অসিযুদ্ধ
আমাদের ব্যাটিং ‘মিথ’ ভাঙার সময় এসেছে
সাতসকালে টিভি খুলে সেই একই ছবি। সেই বক্সিং ডে টেস্ট থেকে চলে আসছে। সিম, সুইং আর গতির সামনে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটিং লাইন আপের ধসে পড়া। অথচ এটাই ছিল সেই ঘুরে দাঁড়ানোর মুহূর্ত। সিরিজে পরপর দুটো টেস্ট হেরে গিয়েছে টিম, যার কোনওটাই পাঁচ দিন গড়ায়নি, বিদেশে টানা ছ’টা টেস্ট হেরেছে। এর চেয়ে খারাপ আর কী হতে পারে? দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া একটা টিম হয় এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াবে, নয় আরও তলিয়ে যাবে। টিভিতে দ্বিতীয়টাই ঘটতে দেখলাম। চার বছর আগে প্রবল বিতর্কের পরেও পারথ টেস্টে দুর্দান্ত ভাবে উঠে দাঁড়িয়েছিল ভারত। ভেবেছিলাম, এ বারও সেটা হতে পারে। কোথায় কী, তার বদলে শুধুই আত্মসমর্পণ। একের পর এক উইকেট দিয়ে যাওয়া। সঙ্গে এ দিন বাড়তি হেনস্থাদিনের বাকি সময়টায় বিপক্ষ ওপেনারের হাতে ভারতীয় বোলিংয়ের বেধড়ক ঠ্যাঙানি খাওয়া!
বিপর্যয়: সিরিজে চতুর্থ বার বোল্ড হওয়ার পর দ্রাবিড়।
পারথের উইকেট নিয়ে বড্ড লেখালেখি হচ্ছিল। কিউরেটর রীতিমতো হুমকি দিয়ে রেখেছিল, পিচ নাকি ভয়ঙ্কর দ্রুত হতে যাচ্ছে। সিম মুভমেন্ট শুরুতে নিশ্চয়ই ছিল, কিন্তু বিরাট কোহলি আর লক্ষ্মণ যখন খেলছিল, তখন তো পিচকে ভয়ঙ্কর মনে হয়নি। ওই একটা সময় মনে হচ্ছিল, জুটিটা দাঁড়িয়ে যেতে পারে। স্কোরবোর্ড খুলে দেখছি, শেষ ছ’টা উইকেট পড়েছে ৩০ রানে! এই হিলফেনহস, সিডল বা হ্যারিস বা স্টার্ক, কেউ তো ডেনিস লিলি নয়। ম্যাকগ্রা নয়। ভারতের মাঠে এই সিডলরাই আমাদের নামীদামি ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে মার খাবে। তা হলে বিদেশে এদের দেখলে কেন মনে হবে বল তো নয়, যেন গ্রেনেড ছুড়ছে! তফাতটা কোথায় হচ্ছে? প্রথম পাঁচজন ব্যাটগম্ভীর (৪৬), সহবাগ (৯৪), রাহুল (১৬২), সচিন (১৮৬) এবং লক্ষ্মণ (১৩২) মিলে খেলেছে ৬২০ টেস্ট। মোট রান ৪৫ হাজারের বেশি। এর মধ্যে টেস্ট ইতিহাসে প্রথম দুই রান সংগ্রাহক দু’জন। এদের কেউ কি কখনও সিমিং উইকেটে খেলেনি? খেলেছে এবং সফলও হয়েছে। আসলে এই সফরে ইংল্যান্ড সফরের ভূত এখনও পিছু ছাড়েনি আমাদের ব্যাটিংকে। আরও যেটা হচ্ছে, অধিকাংশই ক্রিকেটারই ক্রিকেটজীবনে অর্জিত সুনাম রক্ষা করার জন্য খেলছে। সেটা একটা টিমের পক্ষে আদৌ সুখকর নয়। কারণ সেরা ক্রিকেট তখনই খেলা সম্ভব, যখন কোনও ক্রিকেটার কোনও রকম অতীত মাথায় না রেখে খেলে।
কেউ কেউ বলতে পারেন ডানকান ফ্লেচার কী করছে? গ্যারি কার্স্টেন যাওয়ার পর থেকে বিদেশে টেস্টে ক্রমাগত হেরে চলেছি আমরা। আমি কিন্তু ফ্লেচারকে দোষ দেব না। সচিন, রাহুল, লক্ষ্মণ বা সহবাগকে এখন আর টেকনিক নিয়ে কী বলবে ফ্লেচার? নাকি বলা সম্ভব? আসলে খামতিটা মানসিক। পাল্টা মার দেওয়ার বিশ্বাসটা যদি না থাকে, এমনিতেই অর্ধেক ম্যাচ হারা হয়ে যায়। এই ভারতকে দেখে মনেই হচ্ছে না, রান করার বা কিছু করে দেখানোর কোনও তাগিদ আছে বলে। ফাইটিং স্পিরিটটাই নেই। এই সফরের পরে কিন্তু ভারতীয় ব্যাটিং ‘মিথ’ ভাঙার দরকার হয়ে পড়েছে। কাজটা নির্বাচকদের, কিন্তু খোলা হাওয়ার দরকার এসে পড়েছে এ বার।
বিপ্লব: টেস্টে চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরির পর ওয়ার্নার।
ভারতীয় ইনিংস শেষ হওয়ার পরে যা দেখতে হল, সেটাও কম ভয়ঙ্কর নয়। ডেভিড ওয়ার্নার মারকুটে ব্যাট, আইপিএলে বেশ কয়েকটা বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছে। তা বলে টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরি করে যাবে? বোলিং নিয়ে বাঁ-হাতি ছেলেটা ছিনিমিনি খেলল বললে প্রায় কিছুই বলা হয় না। জাহির থেকে বিনয় কুমার, কে মার খায়নি? জীবনের প্রথম টেস্টেই নিশ্চয়ই বিনয় বুঝে গেল, টেস্ট ক্রিকেট ঠিক কী জিনিস! দুটো বলের তফাতে ওকে পরপর দুটো ছয় মেরে ৬৯ বলে রাজকীয় সেঞ্চুরি ওয়ার্নারের। আজকের ক্রিকেটে ওপেনারদের এই বিধ্বংসী ব্যাটিংটা শুধু সহবাগ আর ক্রিস গেইলের পক্ষেই করা সম্ভব বলে ধরা হত। ওয়ার্নারকেও পারথের ইনিংসের পরে এই তালিকায় রাখতে হচ্ছেই।
আমাদের বোলিং নিয়েই বা কী লিখব? উমেশ যাদব বা বিনয় কুমারকে ছেড়ে দিলাম, জাহির বা ইশান্ত তো কম অভিজ্ঞ নয়। যে কাজ হিলফেনহসরা হেলায় করতে পারছে, সেই কাজটা ভারতীয় বোলাররা কেন মাথা খুঁড়েও পারছে না? তিনটে বল ভাল পড়ল তো একটা হাফভলি। বোলিং কোচের কাজটা তা হলে ঠিক কী? সব মিলিয়ে প্রথম দিনই যা দাঁড়িয়েছে, এই টেস্ট বাঁচলে সেটাই হবে চরম আশ্চর্যের!

