সুর নরম করেও সেনাবাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্বটা জিইয়েই রাখলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি। পঞ্জাব প্রদেশের বেহারি শহরে আজ তিনি সংবাদমাধ্যমকে স্পষ্ট জানালেন, প্রধানমন্ত্রী একমাত্র পার্লামেন্টকেই জবাবদিহি করতে বাধ্য।
একই সঙ্গে, গত কাল সেনাপ্রধান আশফাক পারভেজ কিয়ানি স্মারকলিপি-প্রসঙ্গে গিলানির বিবৃতির ব্যাখ্যা অথবা প্রত্যাহার করতে বলেছেন জানিয়ে পাক সেনার তরফে যে দাবি করা হয়েছিল, তা-ও খারিজ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাক সংবাদমাধ্যম এই খবর জানিয়ে বলেছে, প্রেসিডেন্টের দফতর থেকেও এই বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। আজ সাংবাদিকদের সামনে গিলানি বলেন, “আমি কোনও ব্যক্তিকে জবাব দিতে বাধ্য নই। একমাত্র পার্লামেন্টের কাছেই আমি জবাবদিহি করতে বাধ্য।” গিলানির মতে, পাঁচ বছরের সময়সীমা শেষ করা পার্লামেন্টের জন্যই জরুরি, প্রধানমন্ত্রী পদটির জন্য নয়।
গত কালই অবশ্য মন্ত্রিসভার প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে কিয়ানির সঙ্গে মুখোমুখি হন পাক প্রধানমন্ত্রী। দেশের সমস্যা মেটাতে সেনার পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেন তিনি। সেনাবাহিনীর প্রশংসাও শোনা গিয়েছিল তাঁর মুখে। কিন্তু স্মারকলিপি প্রসঙ্গে দ্বন্দ্ব যে সহজে মিটছে না, তা তাঁর আজকের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট। স্মারকলিপি বিতর্কের জেরে কিয়ানি-ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষাসচিব নইম খালিদ লোধিকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে সেনা-সরকারের বিরোধ নিয়েও আজ নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন গিলানি। তিনি বলেন, “সংবিধান বা দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত। প্রশাসনের সব বিভাগকেই নিয়ম মেনে চলতে হয়। কিন্তু প্রাক্তন প্রতিরক্ষাসচিব নিয়মমাফিক কাজ করেননি। তাই তাঁকে সরিয়ে দিয়েছি।”
সেনার সঙ্গে সরকারের দ্বন্দ্ব চললেও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মুশারফ অবশ্য সেনার পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তিনি ভারতীয় একটি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছেন, “আমি নিশ্চিত পাকিস্তানে এখন সামরিক অভ্যুত্থান হবে না। তবে যা-ই ঘটুক, আমি অবশ্যই সেনাবাহিনীকে সমর্থন করব। নিজে সেনার লোক হয়ে সেনার বিরুদ্ধে কিছু করার কথা আমি ভাবতেই পারি না।” একই সঙ্গে তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রধান ইমরান খানের সঙ্গে জোট করতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই বলেই জানিয়েছেন মুশারফ।
এই অবস্থায় পাক রাজনীতিতে আগামিকালটাই এখন সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কালই পাক প্রেসিডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধে বন্ধ রাখা দুর্নীতি মামলাগুলির ফের শুনানি শুরু হবে। স্মারকলিপি-কাণ্ডেও কাল শুনানি। যেখানে সাক্ষ্য দিতে পারেন পাক বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যবসায়ী মনসুর ইজাজ। একটি সূত্রের দাবি, কাল বিমানে রাওয়ালপিন্ডি সেনাছাউনিতে নামতে পারেন ইজাজ। তাঁর আইনজীবীও জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিশনের সামনে সাক্ষ্য দেবেন ইজাজ। সঙ্কট কাটাতে সরকার কোন পথে হাঁটে, সে দিকেই এখন নজর সবার। |