আমরি-কর্তাদের কেন ছেড়ে দেওয়া হবে বলে ফের প্রকাশ্যে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আমরি-তে অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে মামলা চলছে, বিচারবিভাগীয় কমিশনও গঠন করা হয়েছে। আমরি-র পরিচালকমণ্ডলীর ধৃত সাত জন সদস্যের কেউ এখনও জামিন পাননি। কিন্তু যাঁরা ওই হাসপাতালের দৈনন্দিন কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত নন, তাঁদেরও একই বন্ধনীতে ‘অপরাধী’ হিসাবে দেখানো হলে শিল্প ও বণিক মহলের প্রতি ‘ভুল বার্তা’ যেতে পারে বলে ইতিমধ্যে সরব হয়েছে ফিকি। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য আগেই বণিকসভার ওই বক্তব্য খারিজ করে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামে জঙ্গলমহল উৎসবের মঞ্চ থেকে খানিকটা আচমকাই আমরি-র প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, “কেন আমরির লোকেদের ছেড়ে দিতে হবে? কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আমিও নই। আইনের চোখে ওরা অপরাধী!” সাত আমরি-কর্তার মধ্যে ‘অসুস্থ’ রাধেশ্যাম অগ্রবালের জামিনের আবেদন গৃহীত হয়েছে। সেই আবেদনের শুনানির ঠিক আগেই মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্য যথেষ্ট ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেছেন, “দেশের আইন সব ক্ষেত্রেই সমান। আমি খুন করলে আমিই আইনের চোখে অপরাধী।” তাঁর ঝাঁঝালো প্রশ্ন, “আমরি-তে এত লোক মারা গিয়েছে। বদনাম যত ইচ্ছে করো! আমার কিছু যায় আসে না। আমরি-র লোকের সঙ্গে আমার ঝগড়া না ভাব? তোমার টাকা আছে বলে তোমাকে খুনি বলা যাবে না?” তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধ-শতবর্ষ উপলক্ষে এ দিনই এক বিবৃতিতে ‘রাজস্থান-বেঙ্গল মৈত্রী পরিষদ’ আর্জি জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ও রাজস্থানের মানুষের মধ্যে ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থানে’র সম্পর্কে যেন কোনও প্রভাব না-পড়ে। বিবৃতিতে সরাসরি আমরি-র ঘটনার কোনও উল্লেখ নেই। কিন্তু আমরি-র ঘটনায় একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীর ব্যক্তিদেরই শুধু গ্রেফতার করা হয়েছে বলে যে হেতু বিতর্ক আছে, তাই পরিষদের ওই আর্জি ‘ভিন্ন মাত্রা’ পেয়েছে। তদানীন্তন ক্ষেত্রির মহারাজা নরেন্দ্রনাথ দত্তকে ‘বিবেকানন্দ’ নামে ভূষিত করেছিলেন বলে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ এবং রাজস্থানের মধ্যে আদানপ্রদান বরাবরই বজায় থেকেছে। রাজস্থানিরা তাঁদের রাজ্যের বাইরে কলকাতাকেই রাজধানী মনে করে এসেছেন।
ইতিহাসের সূত্র ধরেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষ করে কলকাতায় এই সৌহার্দ্যমূলক সহাবস্থান গত ৫০ বছরে খুব স্পষ্ট করে দেখা গিয়েছে। সাম্প্রতিক কালের কিছু অসতর্ক ঘটনা, সংবাদমাধ্যমে যা প্রকাশিত, এই ধারণার জন্ম দিয়েছে যে, এই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে যেন চিড় দেখা দিয়েছে। ওই ধরনের ত্রুটি অবিলম্বে সংশোধনের জন্য যাবতীয় প্রচেষ্টা চালানো দরকার বলে পরিষদ মনে করে’। সম্পর্ক ‘মেরামতি’র জন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হবে বলে আশা করার পাশাপাশিই পরিষদের বক্তব্য, বাংলা ও রাজস্থানের ‘মানুষের সঙ্গে মানুষের ঐতিহাসিক একাত্মতা’ ভবিষ্যতে আরও দৃঢ় হবে।‘রাজস্থান-বেঙ্গল মৈত্রী পরিষদে’র এই ‘বার্তা’ মুখ্যমন্ত্রী কী ভাবে নেন, তা-ই এখন দেখার! |