নিজস্ব সংবাদদাতা • রায়গঞ্জ |
জাতীয় স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সফল হল সমাজ কল্যাণ দফতরের অধীনস্থ রায়গঞ্জের সুর্যোদয় মূক ও বধির আবাসিক হোমের প্রতিবন্ধী আবাসিকেরা। সর্বভারতীয় বধির ক্রীড়া পরিষদ, কেন্দ্রীয় যুব ক্রীড়া সংস্থা ও টাটা স্টিল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে আয়োজিত ১৭ তম জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হোমের মূক ও বধির তিন আবাসিক বিভিন্ন বিভাগে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান দখল করে একটি রূপো ও তিনটি ব্রোঞ্জ পদক দখল করে সাড়া ফেলে দিয়েছে। গত ১১-১৩ জানুয়ারি ঝাড়খন্ডের জামশেদপুর জেআরডি টাটা স্টেডিয়ামে জাতীয় স্তরের ওই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল। ১৭টি রাজ্যের প্রায় সাড়ে ৫০০ জন মূক ও বধির কিশোর কিশোরী ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। সেখানে সূর্যোদয়ের চার জন মূক ও বধির আবাসিক কিশোর কিশোরী অংশ নিলেও তিন জন সফল হয়। তার আগে গত ৮ জানুয়ারি রাজ্য বধির সংস্থার উদ্যোগে শিলিগুড়ির শক্তিগড় বিদ্যাপীঠ মাঠে আয়োজিত উত্তরবঙ্গ বধির ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সফল হয় হোমের ওই চার মূক ও বধির আবাসিক। |
জাতীয় স্তরের ওই প্রতিযোগিতায় সফল হওয়ায় হোমের কৃতীরা আগামী ২৬ মে থেকে ৬ জুন দক্ষিণ কোরিয়ার সিওলে আয়োজিত ‘ইন্টারন্যাশনাল এশিয়া প্যাসিফিক গেমস ফর দ্য ডেফ’ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ছাড়পত্র পেয়েছে। হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় স্তরের ওই প্রতিযোগিতায় সাধারণ বিভাগে হোমের মূক ও বধির আবাসিক কিশোর সুজেন মন্ডল ১০০ মিটার রিলে রেস প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান দখল করে রূপো জেতে। ওই বিভাগেই হোমের অপর মূক ও বধির আবাসিক কিশোরী রুম্পা সাহা ১০০ ও ৪০০ মিটার রিলে রেস প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান দখল করে দুটি ব্রোঞ্জ পদক পায়। এ ছাড়াও জুনিয়ার বিভাগে হোমের আরেক মূক ও বধির আবাসিক বিধান কর্মকার ৪০০ মিটার রিলে রেস প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান দখল করে একটি ব্রোঞ্জ পদক দখল করে। উদ্যোক্তাদের তরফে কৃতীদের পদকের পাশাপাশি শংসাপত্র দিয়েও পুরস্কৃত করা হয়েছে। রবিবার সকালে জামশেদপুর থেকে কলকাতা হয়ে রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় সূর্যোদয় মূক ও বধির আবাসিক হোমে ফেরে কৃতী মূক ও বধির কিশোর কিশোরীরা। জাতীয় স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সফল হওয়ায় হোম কর্তৃপক্ষের তরফে তাদের সংবর্ধনা দেওয়ার পাশাপাশি বিশেষ খাওয়া দাওয়ারও আয়োজন করা হয়। পটকা ফাটিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন হোমের শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী থেকে শুরু করে প্রায় ৮০ জন মূক ও বধির আবাসিক কিশোর কিশোরী। সুর্যোদয় মূক ও বধির আবাসিক হোমের অধ্যক্ষ পার্থসারথি দাস বলেন, “হোমের ওই তিন মূক ও বধির আবাসিক কিশোর কিশোরী হোম তথা জেলার মুখ উজ্বল করেছে। তাদের এই সাফল্যে আমরা খুশি। হোমের ক্রীড়া পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। আশা করছি, ওই তিন জন সিওলে আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতায় সফল হয়ে হোমের মুখ উজ্বল করবে!” সূর্যোদয় মূক ও বধির হোমের আবাসিকরা জাতীয় স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সফল হওয়ায় খুশি উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরাও। জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোক্তার আলি সর্দার বলেন, “শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সূর্যোদয়ের মূক ও বধির আবাসিকরা জাতীয় স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সফল হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জেলা পরিষদের তরফে কৃতীদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে।” |