সম্পাদকীয় ১...
দিবাস্বপ্ন
চিনের সহিত প্রতিযোগিতা এখন ভারতের জাতীয় ধর্মে পরিণত হইয়াছে। তাহার কারণ আছে গোটা দুনিয়ায় এখন ‘চিন-ভারত’ বিনা গীত নাই। একই বন্ধনীতে উচ্চারিত হইতে হইতে ভারতের সাধারণ মানুষের, এবং নেতাদেরও, বিশ্বাস জন্মাইয়াছে ভারত আর চিন বুঝি সত্যই সমগোত্রীয়। একবিংশ শতকের প্রথম দশকে বুঝি ‘হিন্দি-চিনি ভাই ভাই’-এর পুনর্জন্ম হইল। রাস্তার বক্তৃতায় বা টেলিভিশনের আলোচনাচক্রে এই বিশ্বাস তেমন ক্ষতিকর নহে, কিন্তু বিশ্বাসটিকে পরিসংখ্যানের কষ্টিপাথরে যাচাই করিতে চাহিলেই মর্মবেদনা অনিবার্য। কারণ, চিন ভারতের তুলনায় শত যোজন আগাইয়া রহিয়াছে। একটিমাত্র পরিসংখ্যানই যথেষ্ট আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের হিসাবে চিনের জি ডি পি প্রায় সাত লক্ষ কোটি ডলার; আর ভারতের, দুই লক্ষ কোটি ডলারেরও কম। প্রায় চতুর্গুণ শক্তিশালী একটি দেশের সহিত তুলনা চলে না। কিন্তু, অভ্যাস মরিতে মরিতেও মরে না। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী দুঃখপ্রকাশ করিলেন, বিজ্ঞানের গবেষণায় ভারত চিনের তুলনায় বহু পিছাইয়া আছে। ভারত সত্যই পিছাইয়া আছে, বিজ্ঞান-গবেষণার যে কোনও মাপকাঠিতে।
কিন্তু, কেন? তাহার প্রধানতম কারণ, ভারতে বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগের অভাব। যে দেশের সহিত তুলনা, সেই চিন তাহার জি ডি পি-র দুই শতাংশ বিজ্ঞান গবেষণার খাতে ব্যয় করে, তাহা বাড়াইয়া তিন শতাংশ করিবার পথে। আর, ভারত বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে ব্যয় করে তাহার জি ডি পি-র ০.৯ শতাংশ। ২০১৭ সালের মধ্যে যাহাতে এই অঙ্কটিকে বাড়াইয়া দুই শতাংশের কাছাকাছি করা যায়, সরকার নাকি তাহার চেষ্টা করিতেছে। কিন্তু, শতাংশের হিসাবে দুই দেশের তুলনামূলক পরিস্থিতিটি সম্যক বোঝা যাইবে না, তাহার কারণ দুই দেশের জাতীয় আয় সমান নহে। চিনে বিজ্ঞান গবেষণার খাতে বাৎসরিক ব্যয় ১৭,৪০০ কোটি ডলার। আর, ভারতে ১৬৫০ কোটি ডলার। ভারতের তুলনায় চিন বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে ১০.৫৫ গুণ বেশি ব্যয় করে। ফলাফলে কোন দেশটি আগাইয়া থাকিবে, তাহা বুঝিতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নাই। প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করিয়াছেন, ভারতে বিজ্ঞান গবেষণায় বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ অতি কম। প্রধানমন্ত্রী প্রথিতযশা অর্থনীতিজ্ঞ। কাজেই, তিনি নিশ্চয়ই জানেন, বিজ্ঞান গবেষণায় ‘পজিটিভ এক্সটার্নালিটি’ বিপুল। অর্থাৎ, এই খাতে অর্থ বিনিয়োগ করা হইলে তাহার সুফল শুধু বিনিয়োগকারীর নিকট সীমাবদ্ধ থাকে না, তাহা বৃহত্তর ক্ষেত্রে ছড়াইয়া পড়ে। এই কারণেই বিজ্ঞান গবেষণায় যত টাকা বিনিয়োগ করা প্রয়োজন, বেসরকারি ক্ষেত্র তাহার নামমাত্র করিয়া থাকে। এইখানেই সরকারের দায়িত্ব। বিজ্ঞান গবেষণায় বিপুল সরকারি বিনিয়োগ না আসিলে তাহা কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছাইতে পারে না।
চিনে গবেষণা ক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ নেহাত কম নহে। বিদেশি বিনিয়োগও প্রচুর। কেন প্রশ্ন করিতেই পারেন, চিনে হইলে ভারতে হইবে না কেন? তাহার কারণ, চিনের সরকার যে বার্তা দিতে সক্ষম হইয়াছে, ভারতীয় সরকার তাহাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। চিনে সরকার বুঝাইয়াছে, বিজ্ঞান গবেষণা দেশের কর্তব্যতালিকায় অগ্রগণ্য। ভারতীয় নেতারা মাঝেমধ্যে বিজ্ঞান গবেষণার কথা বলিয়া হাহুতাশ করেন বটে, কিন্তু ওই পর্যন্তই। বেসরকারি বিনিয়োগ টানিতে হইলে সরকারকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করিতে হইবে। গবেষণায় বিনিয়োগ করিলে বেসরকারি সংস্থার জন্য বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা রাখিতে হইবে, পরিভাষায় যাহাকে ‘ইনসেনটিভ’ বলা হয়। ভারতীয় নেতারাও নিশ্চয় বোঝেন, বিজ্ঞান গবেষণায় দ্রুত অগ্রগতি না হইলে চিনের সহিত প্রতিযোগিতার আকাঙ্ক্ষাটি নেহাত দিবাস্বপ্নই থাকিয়া যাইবে। সেই পরিণতি যাহাতে না হয়, তাহার জন্য এখনই সচেষ্ট হউন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.