পারথ টেস্টের স্কোর

ভারত
প্রথম ইনিংস
গম্ভীর ক হাডিন বো হিলফেনহস ৩১
সহবাগ ক পন্টিং বো হিলফেনহস ০
দ্রাবিড় বো সিডল ৯
সচিন এলবিডব্লিউ হ্যারিস ১৫
লক্ষ্মণ ক ক্লার্ক বো সিডল ৩১
কোহলি ক ওয়ার্নার বো সিডল ৪৪
ধোনি ক পন্টিং বো হিলফেনহস ১২
বিনয় এলবিডব্লিউ স্টার্ক ৫
জাহির ক ক্লার্ক বো হিলফেনহস ২
ইশান্ত ক হাডিন বো স্টার্ক ৩
উমেশ ন.আ. ৪
অতিরিক্ত
মোট ৬০.২ ওভারে ১৬১।
পতন: ৪, ৩২, ৫৯, ৬৩, ১৩১, ১৩৮, ১৫২, ১৫২, ১৫৭।
বোলিং: হ্যারিস ১৮-৬-৩৩-১, হিলফেনহস ১৮-৫-৪৩-৪,
স্টার্ক ১২.২-৩-৩৯-২, সিডল ১২-৩-৪২-৩।

অস্ট্রেলিয়া
প্রথম ইনিংস
কাওয়ান ব্যাটিং ৪০
ওয়ার্নার ব্যাটিং ১০৪
অতিরিক্ত ৫,
মোট ২৩ ওভারে ১৪৯-০।
বোলিং: জাহির ৭-১-৪৪-০, উমেশ ৬-১-৪২-০, বিনয় ৪-০-৩১-০,
ইশান্ত ৫-০-২৮-০, সহবাগ ১-০-১-০।

ছবি:এএফপি




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.