রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘ভাষা সন্ত্রাসের’ অভিযোগ তুললেন রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সি। বৃহস্পতিবার রায়গঞ্জে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “সরকারের মন্ত্রীরা কিছুদিন ধরে রাজনৈতিক স্বার্থে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কুৎসিত ভাষা প্রয়োগ করে আক্রমণ করছেন। অবিলম্বে ভাষার অপপ্রয়োগ বন্ধ হওয়া দরকার। বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষরা নিগৃহীত ও হেনস্থা হচ্ছেন। অথচ শিক্ষামন্ত্রী বলছেন অধ্যক্ষরা নাকি নাটক করছেন। শিক্ষামন্ত্রী তো নিজেই নাট্যকার। তাঁর সবকিছু তদন্ত করে দেখে মন্তব্য করা উচিত।’’ পাশাপাশি, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে কটাক্ষ করে দীপাদেবীর মন্তব্য, “শিক্ষামন্ত্রী নাটকের জগতের মানুষ। কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রকে তিনি যেন নাটক বা সিনেমার মঞ্চ না মনে করেন। আসলে শিক্ষাক্ষেত্রে দিনে দিনে দলতন্ত্র কায়েম করছে রাজ্য সরকার। রাজ্য আজ শিক্ষায় ব্রাত্য হয়ে পড়েছে।” |
রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের ঘটনা প্রসঙ্গে দীপাদেবীর বক্তব্য, “তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কর্মী হওয়ায় অভিযুক্তরা কলেজে ভাঙচুর ও অধ্যক্ষকে মারধর করে পার পেয়ে গেলেন? এই ঘটনায় রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সরকারকে জবাব দিতে হবে কেনও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হল না? এটা দলতন্ত্রের নমুনা নয় কি? তৃণমূল নেতাদের একাংশ ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করছেন, তাঁরা কলেজে হামলার ঘটনায় জড়িত ছিলেন।” সরকার ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কংগ্রেসের জন্য দরজা খোলা। দীপা বলেন, “তৃণমূল ব্ল্যকমেলের রাজনীতি শুরু করেছে। তৃণমূল জানে কংগ্রেস সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসলেও তারা একক ভাবে রাজ্য সরকার পরিচালনা করতে পারবে। মুল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রী ইউপিএ ছাড়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন। তৃণমূল জানে তারা ইউপিএ থেকে সমর্থন তুলে নিলে কেন্দ্রে কংগ্রেসকে অন্য দলের সহযোগিতা নিয়ে সরকার পরিচালনা করতে হবে। কংগ্রেসকে চাপে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। তৃণমূলকেই আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজ্যে তারা একাই সরকার পরিচালনা করবে কি না।” সম্প্রতি ক্রীড়ামন্ত্রী তথা তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক মদন মিত্র সাহস থাকলে দীপাদেবী ‘সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিক’ বলেছিলেন। তা দিলে মদনবাবু রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতে দেখিয়ে দেবেন বলে মন্তব্য করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গে দীপাদেবী বলেন, “আমি ইস্তফা দেব কি দেব না তা তৃণমূলের এক জন মন্ত্রী ঠিক করে দেবে নাকি? মদনবাবু ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনেই জবাব পেয়ে যাবেন।” সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক নির্বেদ রায়। তিনি বলেন, “সংবাদমাধ্যম রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের ঘটনা প্রকাশ্যে নিয়ে আসার পর বিপাকে পড়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন সংবাদমাধ্যম নাকি টাকা খেয়েছে। সংবাদমাধ্যম যখন টাকা নিচ্ছিলেন, তখন কী তৃণমূলের মন্ত্রীরা চেয়ার টেবিলের নিচে বসে ছিলেন? মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের ঘটনা নাকি বাচ্চা ছেলেরা ঘটিয়ে ফেলেছে। বাবা মায়ের কাছে সন্তানরা সব সময়ই বাচ্চা থাকে। কলেজ কাণ্ডে অভিযুক্তরা যদি বাচ্চা হয় তবে মুখ্যমন্ত্রীর বয়স কী ৮০ বছর! আসলে মুখ্যমন্ত্রী-সহ তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা অভিযুক্তদের আড়াল করতে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অপরাধ জগতের ভাষা ব্যবহার করছেন। তাই তাঁদের রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়ার অনুরোধ করছি। পাশাপাশি, শিক্ষাক্ষেত্রে দুষ্কৃতীদের তান্ডব ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আর্জি জানাচ্ছি।” রায়গঞ্জে প্রস্তাবিক এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল নিয়েও রাজ্য সরকারকে দুষেছেন দীপাদেবী। তাঁর অভিযোগ, রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য রাজ্য সরকার রাজনৈতিক স্বার্থে জমি অধিগ্রহণ করছে না। |