিনি দীপক গুহরায় নামে ওই শিক্ষককে চড় মারেন বলে চাকদহ থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। ওই থানাতেই মারধরের পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন দিলীপবাবুও। তার ভিত্তিতে পুলিশ ওই দু’জনের বিরুদ্ধেই সমান চারটি ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছে। সব ক’টি ধারাই জামিনযোগ্য।
স্থানীয় সিমিএম নেতাদের অবশ্য দাবি, মদনপুরের ঘটনায় পুলিশ ঢিলেমি করলেও সম্প্রতি মাজদিয়ার সুধীরঞ্জন কলেজের অধ্যক্ষকে নিগ্রহের ঘটনায় রাতারাতি এসএফআই সমর্থক তিন ছাত্রের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযোগ দায়ের করে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে কলেজে শিক্ষকদের মারধরের পাশাপাশি সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগও করা হয়েছিল। কিন্তু মদনপুর স্কুলের ঘটনায় ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে তেমন কোনও অভিযোগ করা হয়নি। সিপিএমের চাকদহ জোনাল কমিটির সম্পাদক অমল ভৌমিকের দাবি, “মাজদিয়া আর মদনপুরের ঘটনা পাশাপাশি রাখলেই পরিস্কার হয়ে যাবে যে প্রশাসন কতটা নিরপেক্ষ।” জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমন মিশ্র অবশ্য বলেন, “যেখানে যেমন অভিযোগ দায়ের হয়েছে, সেখানে তেমনই ধারা দেওয়া হয়েছে।” তাঁর কথায়, “মদনপুরের ঘটনায় দু’পক্ষই অভিযোগ করেছে। ফলে পুরো বিষয়টাই আমরা ভাল করে তদন্ত করে দেখছি। তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তাকে অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে।”
তৃণমূল অবশ্য প্রকাশ্যেই দিলীপ সাহার পাশে দাঁড়িয়েছে। জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় বিধায়ক নরেশ চাকি বলেন, “ওই সহকারী প্রধানশিক্ষক স্কুলটাকে সিপিএমের পার্টি অফিস বানিয়ে ফেলেছেন। তাই তাঁকেই গ্রেফতার করা উচিত। দিলীপবাবুকে পুলিশ যদি ধরে, তাহলে ওই শিক্ষককেও অবশ্যই গ্রেফতার করতে হবে।” একের পর এক কলেজে অধ্যক্ষ নিগ্রহের ঘটনার পরে মদনপুরের স্কুলে শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনার তীব্র নিন্দা করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। রবিবার কৃষ্ণনগরে তিনি বলেন, “শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক, দুর্ভাগ্যজনক এবং লজ্জারও। কঠোর হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে অভিযুক্তদের শাস্তি দিতে হবে, তা সে যে দলেরই হোক না কেন। আমরা ছাত্র পরিষদের ছেলেদের বলেছি, তোমরা আন্দোলন কর, কিন্তু শিক্ষকদের অপমান করবে না, ঘেরাও করবে না।” |