চন্দ্রকোনায় উদাসীন পুরসভা-প্রশাসন
সংস্কারের অভাবে ধ্বংসপ্রায় শতাধিক মন্দির
‘বাহান্ন বাজার তিপান্ন গলি, তবে জানবি চন্দ্রকোনা এলি’এই একটি প্রবাদবাক্যই চন্দ্রকোনা পুরসভাকে ফুটিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট। পশ্চিম মেদিনীপুরের অতি প্রাচীন এই শহরের প্রায় প্রতি গলিতেই রয়েছে মন্দির। কিন্তু সংস্কারের অভাবে ৪০০-৫০০ বছরের পুরোনো সেই সব মন্দির ধ্বংসপ্রায়। পলেস্তারা খসে পড়ছে। হারিয়ে যাচ্ছে পুরানো স্থাপত্য। অবহেলায়, বঞ্চনায় রাজা চন্দ্রকেতুর মন্দিরময় চন্দ্রকোনা আজ বিবর্ণ-মলিন। শহরবাসীর বক্তব্য, ভোট এলেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা মন্দিরগুলো সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ভোট পেরোতেই সে সব কথা আর মনে থাকে না নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের। অথচ, এই সব মন্দিরগুলি সংস্কার করে সাজিয়ে তুললে চন্দ্রকোনা গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনস্থল হিসাবে মানচিত্রে জায়গা করে নিতে পারে। বদলে যেতে পারে এলাকার আর্থ-সামাজিক চিত্র।
নিজস্ব চিত্র।
ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রোড রাস্তার ধারেই চন্দ্রকোনা শহর। এখানে রাজা চন্দ্রকেতু থেকে ভান বংশের একাধিক রাজা রাজত্ব করেছেন। শহরে ঘুরলে তার নিদশর্নও মেলে। মন্দির ছাড়াও এখানে রয়েছে বহু পুরনো বাড়ি। শহরের মল্লেশ্বরপুর, অযোধ্য, মিত্রসেনপুর, নয়াগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় চাঁদনি, রত্ন মন্দির, জোড়বাংলা, রথ মন্দির, দোচালা, চারচালা, আটচালা-সহ ছোট-বড় নানা মন্দির রয়েছে। অভিযোগ, পুরসভা ও প্রশাসনিক ঔদাসীন্যে শহরের অধিকাংশ মন্দিরই ভগ্নপ্রায়। সংস্কারের অভাবে বেশ কিছু মন্দির পুরোপুরি ভেঙেও গিয়েছে। কিছু মন্দিরের আবার দেখভাল করেন এলাকার বাসিন্দারা। সেই তালিকায় রামগঞ্জের বুড়োশিব মন্দির, গোপসাই এলাকার রাজার মায়ের কালী, দক্ষিণবাজারের শিবমন্দির, রঘুনাথপুর-সহ গোটা দশেক মন্দির রয়েছে। রামানুজ সম্প্রদায়ের মন্দিরগুলো এখনও দেখভাল হয়। তবে, অধিকাংশই মন্দিরই গাছ-গাছালিতে ঢেকেছে। ভগ্নপ্রায় সেই মন্দির চত্বরে রাতের বেলা অসামাজিক কাজকর্ম চলে। দেখার কেউ নেই। অভিযোগ, পুর-প্রশাসন সব জেনেও উদাসীন।
মন্দিরময় চন্দ্রকোনার ঐতিহ্য নিয়ে লেখালেখি কম হয়নি। বহু গবেষক এই সব মন্দিরের স্থাপত্য-পুরাতত্ত্ব নিয়ে বই লিখেছেন। এমনই একজন চন্দ্রকোনা থানার জাড়ার বাসিন্দা রোহিণীনাথ মঙ্গল বলেন, “এই মন্দিরগুলোর স্থাপত্যশৈলী যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ও মনোগ্রাহী। সরকারের উচিত এই সব মন্দির সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা করা।”
কিন্তু স্থানীয় পুর-প্রশাসন কী বলছে?
চন্দ্রকোনা পুরসভার তৃণমূলের চেয়ারম্যান রাম কামিল্যা বলেন, “মন্দিরগুলো সংস্কার হলে শহরের চরিত্র যে পাল্টে যাবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু পুরসভার টাকা নেই। ক্ষমতাতেও এসেছি সবে মাত্র। দেখছি কী ভাবে সংস্কার করে মন্দিরগুলো রক্ষা করা যায়।”
আর পুরসভার সিপিএমের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক সাহার বক্তব্য, “টাকার অভাবেই সংস্কার সম্ভব হয়নি। তবে আমরা বেশ কয়েক বছর ধরে মন্দিরগুলো যাতে হেরিটেজ বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া যায়, তার চেষ্টা করছিলাম। বর্তমান পুরবোর্ডকেও বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ জানাব।” ঘাটালের মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারীর জবাব, “শুনেছি চন্দ্রকোনায় বহু পুরনো মন্দির রয়েছে। সেগুলি সংস্কারের জন্য দ্রুত পুরসভার সঙ্গে আলোচনায় বসব।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.