বিয়ে রুখে প্রতিভার কাছে বীথিকা
ম কুড়োনো সেই ঝড়ের দুপুর কিংবা স্কুল শেষে ডাঙাপাড়ার খোলা মাঠে গোল্লাছুটতার সদ্য কৈশোরের উপরে আপাদমস্তক দাঁড়িই পড়ে যেতে বসেছিল।
“ধিঙ্গি মেয়ে, বিয়ের আগে কেউ অমন মাঠে ঘাটে খেলে বেড়ায়!” বাড়ির লোকের দিনভর পাহারায় নবম শ্রেণির মেয়েটা হাঁফিয়ে উঠেছিল। তার যে বড়ই পড়াশোনার সাধ। ভুগোল পড়তে বসলেই নদী-পাহাড়-মোহনা তাকে ডাকে, আর কালবৈশাখী উঠলেই চুপি চুপি ইয়াসিনের আম বাগানে কাঁচা আম কুড়োনোর মজাটাই বা বাদ দেয় কী করে! সে সবের কদর করবে বাড়ির লোক?
বাবার দোকানে কাজে ব্যস্ত বীথিকা। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
‘বিয়ের-বেড়ি’ পরিয়ে বহরমপুরের শ্রীশচন্দ্র বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির বীথিকা দাসের সেই কৈশোরটাই থমকে দিতে চেয়েছিলেন বাবা-মা। কান্নাকাটি, দিন দুই ‘উপোস’ দিয়েও নাছোড় বাড়ির লোককে বোঝাতে পারেনি মেয়েটি, এটা তার বিয়ের বয়স নয়। আর তাই বাড়ি থেকে পালিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করে এক দিন সটান সে ফোন করে বসে স্থানীয় ‘চাইল্ড হেল্প লাইন’-এ। অতঃপর সেই সমাজসেবী সংগঠনের কর্মীরা এসেই শেষ পর্যন্ত আটকে ছিলেন বীথিকার বিয়ে। বছর চোদ্দোর মেয়েটির এমন ‘সচেতন’ মনের পরিচয়ে মুগ্ধ হয়ে রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল ডেকে পাঠিয়েছেন তাকে। জেলার আর পাঁচ জন এমনই ‘ধন্যি’ মেয়ের সঙ্গে সোমবার সে পাড়ি দিচ্ছে দিল্লি।
বহরমপুরে পাড়ায় ত্রিপল খাটানো বাবার তেলেভাজার দোকানে বসে বীথিকা পাল্টা প্রশ্ন করে বসে, “এখনই কেন বিয়ে করব বলুন তো? আমার বাবার আয় বলতে সাকুল্যে এই তেলেভাজার দোকান।
পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। বাবার আর্থিক অসঙ্গতি দূর করতে চাই। তারপরে বিয়ে।”
তবে, এমন সহজ সত্যিটা পাড়া-প্রতিবেশী অবশ্য তত সহজে মানতে চাননি। বীথিকা বলে, “আমি বাবা-মায়ের চাপে তাই বিয়েতে রাজি হইনি। পাড়ায় অবশ্য তা নিয়ে ছি-ছি পড়ে গিয়েছিল। এমনকী আত্মীয়স্বজনেরাও গালমন্দ করতে ছাড়েনি। কিন্তু অল্পবয়সে বিয়ে না করার ব্যাপারে আমি অনড় ছিলাম। বিয়ে ভেঙে দিয়ে আমার তাই একটুও অনুতাপ নেই।” নবম শ্রেণির মেয়েটি জানায়, পাত্রপক্ষ বিয়ের পরেও তাকে স্কুলে পড়ানোর ‘আশ্বাস’ দিয়েছিল। কিন্তু তার সন্দেহ যায়নি, “সে কথা পরে না রাখলে!” তার বাবা ভানুবাবু বলেন, “একটা বড় ভুল করতে যাচ্ছিলাম ঠিকই। তবে এখন আমার কোনও পড়শি নাবালিকা মেয়ের সম্বন্ধ করলে আমি তাদের বুঝিয়ে বলি এত তাড়াতাড়ির কী আছে! ওর মতো এখন অনেকেই বেঁকে বসছে। এলাকার মানসিকতাটাই পাল্টে দিয়েছে ও।” আর ওই সমাজসেবী সংগঠনের পক্ষে জয়ন্ত চৌধুরী বলেন, “আমাদের সংগঠনের সাফল্যের দরজা খুলে দিয়েছে ওই একরত্তি মেয়েটি। কী সাহস। ভেবে ভাল লাগছে যে, গাঁ-গঞ্জে আমাদের প্রচারে সাড়া দিচ্ছে নাবালিকারা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.