কঠিন পরীক্ষা সোমবার
‘গণতন্ত্র বাঁচাতে’ আস্থাভোট চাইলেন গিলানি
সেনাবাহিনী এবং আদালতের রায়ে কোণঠাসা তাঁর সরকার। এই অবস্থায় গদি বাঁচাতে নজিরবিহীন ভাবে ‘গণতন্ত্রের পক্ষে’ আস্থাভোট চাইলেন পাক প্রধানমন্ত্রীর ইউসুফ রাজা গিলানি।
শুক্রবার পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে ‘একনায়কতন্ত্রের হাত থেকে গণতন্ত্রকে বাঁচাতে’ সরকার ও বিরোধী নির্বিশেষে পার্লামেন্টের সব সদস্যের ভোট চাইলেন তিনি। প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগে দেশ জোড়া সমালোচনার মুখে দাঁড়িয়ে তাঁর দাবি, প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির নেতৃত্বাধীন সরকার হয়তো কোনও ভুল করতে পারে। কিন্তু তার জন্য দেশের গণতন্ত্রকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাতে দেওয়া যাবে না। যাবতীয় জল্পনা উড়িয়ে এ দিনই দুবাই থেকে দেশে ফিরেছেন জারদারি। সেই ‘স্বস্তির’ আবহেই গিলানির ঘোষণা, “নিজের জন্য বা জারদারির জন্য কারও কাছে সমর্থন চাইছি না। দুর্নীতির পক্ষে দাঁড়াতেও বলছি না। ভোট চাইছি দেশের গণতন্ত্রের জন্য। আপনারাই স্থির করুন, গণতন্ত্র থাকবে না একনায়কতন্ত্র।” বিশ্লেষকদের মতে, শীর্ষ আদালত ও সেনাবাহিনীর যৌথ ‘আক্রমণের’ মুখে পড়েই অস্তিত্ব রক্ষার এই অভিনব পন্থা নিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী যা কার্যত আস্থা ভোটেরই নামান্তর। সরকারের হয়ে জোটসঙ্গী আওয়ামি ন্যাশনাল পার্টির প্রধান আসফানদিয়ার ওয়ালি খানের পেশ করা এই প্রস্তাবে পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে সোমবার।
আবার গণতন্ত্রের পক্ষে ভোটের জন্য এমনই একটি দিন বাছা হয়েছে, যে দিন সুপ্রিম কোর্টেও প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়ে যেতে পারে। প্রেসিডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি সংক্রান্ত বেশ কিছু পুরনো মামলা রয়েছে যা ২০০৭ সালে অর্ডিন্যান্স করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি ওই মামলাগুলি ফের চালু করতে বলে গিলানি সরকারকে সুপ্রিম কোর্ট যে চরম সময়সীমা দিয়েছিল, তা শেষ হচ্ছে সোমবার। এখনও পর্যন্ত গিলানি সরকার জারদারির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করার ইঙ্গিত দেয়নি। সেই প্রসঙ্গেই তাঁকে ‘অসৎ’ বলেছিল শীর্ষ আদালত। এবং তিনি ওই মামলা ফের শুরু না করলে কোনও চরম ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলেও শীর্ষ আদালত ইঙ্গিত দিয়েছিল। মেমোগেট-কাণ্ড নিয়েও একটি শুনানি রয়েছে ওই দিনই। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট কী পদক্ষেপ করে, সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। এ দিন পার্লামেন্টে অবশ্য গিলানি বলেন, “আমি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আদালত আমার উপরে আস্থা রাখুক।”
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও চাইছে, ‘পরিবর্তন’ এলে আদালতের হাত ধরেই আসুক। পাক সংবিধানের ১৯০ ধারায় বলা রয়েছে, শীর্ষ আদালত মনে করলে তার কোনও নির্দেশ কার্যকর করাতে সেনাবাহিনীর সাহায্য নিতে পারে। সম্ভবত সেই কারণেই পাক সেনা অফিসারেরা জানাচ্ছেন, শীর্ষ আদালতের যে কোনও নির্দেশ কার্যকর করতে তাঁরা প্রস্তুত। তবে বর্তমান রাজনৈতিক সমীকরণে পার্লামেন্টের ভোটের ফল গিলানির পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। বিশেষত তিনি যখন গণতন্ত্রের পক্ষে ভোট চেয়েছেন, তখন বিরোধীদের পক্ষেও তার সরাসরি বিরোধিতা করা কঠিন। বিশ্লেষকদের মতে, এই সুযোগে গিলানি যেমন আস্থার সিলমোহর লাগিয়ে তাঁর নড়বড়ে সরকারের ‘নৈতিক’ অবস্থান দৃঢ় করতে চাইছেন, তেমনই পাকিস্তানে আরও একটা সামরিক অভ্যুত্থান রুখতে বিরোধীদের পাশে পাওয়ার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি তিনি মনে করছেন, আস্থা ভোটের ফল সরকারের পক্ষে গেলে আন্তর্জাতিক মহলের কাছেও দেশের রাজনৈতিক মনোভাব নিয়ে সদর্থক বার্তা যাবে, যা চাপে রাখবে পাক সেনাকে। সংঘাতের মধ্যেও আগামিকাল ক্যাবিনেট ডিফেন্স কমিটির বৈঠক ডেকেছেন গিলানি। সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেন পাক সেনাপ্রধান আশফাক পারভেজ কিয়ানিও। এ দিকে জানা যাচ্ছে, ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করে ব্রিটেনে ফোন করেন আতঙ্কিত গিলানি। যদিও পরে প্রধানমন্ত্রী ফোনের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “দেশের মানুষই আমার শক্তি। বিদেশের সাহায্য চাইতে যাব কেন?”
এ দিন পার্লামেন্টেও সেনাবাহিনীর নাম না করলেও ‘গণতন্ত্র বাঁচাতে’ সব জনপ্রতিনিধির সাহায্য চান তিনি। বলেন, “সরকারের মেয়াদ কমাতে চাইলে বিরোধীরা সংবিধান সংশোধনের দাবি জানান। প্রস্তাবে সবার সমর্থন থাকলে তা পাশও হবে। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিজেরা নিন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.