রবীন্দ্রসঙ্গীত ক্রমশ দুঃসহ হইয়া উঠিতেছে। রাজপথের মোড়ে মোড়ে দিন নাই, রাত্রি নাই, ক্রমাগত রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজিতেছে। যাত্রীরা না হয় ট্রাফিক সিগনাল সবুজ হইলেই অব্যাহতি পাইলেন, কিন্তু মাইক্রোফেনের আশেপাশে যাঁহাদের বাড়ি, তাঁহাদের অবস্থা করুণ। রাজভবনের ‘আবেদন’-এ তাহার চারি পাশে না হয় ভলিউম কিছু কমিল, কিন্তু কয় জন নাগরিক আর রাজভবনে থাকেন? করুণতর অবস্থা হইয়াছে হাসপাতালের আউটডোরে, গানের গুঁতোয় প্রয়োজনীয় কথা শোনা দায় হইয়াছে, রোগীরাও ব্যতিব্যস্ত। অথচ কাহারও কিছু করিবার নাই, উপরতলার নির্দেশ। উদ্দেশ্য অসাধু ছিল না, নিখরচায় ভাল গান শুনাইবার ব্রত পালন করিয়া শহরের শ্রুতিলোকে পরিবর্তন আনিতে চাহিয়াছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ভাবিয়া দেখেন নাই, যে গান ‘শুনিতেই হয়’, তাহা আর গান থাকে না, আওয়াজ হইয়া উঠে, সে আওয়াজ কানের ভিতর দিয়া মরমে প্রবেশ করে এবং মর্মমূল অবধি বিদ্ধ করিতে থাকে। অতি উৎকৃষ্ট সঙ্গীতও দিনের পর দিন জোর করিয়া শুনিতে হইলে তাহার সমস্ত রস নষ্ট হইয়া যায়। এই কারণেই জনসভায় মিছিলে গান অপেক্ষা স্লোগানই শ্রেয়, তাহার নষ্ট হইবার কিছু নাই। গানকে স্লোগান বানাইবেন না। দেড়শো বছর পার হইয়া গিয়াছে, এ বার ক্ষান্তি হউক। |