|
|
|
|
নবীনবরণে দুঃস্থদের পাশে পড়ুয়ারা |
অমিত কর মহাপাত্র • দাঁতন |
স্কুলে যাতায়াতের পথে হামেশাই চোখে পড়ে ছেঁড়া-ফাটা জামাকাপড় পরে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বয়স্ক, দুঃস্থ কিছু মানুষ। শীতের দিনে ওঁদের এমন অবর্ণনীয় অবস্থা দেখে খুব কষ্ট পেয়েছিল দাঁতন-১ ব্লকের ভাগবতচরণ হাইস্কুলের পড়ুয়া সবিতা প্রামাণিক, রঘু মান্ডিরা। হঠাৎ-ই তাদের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে, অন্য বন্ধুদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে দুঃস্থ মানুষগুলোকে কিছু গরম জামাকাপড় কিনে দিলে কেমন হয়!
যেমন ভাবা তেমন কাজ। বিষয়টি জানানো হল প্রধান শিক্ষক অরবিন্দ দাসকে। তিনি বলেন, “এ বার আমরা ঠিক করেছিলাম নবীনবরণ অনুষ্ঠানে কিছু দুঃস্থ মানুষকে শীতবস্ত্র দেব। ছাত্রছাত্রীরা দাবি জানায় তারাই চাঁদা তুলে রাস্তার ওই দুঃস্থদের শীতের জামাকাপড় কিনে দেবে। আপত্তি করিনি। গোটা ব্যাপারে ওদের পাশে থেকেছি।” দাঁতন ১-এর বিডিও জ্যোতি ঘোষ বলেন, “এটা একটা অত্যন্ত উদার মানবিক উদ্যোগ।” |
|
মেদিনীপুরে ছাত্র পরিষদের মিছিল |
ওডিশা ট্রাঙ্ক রোডের ধারে দাঁতনের এই স্কুলে মঙ্গলবার পালিত হয় পঞ্চম শ্রেণির নবীনবরণ। সেই উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তার আগে বছর ষাটেকের শ্রীমতি পাত্র, সত্তর বছরের বুধনি দাস, মানসিক ভারসাম্যহীন শেখ আলাউদ্দিন, সালমা মুর্মুদের স্কুলে নিয়ে এসে আদর-আপ্যায়ন করে ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের গরম জামাকাপড় পরিয়ে হাতে টিফিন প্যাকেট তুলে দেয় পঞ্চম শ্রেণির সমীরণ দাস, পরভিন খাতুনেরা। নতুন ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বসে পরে অনুষ্ঠানও দেখেন ওই দুঃস্থ মানুষজন। কচিকাঁচাদের কাছ থেকে এমন সম্মান পেয়ে কেঁদে ফেলেন শ্রীমতিদেবী। গরম জামা, চাদর পেয়ে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেন ছাত্রছাত্রীদের।
সারাটা বছর স্কুলের সামনের ফুটপাতে বা স্থানীয় কালীচণ্ডীর হাটের আটচালায় ওঁদের পড়ে থাকতে দেখে ছাত্রছাত্রীরা। দশম শ্রেণির সবিতা বলে, “স্কুলের কাছে রাস্তায় এমন বহু মানুষকে পড়ে থাকতে দেখি। মাস্টারমশাই বলেছিলেন, ওঁরা অনেকে ভবঘুরে। অনেকের পরিবার তাঁদের ঘরে রাখেনি। কেউ মানসিক ভারসাম্যহীন, কারও আবার আত্মীয়-পরিজন বলতে কিছু নেই। কোথাও কোনও আশ্রয় না পেয়ে রাস্তায় ওই ভাবে পড়ে থাকেন।” সহপাঠী রঘু মান্ডির কথায়, “অনেক সময়ে দেখি আধপচা ফল, রাস্তায় পড়ে থাকা খাবার কুড়িয়ে খাচ্ছেন ওঁরা। টিফিনের সময় অনেকে আবার দু’টো খেতে পাওয়ার আশায় স্কুল-গেটের সামনেও দাঁড়িয়ে থাকেন। অনেকে এসে মিড-ডে মিলের খাবার চান। আমরাও টিফিনের সময়ে ওঁদের খেতে দিই, পয়সা দিই।”
ছাত্রছাত্রীরা যে এই সব দুঃস্থ মানুষগুলোকে দেখলেই সাহায্য করতে এগিয়ে যায় তা খেয়াল করেছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। তাঁরাও ছাত্রছাত্রীদের এ ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক অশোককুমার গোরায় ছাত্রছাত্রীদের এই উদ্যোগে অভিভূত। তিনি বলেন, “বয়সে এদের থেকে বড় এমন অনেকের মাথায় এই চিন্তা আসে না। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে ওরা যা করেছে তা আমাদের কাছেও এক রকম অনুপ্রেরণা।” এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মন্মথনাথ গোরায়ের কথায়, “নিঃস্বার্থ ভাবে ওরা যে কাজ করেছে তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।” প্রধান শিক্ষক অরবিন্দবাবু জানান, ছাত্রছাত্রীরা যাতে সমাজের সবস্তরের মানুষের পাশে দাঁড়ায় সে জন্য আগামী দিনেও এই রকম উদ্যোগকে উৎসাহ দেওয়া হবে।
স্কুল-পড়ুয়ারা যে কাজটা করল, সেটা করতে পারত প্রশাসনও। ‘সহায়’ প্রকল্পে দুঃস্থদের খাদ্যের সংস্থানের কথাও শোনা যায়। কিন্তু শোনা আর সত্যি হওয়ার মধ্যে যে অনেক ফারাক। এই উদাসীন আবহে আরও বেশি করেই উদাহরণ হচ্ছে দাঁতনের স্কুলের পড়ুয়ারা।
|
|
|
|
|
|