মাটির মানুষ
পায়ের তলায় সর্ষে হরিপদর
কে বলে বাঙালি রিটার্ন টিকিট, কনফার্মড হোটেল বুকিং, গরমজল আর সাদা টাওয়েল ছাড়া ভ্রমণে যায় না।? বাঙালি বেড়াতে ভালবাসে, বেড়ায়ও বেশি। কিন্তু ঝক্কি নেয় না ততটা। পাহাড়প্রেমীদের কথা অবশ্য আলাদা।
কিন্তু শান্তিপুরের হরিপদ চক্রবর্তী? ভ্রমণের সব হিসেব-নিকেশের বাইরে। বাসভাড়া মানে রাহা খরচ নেই। এই সত্তরেও একজোড়া হাওয়াই চটিই সম্বল। কারণ, হাঁটতে হাঁটতে অনেকগুলো গুপো পড়ে গেছে, তাই। লেখাপড়া জানা নেই। নো রুট ম্যাপ। নো গাইড। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছনো কোথাও। তার পর আবার হাঁটা। ছ’মাস, এক বছর পরে বাড়ি ফেরা।
“আমরা থাকতাম বর্ধমানের পূর্বস্থলী থানার সমুদ্রগড়ের বিদ্যানগরে। আট-দশ বছর বয়সে ঘুমন্ত অবস্থায় বাঘে তুলে নিয়ে যায়। চিৎকার চেঁচামেচি, আগুন জ্বালানোর পরে বাঘ ছেড়ে পালায়। মাথায় চোট। পায়ের মাংস উড়ে যায়। কপালের অনেকটা কেটে যায়। বোল (কথা) ভুলে যাই। কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে, মেডিক্যাল কলেজে তিন মাস ছিলাম। তার পর রাঁচি হাসপাতালে। একেবারে মরণ থেকে ফেরা।” জানালেন হরিপদবাবু। তাঁর এই পায়ে হাঁটার ব্রত চলেছে প্রায় পঞ্চাশ বছর। তার মানে, কৈশোরে ধরেছিল বাঘ। যৌবনে ধরেছে পথ। এখনও হরিপদ হেঁটে চলেছেন। এখন পর্যন্ত ভারতের ঊনত্রিশটি রাজ্যের নানা জায়গায় ঘোরা শেষ। বাকি আছে পাহাড়ি রাজ্য এবং জম্মু ও কাশ্মীর। আর সে জন্য ঘুঁটে জমিয়ে চলেছেন।
ঘুঁটে?
ঘুঁটে দিয়ে কী হবে?
শান্তিপুরের বসত ঘরে অনেক ঘুঁটে জমিয়ে তাই বিক্রি করে প্রাথমিক রসদ। সে আর কতটুকু? “আমার লাগেও তো সামান্য। মুড়ি-চিঁড়ে আর সামান্য গুড়।” তার পর? “পথে বেরিয়ে নানা গ্রামের মানুষ খেতে দেয়। মন্দির পেলে সেখানে প্রসাদ পাই। আর থানা-পুলিশ পেলে বেঁচে যাই।” নিজের ভ্রমণ বৃত্তান্ত জানালেন হরিপদ।
সে বার ওড়িশায় চোর ভেবে দু’চার ঘা খেয়ে হরিপদবাবু থানায় জমা পড়েন। থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করে রাতের আশ্রয় দেন পুলিশবাবুরা। কিছু টাকা চাঁদাও তুলে হাতে দেন। দেন একটা সার্টিফিকেটও। আবার পথ চলা। আবার নতুন রাজ্য, আবার নতুন থানা। মার খেয়ে হরিপদর অভিজ্ঞান, “পুলিশের একটা কাগজ থাকলে কোনও চিন্তা নেই। সে বার মার খেয়ে থানায় চালান হয়ে এই চরম সত্যি উপলব্ধি করেছেন হরিপদ।
আর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা? ফের শুরু করলেন প্রবীণ এই পর্যটক, “বেশি সাহায্য পেয়েছি ইউ পি-র মন্দিরে ও সাধারণ লোকের কাছে। তার পরে পঞ্জাব। এঁরা আবার ব্রাহ্মণ বলে দক্ষিণাও দিয়েছিলেন। রাজস্থানও ভাল। অসম-লামডিং-ডিমাপুর-কামরূপ-গোয়ালপাড়া-সুরমা-কদমবেড়িয়াতে ভাষার সমস্যা হয়নি। তবে আমার ব্যাগে তো পুলিশের কাগজ। সারা দেশের পুলিশের কাগজ।” আর সংসার জীবন? সেটিও ভারী মজার। হরিপদবাবুর কথায়, “বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগে বলে দিয়েছিলাম, ‘বিয়ে করতে পারি কিন্তু আমার দেশ ঘোরায় বাধা দিলে চলবে না’।” সেই প্রতিশ্রুতি চল্লিশ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। তিন কন্যা, নাতি-নাতনি ভরা সংসারেও এখনও স্বামীর বেরোনোর আগে সযত্নে তাঁর জিনিসপত্র গুছিয়ে দেন কল্পনাদেবী।

নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.