|
|
|
|
ভি এসের পদত্যাগের ‘চালে’ বিড়ম্বনায় কারাট |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
সামনে দলের রাজ্য সম্মেলন। একটি বিধানসভা কেন্দ্রে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ উপনির্বাচনও আসন্ন। এই জোড়া উপলক্ষকে মাথায় রেখেই কংগ্রেস এবং সিপিএমের একাংশ কি ‘হাত মিলিয়ে’ ভি এস অচ্যুতানন্দনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এনেছে? ভিজিল্যান্স ও দুর্নীতি দমন শাখায় কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভি এসের নামে এফআইআর দায়ের হতেই এই প্রশ্নে তপ্ত হয়ে উঠেছে কেরল রাজনীতি! যার ফলে বিরোধী দলনেতার পদ থেকে ভি এসের ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছায় সম্মতি দিতে পারছেন না সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট।
দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর নীতি মেনে ভি এস যদি বিরোধী দলনেতা হিসাবে পদত্যাগ করেন, তা হলে রাজ্য সম্পাদকের পদ থেকে পিনারাই বিজয়নকেও ইস্তফা দিতে বলতে হবে কারাটকে! লাভালিন-মামলায় অভিযুক্ত বিজয়নকে কেন এত দিন পদে রাখা হয়েছে, তা নিয়েই দলে প্রশ্ন আছে। কেরল সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, রাজ্য সম্মেলনের আগে তাঁকে ‘বেকায়দা’য় ফেলার চেষ্টা হচ্ছে বুঝেই পাল্টা চাল চেলেছেন অশীতিপর ভি এস। নিজের পদত্যাগের ইচ্ছা কারাটকে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বিলক্ষণ জানেন, তাঁর পদত্যাগে কারাট সম্মতি দিলে দলেই বিজয়নকে নিয়ে প্রশ্ন উঠবে!
ভি এসের ‘চালে’ আপাতত ‘ফল’ মিলেছে। কেরল সিপিএম এবং খোদ কারাটকে আপাতত ভি এসের পাশে দাঁড়াতে হয়েছে। কেরল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং বিগত এলডিএফ জমানায় ভি এস মন্ত্রিসভার সদস্য এম এ বেবি যেমন রবিবার আনন্দবাজারকে বলেছেন, “রাজনৈতিক এবং আইনগত ভাবে আমরা এই প্রশ্নে লড়াই করব। দলীয় স্তরে খোঁজখবর নিয়ে আমরা জেনেছি, তাঁর এক আত্মীয়কে জমি পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ভি এস কোনও সুযোগ-সুবিধা নেননি। প্রাক্তন সেনা-কর্মী হিসাবে ওই ব্যক্তিকে জমি দেওয়ার কথা বলেছিল ১৯৭৭ সালে করুণাকরনের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার। কিন্তু কাসারগোড় জেলায় ২.৩৩ একরের জমিটির মালিকানা অন্যের হাতে ছিল বলে ওই ব্যক্তি জমি হাতে পাননি। আমাদের সরকারের কাছে ফের আবেদন করায় মুখ্যমন্ত্রী ভি এস আইন দফতরকে বিষয়টি দেখতে বলেন। ওই ব্যক্তি কিন্তু এখনও জমির অধিকার পাননি। সুতরাং, ভি এস-কে দুর্নীতিগ্রস্ত বলার সুযোগ কোথায়?”
আনুষ্ঠানিক ভাবে দল তাঁর পাশে দাঁড়ালেও সিপিএমেরই একাংশ ভি এস-কে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করেছে কি না, এই প্রশ্নেই সরগরম কেরল রাজনীতি। সিপিএমের এক তরুণ সাংসদের কথায়, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভি এসের যে ধর্মযোদ্ধার ভাবমূর্তি, তাতে কালি ছেটানোর জন্য সময় বুঝে একটা চেষ্টা করা হয়েছে।” কোচি থেকে রাজ্য কংগ্রেসের এক নেতা আরও খোলসা করে বলছেন, “ভি এস মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কী নোট দিয়েছিলেন, কী কাগজপত্র কোথায় চালাচালি হয়েছিল, সংবাদমাধ্যমের হাতে সে সব পৌঁছে দিতে সক্রিয় সিপিএমেরই বিজয়ন-গোষ্ঠীর একাংশ! এর থেকেই তো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বুঝতে পারা যায়!”
কেরলের প্রধান শাসক দল কংগ্রেস এবং প্রধান বিরোধী দল সিপিএম দুই শিবিরেরই একাংশের বক্তব্য, ভি এসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এখন সামনে আনার পিছনে ‘পারস্পরিক স্বার্থ’ কাজ করেছে। ইউডিএফের একের পর মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করাতে ‘বাধ্য’ করে এবং তা নিয়ে জনদরবারে প্রচার করে উম্মেন চান্ডির সরকারকে লাগাতার নাজেহাল করে যাচ্ছেন ভি এস। দলের মধ্যেও বিজয়ন এবং তাঁর অনুগামীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি একই রকম সরব। এই অবস্থায় ভি এসের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে আসন্ন উপনির্বাচনে যেমন সিপিএমকে ‘দুর্বল’ করে দেওয়া যায়, তেমনই সম্মেলন-পর্বে বিজয়ন-গোষ্ঠীও ভি এস এবং তাঁর অনুগামীদের কোণঠাসা করার নতুন সুযোগ পায়!
বস্তুত, এর্নাকুলাম জেলার পিরাভোম বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনকে ঘিরেই এখন কেরল-রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে। কেরল কংগ্রেস (জে)-র প্রবীণ নেতা এবং অসামরিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী টি এম জ্যাকব গত ৩১ অক্টোবর প্রয়াত হওয়ার পর থেকে ওই আসনটি শূন্য। ১৪০ আসনের কেরল বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার ৭১। গত বিধানসভা ভোটে ইউডিএফ সরকার গড়েছিল ৭২টি আসন পেয়ে। এখন উপনির্বাচনে পিরাভোম আসনটি হাতছাড়া হলে তাদের শক্তি কমে দাঁড়াবে ৭১। অর্থাৎ দড়ির উপর দিয়ে হাঁটতে হবে সরকারকে!
কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে এর্নাকুলামের দায়িত্বপ্রাপ্ত এ বিজয়রাঘবন বলছেন, “ইউডিএফের সমস্যা যত বাড়ছে, উপনির্বাচন ঘোষণায় তত দেরি হচ্ছে!” পক্ষান্তরে, বিজয়ন-কারাটদের
উপরে চাপ বাড়িয়েই চলেছেন ভি এস। দলের অন্দরে তিনি বলে দিয়েছেন, ‘একটা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমার মুখ বন্ধ করা যাবে না! আমার বিরুদ্ধে চার্জশিট হলে আমি ইস্তফা দিয়েই লড়াই চালিয়ে যাব’! যার ফলে ‘বিড়ম্বনা’ কাটছে না কারাটদের! |
|
|
|
|
|