কাজের দিনে নির্ধারিত মহাকরণের অর্থ দফতরের বিনোদন ক্লাবের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা স্থগিত হয়ে গেল অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের আপত্তিতে। সেটি হওয়ার কথা ছিল আগামী সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে। আগামী সোমবারে।
বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন কাজের দিনে করাটাই এত দিন ছিল মহাকরণের বিভিন্ন দফতরের বিনোদন ক্লাবগুলোর দস্তুর। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বা দর্শক, যে কোনও ভূমিকা নিতে হলে কোনও কর্মীকে ছুটি নিতে হত না। কারণ, সেটি ‘অলিখিত’ ছুটির দিন হিসেবেই ধরে নেওয়া হতো। অর্থ দফতরও ব্যতিক্রম ছিল না। কাজের দিনে দফতর ফাঁকা করে বসত সরকারি কর্মীদের খেলাধুলোর আসর।
কিন্তু সরকার পরিবর্তনের জেরে এ বার সেই চেনা ছবিটাই আচমকা বদলে গেল!
এ বারও ময়দানের বিজি প্রেস মাঠে আগামী সোমবার সকাল দশটা থেকে অর্থ-কর্মীদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার যাবতীয় আয়োজন সেরে ফেলেছিল বিনোদন ক্লাব। পুরস্কার কেনার পালাও শেষ। যে হেতু দফতরের কর্মীরা কাজের দিনে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সামিল হবেন, সে জন্য অন্যান্য বছরের মতো প্রথামাফিক অর্থমন্ত্রীর সম্মতির জন্য ফাইলও পাঠানো হয়ে গিয়েছিল। যার বয়ান পড়ে রীতিমতো অবাক হয়ে যান নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী, তথা বণিকসভা ফিকি’র প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল অমিত মিত্র। “কাজের দিনে বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান কেন?” অর্থ-সচিব এইচ কে দ্বিবেদীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন মন্ত্রী।
অর্থ-সচিবও নতুন। মাত্র দু’দিন আগে কার্যভার নিয়েছেন। তিনিও এ ব্যাপারে বিশেষ কিছু বলতে পারেননি। প্রস্তাব ওঠে, বিনোদন ক্লাবের আর্জি নাকচ করে ফাইল পত্রপাঠ ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হোক।
অর্থমন্ত্রী কিন্তু সেই পথে হাঁটেননি। ক্লাবের কর্মকর্তাদের তিনি নিজের ঘরে ডেকে পাঠান। শুক্রবার তাঁরা দেখা করতে এলে মন্ত্রী ওঁদের বলেন, দফতরের কর্মীরা তাঁর নিজের পরিবারের সদস্যের মতো। তিনি জবরদস্তি কিছু চাপিয়ে দিতে চান না। বরং কর্মীরা নিজেরাই আলোচনা করে ঠিক করুন, অর্থবর্ষের শেষের দিকে বাজেট-প্রস্তুতির সময়ে একটা কাজের দিন নষ্ট করাটা উচিত হবে কি না। অমিতবাবু বিকল্প প্রস্তাবও দেন। কর্মকর্তাদের তিনি বলেন, আগামী শনিবার, ২১ জানুয়ারি সরকারি ছুটির দিনে ক্রীড়ানুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে।
আর শুধু তা-ই নয়, সে ক্ষেত্রে তাঁর ও দফতরের তরফে কর্মীদের ‘পূর্ণ সহযোগিতা’র আশ্বাসও দেন মন্ত্রী। জানান, নতুন দিন নির্ধারিত হলে মাঠ পেতে যাতে অসুবিধে না-হয়, সে জন্য তিনি চেষ্টা করবেন। তিনি নিজেও মাঠে যাবেন। মন্ত্রী চান, কর্মীরা যেন সপরিবার মাঠে এসে দিনটি উপভোগ করেন। সূচিতে ‘টাগ অফ ওয়ার’ ছিল একমাত্র দলগত প্রতিযোগিতা। অমিতবাবুর পরামর্শ, আরও বেশি দলগত খেলার আয়োজন হোক। এতে দফতরের কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় ও বোঝাপড়া বাড়বে বলে তাঁর বিশ্বাস। মন্ত্রীর পরামর্শমতো সোমবারের প্রতিযোগিতা আগামী শনিবার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিনোদন ক্লাব। কর্মকর্তারা তা অর্থমন্ত্রীকে এ দিন লিখিত ভাবে জানিয়েও দিয়েছেন। অর্থ দফতরের বিনোদন ক্লাবের সম্পাদিকা কল্যাণী ঘোষ বলেন, “আমাদের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সোমবার হচ্ছে না।” অমিতবাবুর মন্তব্য, “আমি আমার দফতরের কর্মীদের জন্য গর্বিত বোধ করছি।” |