এক হাতে ওষুধপত্র-জামাকাপড়ের ব্যাগ, অন্য হাতে শিশুকে আগলে রেখেছেন মা। কাঁপতে কাঁপতে নিরাপদ স্থানে বেরিয়ে আসছেন। কী হয়েছে, জিজ্ঞেস করলে শুধু বলছেন, ‘আগুন লেগেছে।’
তাঁর মতো আরও অনেকে শিশুদের চাদর চাপা দিয়ে হুড়োহুড়ি করে বেরিয়ে আসছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে এই দৃশ্য দেখা গেল বীরভূমে সিউড়ি সদর হাসপাতালে। কলকাতার আমরি হাসপাতালের দৃশ্য এখনও কেউ ভুলতে পারেননি বলেই রোগীরা আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করেন। ঘড়িতে তখন আড়াইটে। হঠাৎ শিশু বিভাগের কাছে পাওয়ার সাপ্লাই বোর্ডে জোরে আওয়াজ হয়। সঙ্গে সঙ্গে ধোঁয়া বেরতে থাকে। ‘আগুন’ লাগার খবরে হাসপাতালের সামনের
মাঠে জড়ো হন সদ্য প্রসূতি ও মায়েরা। দমকল এসে আধ ঘণ্টার মধ্যে ধোঁয়া আয়ত্তে এনে ফেলে। হাসপাতাল সুপার মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “হাসপাতালে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ভাল রয়েছে। শর্ট সার্কিট হলে কী করার আছে?” |
হাসপাতালের দোতলায় এক দিকে শিশু বিভাগ, অন্য পাশে এসএনসিইউ। আর শিশু বিভাগের উল্টো দিকে আছে ‘পাওয়ার সাপ্লাই বোর্ড’, যেখানে এ দিন শর্ট সার্কিট হয়েছে। আতঙ্কে মায়েরা চিৎকার করতে করতে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে আসছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ শিশুদের কোলে নিয়ে গাছতলায় দাঁড়িয়ে আছেন, কেউ আবার শতরঞ্চি পেতে শুয়ে পড়েছেন। সিউড়ির কালীপুর গ্রামের বধূ রাধারানি মণ্ডল, মালপাড়ার বধূ অনিতা মাহারাদের কথায়, “প্রথমে প্রচণ্ড জোরে আওয়াজ শুনি। পরে জানতে পারি আগুন লেগেছে। তখন আমাদের চোখে আমরি-র ছবি ভেসে ওঠে। সাতপাঁচ না-ভেবে সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে আসি।” দমকলকর্মীরা তখন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আগুন আয়ত্তে আনার চেষ্টা করছেন। কিছুক্ষণের জন্য হাসপাতাল অন্ধকার থাকে। আধ ঘণ্টা পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় রোগীরা ওয়ার্ডে ফেরেন। সিউড়ি দমকলকেন্দ্রের ওসি জয়দেব ঘোষাল বলেন, “ওখানে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রয়েছে। কর্মীরা গিয়ে জানতে পারেন শর্ট সার্কিট থেকে এই বিপত্তি। গ্যাস স্প্রে করে ধোঁয়া বন্ধ করা হয়েছে।” |