ধান বিক্রি না হওয়ায় এ বার উত্তরবঙ্গেও ‘আত্মহত্যা’ কৃষকের
ধানের দাম না পেয়ে ঋণের জালে জড়িয়ে যাওয়া চাষির আত্মহত্যার অভিযোগ ফের উঠল।
গত তিন মাসে বর্ধমান, বাঁকুড়ার মতো দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় পরপর এমন কয়েকটি অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গে এই প্রথম।
শুক্রবার সকালে মালদহের হবিবপুরে আগ্রা হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামের কাছে গাছের ডাল থেকে মাফলারের ফাঁসে ঝুলন্ত অবস্থায় হরিদাস রত্ন (৫৫) নামে এক চাষির দেহ মেলে। এখনও মাঠে তাঁর ধান পড়ে রয়েছে। হবিবপুর থানার আইসি আত্রেয়ী সেন বলেন, “দেনা শোধ করতে না পেরে ওই কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন বলেই পরিবারের লোকেরা অভিযোগ করেছেন।” হবিবপুরের বিডিও অভিজিৎ ঘোষ বলেন, “আমার এলাকায় মাত্র চার দিন সরকারি মূল্যে ধান কেনা গিয়েছে। চাষিদের কাছে অন্তত এক লক্ষ মণ অবিক্রিত ধান পড়ে রয়েছে।”
হরিদাসবাবু কিন্তু ছোট চাষি নন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিজের এবং স্ত্রী-পুত্রদের নামে তাঁর ২২ বিঘা একফসলি জমি ছিল। কিন্তু তিনি শুধু ফসলের উপরে নির্ভরশীল হয়ে থাকতে চাননি। চাষবাসে ট্রাক্টরের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে দেখে বছর দুয়েক আগে তিনি দু’বিঘা জমি বিক্রি করে কিছু টাকা জোগাড় করেন। একটি বেসরকারি লগ্নি সংস্থার থেকে বাকি টাকা ঋণ নিয়ে ট্রাক্টর কিনেও ফেলেন। ভেবেছিলেন, সেটি ভাড়া কাটিয়ে আর ধান বিক্রি করে টাকা শোধ করবেন।
হবিবপুরে আত্মঘাতী চাষি হরিদাস রত্ন। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়
কিন্তু প্রত্যাশা মাফিক উপার্জন হয়নি। কয়েক কিস্তির টাকা বাকি পড়ায় লগ্নি সংস্থা ট্রাক্টরটি বাজেয়াপ্ত করে। মৃতের দাদা কালিদাস রত্ন জানান, ব্যাঙ্কে জমির দলিল জমা রেখে ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে লগ্নি সংস্থার পাওনা শোধ করেছিলেন হরিদাসবাবু। তাঁর ছোট ছেলে কলেজে পড়ে, মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সংসারে টানাটানি চলতে থাকায় বড় দুই ছেলে ভিন রাজ্যে দিনমজুরি করতে চলে যান।
এই পরিস্থিতিতেই হরিদাসবাবু পুরো ২০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। কালিদাসবাবু জানান, চাষের খরচ জোগাতে এলাকার কয়েক জনের থেকে তাঁকে টাকা ধার করতে হয়েছিল। প্রায় ১২০ কুইন্টাল ধান হয়। কিন্তু সরকারি সহায়ক মূল্য যেখানে কুইন্টালে ১০৮০ টাকা, ফড়েরা ৭৫০-৮০০ টাকার বেশি দিতে রাজি নয়। এ দিকে পাওনাদারেরা নিয়মিত তাগাদা দিচ্ছে। মৃতের ভগ্নীপতি জগদীশ বিশ্বাস বলেন, “জমির ধান বিক্রি করেই উনি ঋণ শোধ করবেন ভেবেছিলেন। দাম না পেয়ে ভেঙে পড়েন।”
স্থানীয় জাজৈল পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য সত্যভূষণ মল্লিক বলেন, “দু’দিন আগেই হরিদাসবাবু দুঃখ করছিলেন, ধানের দাম পাচ্ছি না। কী ভাবে ব্যাঙ্ক ও মহাজনের ঋণের টাকা শোধ করব বুঝতে পারছি না।” তাঁর দাবি, এলাকায় আরও অনেক চাষিই একই রকম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। জেলাশাসক শ্রীমতি অর্চনা বলেন, “কেন ওই চাষি আত্মহত্যা করলেন, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.