স্ত্রী-রোগ ও প্রসূতি বিভাগে ল্যাপারোস্কোপির যন্ত্র এসে পড়ে রয়েছে তিন বছর। কিন্তু মোড়ক খুলে বসানো হয়নি। কেন, তার সদুত্তর কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। অথচ, এই জন্যই ওই পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অসংখ্য রোগী।
উপরের ছবিটা খাস কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের। রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি সরকারি হাসপাতাল হিসেবে রাজ্য সরকার যাকে বারবার তুলে ধরে, সেখানেই ল্যাপারোস্কোপির মতো বহু প্রচলিত অস্ত্রোপচার হবে না কেন? বিভাগের প্রধান চিকিৎসক তরুণ ঘোষ বলেন, “ওই যন্ত্রের জন্য আলাদা অপারেশন থিয়েটার তৈরি হয়েছে। কিন্তু বহু বলেও ‘ওটি লাইট’ পাওয়া যায়নি। হয়নি টেবিলের ব্যবস্থাও।” বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন? তরুণবাবু বলেন, “বর্তমান স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাকে জানানো হয়নি। তবে প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা জানতেন। জানানো হয়েছে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষকেও। কিন্তু সুরাহা হয়নি। জানি না, টাকার অভাব না অন্য কিছু।” বর্তমান স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আমি বিষয়টি জানতাম না। এই প্রথম শুনলাম। শুনে আশ্চর্য হচ্ছি। এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের কাছে খবর নেব।”
যে অস্ত্রোপচার ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে করে দু’তিন দিনের মধ্যেই রোগিণীকে ছুটি দিয়ে দেওয়া সম্ভব, সেটিই এসএসকেএমে করা হচ্ছে পেট কেটে। অথবা, ল্যাপারোস্কোপি হয় না বলে রোগিণীকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেমন, জরায়ুর সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন কৃষ্ণনগরের সীমা সেন। চিকিৎসক তাঁকে বলেন, অস্ত্রোপচার করতে হবে। তবে কাটাছেঁড়ার দরকার নেই, ল্যাপারোস্কোপি করানোই ভাল। কিন্তু এসএসকেএমে তাঁকে বলা হয়, সেখানে ল্যাপারোস্কোপিক অস্ত্রোপচার হয় না। ‘পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম’ নিয়ে ডায়মন্ড হারবার থেকে এসেছিলেন ঋতুপর্ণা রায়। কম বয়সী মেয়েটির কাটাছেঁড়া চায়নি তাঁর পরিবার। কিন্তু রাজ্যের এক নম্বর সরকারি হাসপাতালে গিয়ে তাঁদের হতাশ হয়েই ফিরতে হয়েছে। প্রতিদিনই এঁদের মতো আরও অনেককে ফিরতে হচ্ছে এসএসকেএম থেকে।
চিকিৎসকদের মতে, কাটাছেঁড়া এড়াতেই ল্যাপারোস্কোপির কদর বাড়ছে। ঝুঁকি কম, খরচও কম। প্রতিদিন রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে রোগীরা আসছেন স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগে। কিন্তু যন্ত্রের অভাবে তাঁদের অস্ত্রোপচার হচ্ছে না।
হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, “এখন অবিবাহিত বহু তরুণী ওভারিয়ান সিস্ট নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন। তাঁদের ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপিক অস্ত্রোপচারই সব দিক থেকে যুক্তিযুক্ত।” আর এক চিকিৎসকের বক্তব্য, “জরায়ুতে টিউমার থাকলে সব সময়ে পেট কাটার দরকার হয় না। এ সব ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপ ও হিস্টেরোস্কোপের সাহায্যে জরায়ু থেকে তা বার করে আনা যায়। এ সব অস্ত্রোপচারে সাফল্যের হারও অনেক বেশি।”
বিভাগের চিকিৎসকেরা স্বীকার করেছেন, যে অস্ত্রোপচার ওই সরকারি হাসপাতালে পাঁচ-সাত হাজার টাকায় করানো যেত, সেটাই বাইরের বেসরকারি হাসপাতালে করাতে ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। গরিব রোগীদের পক্ষে যা খরচ করা প্রায় অসম্ভব। কথায় বলে, সরকারি কাজে নাকি আঠারো মাসে বছর। এ ক্ষেত্রে একটি যন্ত্র কেনার পরেও তিন বছর কেটে গেল, তবুও সেটি এখনও বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে স্ত্রী-রোগ ও প্রসূতি বিভাগের তিনতলার মূল অপারেশন থিয়েটারে। |